শ্রীজিৎ চট্টরাজ : কলকাতা, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২।বাঙালির খাদ্য প্রীতি তাঁদের জন্মসিদ্ধ অধিকার। তা নাহলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরের সঙ্গে বাণীর মেলবন্ধনের উপমা দিতে বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী কেন বলবেন, রবিঠাকুরের সুর ও বাণীর মিশেলের সম্পর্ক মাছ আর মাছের ঝোলের মত। আবার রবীন্দ্রনাথের খাদ্য প্রীতির কথা বললে মহাভারত হয়ে যাবে। দ্বারিক ঘোষের দোকানের সন্দেশ খেয়ে মন্তব্য করেছিলেন, বাংলায় দুজন রসস্রষ্টা। এক রবীন্দ্রনাথ, দুই, দ্বারিক। রবি কবির অসম্ভব লুচি প্রীতি দেখে গান্ধীজি বলেছিলেন, এতো বিষ খাও কেন? রবীন্দ্রনাথ জবাব দেন হাসতে হাসতে,আমি এই বিষ় খেয়েই তো দীর্ঘজীবী হবো।
সেই কবে কালিদাস লিখেছেন, আশ্বাস পিশাচো হপি ভোজনেন। অর্থাৎ পিশাচকেও ভোজনে সন্তুষ্ট করে বাগে আনা যায়। ব্যাকরণে ভোজনের আর এক অর্থ সুখানুভূতি। বাংলায় এক প্রবাদও আছে । স্বামীকে বশে রাখতে তাঁর পেটপুজোয় লোভনীয় পদ জোগান দিলেই হবে। খাদ্য চয়নে বাঙালি উদারও বটে। বাঙালি রসনা তৃপ্তির প্রশ্নে আন্তর্জাতিক। ঝালে ঝোলে অম্বলে বাঙালি যেমন অনুরক্ত, তেমন ব্রিটিশ সংস্কৃতির চপ কাটলেটেও সমান অনুরক্ত। দক্ষিণী ধোসা থেকে পাহাড়ি মোমোও। সুদূর চিন, জাপান, তুরস্ক, ইতালির পাস্তা পারলে সকালের নাস্তাতেও রাখতে রাজি। সুতরাং বাঙালির রসনা ভজনায় এলাকায় এলাকায় খাদ্যমেলা হবে তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে উত্তর কোলকাতার পাইকপাড়া অঞ্চলের নর্দান পার্ক অধুনা গণেশ ঘোষ উদ্যানে পাঁচদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হচ্ছে খাদ্য মেলা বাহারে আহারে। মূল উদ্যোক্তা স্থানীয় পুরপিতা গৌতম হালদার। প্রায় ৫০টি খ্যাত অখ্যাত ফুড স্টল নিয়ে গড়ে ওঠা মেলার শুভ উদ্বোধনে হাজির ছিলেন, কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, স্থানীয় পুর প্রশাসকদের কয়েকজন। তালিকায় ছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিনেত্রী পায়েল দেব প্রমুখ। অতীন ঘোষ বলেন, দেশে ক্যান্সারের মত রোগের বাড়বৃদ্ধির অন্যতম কারণ অস্বাস্থ্যকর খাদ্য। খাদ্য পরিবেশকদের যেমন ভেজালহীন খাদ্য দেওয়া দায়িত্ব, তেমন দেখেশুনে খাওয়াটাও মানুষের দায়িত্ব। এব্যাপারে অভিযোগ পেলে কলকাতা পুরসভা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে তিনি জানান। মেলার প্রথম দিনে বহু মানুষের কৌতুহল ছিল বিভিন্ন স্টল ঘুরে রসনার বাসনা পূরণে।
Be First to Comment