মানুষের অন্তরের শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালোবাসা কোনো পণ্য দ্রব্য নয়……।

অনুরাগ মিত্র : ৬, ডিসেম্বর, ২০২০।

দাদা, আপনিই আমার কাছে শেষ কথা। আপনি মহানায়ক হয়েই জন্মেছিলেন। আপনাকে কষ্ট করে, জোর করে মহানায়ক সাজতে হয়নি। বাংলা চলচ্চিত্রের এভারগ্রিন আইকন এক ও একমাত্র আপনি। ১৯৮০ সালের আজকের দিনটায় আমার বয়স ছিল মাত্র চার। সেদিন তো বুঝতেই পারিনি যে কি হয়ে গেল। শুধু দেখেছিলাম যে মা, কাকিমা,জেঠিমারা কেউ আঁচলে মুখ চাপছে, কেউ চোখের জল মুছছে। বাবা জ্যাঠারা খুব গম্ভীর। সেসময়ের একান্নবর্তী পরিবার। কাজ করতে এসে লতা মাসির সেকি কান্না। এটুকুই শুধু সেদিন বুঝতে পারছিলাম যে একটা বিরাট ঘটনা ঘটে গেছে। আমার ঠিক ওপরের জেঠতুতো দাদা, আমার থেকে চার বছরের বড়ো হওয়ার সুবাদে আমার খানিকটা অভিভাবকসম ছিল। সেই প্রথম বললো – উত্তমকুমার মারা গেছে। টিভিতে দেখাতো তো !!

সেই কথাটা ওভাবেই আজও কানে বাজে দাদা। পৃথিবীর ইতিহাসে একই সাথে সুঅভিনেতা এবং স্টার কম জনই আছেন। আপনি তাদের মধ্যেই একজন। আমার কাছে আপনিই মার্লোন ব্রেন্ড, ডাস্টিন হফমান, রিচার্ড বার্টন। আপনিই আমার চোখে স্যার হপকিন্স। আপনার কোনো রিপ্লেসমেন্ট হয়নি, হয়না আর হবেও না। আপনি নিজেই ইনস্টিটিউশন, আপনিই ওয়ার্কশপ। আজ এতদিন পরেও দাদা, সূর্য যখন পশ্চিমে আবির ছড়ায়, নিভৃতে দাঁড়িয়ে কিশোর প্রেমিক তার আদরের প্রেমিকার কাছে আব্দার করে -‘এই প্লিজ আমাকে একবার উত্তমকুমার বলো’। এখনো সপ্তপদী আসে, হারানো সুর বাজে, হাত বাড়ালেই বন্ধু পাওয়া যায়, গলি থেকে রাজপথে ছুটে যাওয়া হয়, এখনো অপেক্ষা সব্যসাচীর, এখনো অপেক্ষা বিভাসের, বিকেলে ভোরের ফুল আজো ফোটে।

ভালো থাকুন দাদা। আপনিই গুরু। গুরুকে দেখে সিটি দেওয়া, আবার সেই গুরুকেই প্রণাম করা – এই বিরাট রেঞ্জটা আপনি একাই কভার করে দিয়েছেন। ভালো থাকুন। খুব ভালো থাকুন। আমি জানি আপনি আছেন। শুধু থাকার জায়গাটা পাল্টে ফেলেছেন। আর একবার ফিরবেন দাদা ??? প্লিজ, যদি সম্ভব হয়!!!……

(লেখক সঙ্গীত জগতের সঙ্গে বিশেষ ভাবে যুক্ত)