জন্মদিনে স্মরণঃ ত রু ণ ম জু ম দা র
বাবলু ভট্টাচার্য : দেবকী বসু, প্রমথেশ বড়ুয়া, কানন দেবী যুগ থেকে এযুগের শিল্পীদের সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি। উত্তমকুমার যেমন তাঁর পরিচালনায় কাজ করেছেন, তেমন উত্তমকুমারের নাতিও তাঁর ছবিতে প্রথম হিরোর রোল পেয়েছে। এই এতগুলো প্রজন্মের মধ্যে যিনি সেতুবন্ধন করেছেন, তিনি কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা তরুণ মজুমদার। ইন্ডাস্ট্রির তনুদা।
তরুণ মজুমদারের লক্ষ্যই ছিল, গল্পটা যদি চলচ্চিত্রে ভাল করে বলা যায়, তাহলে সে ছবি সব শ্রেণির দর্শকের মন জয় করতে বাধ্য। তাঁর একের পর এক ছবিতে তিনি তা প্রমাণ করেছেন।
উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেন অভিনীত ‘চাওয়া পাওয়া’ (১৯৫৯) তরুণ মজুমদারের প্রথম পরিচালিত ছবি। ১৯৯০ সালে এসে তৈরি করলেন ‘আপন আমার আপন’।
অর্থাৎ তাঁর ফিল্ম কেরিয়ারের গ্রাফটা প্রায় এক। নিজের গণ্ডির বাইরে কখনোই বেরোলেন না। বাঙালির খুব চেনা রং, গন্ধ, পরিবেশ, মানুষদের সঙ্গে নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারলেন প্রায় পাঁচ যুগ। এবং বাংলার সিনে-দর্শক কখনোই তাঁকে বর্জন করতে পারলেন না।
তাঁর পরিচালিত প্রথম জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ছবি ‘কাঁচের স্বর্গ’ (১৯৬২)। এরপরে ‘পলাতক’, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘সংসার সীমান্তে’, ‘গণদেবতা’— এই সব ছবি সমালোচক মহলে বহুল প্রশংসিত হয়।
তাঁর পরিচালিত ‘বালিকা বধূ’, ‘কুহেলী’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’, ‘পরশমণি’ ও ‘আপন আমার আপন’ বিপুল বাণিজ্যিক সাফল্য লাভ করে।
বাংলা সাহিত্যকে বুকে করে বেঁচে ছিলেন তিনি। বিভূতিভূষণ-তারাশঙ্কর-বিমল কর-শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের উপন্যাস নিয়ে ছবি বানিয়েছেন। আর রবীন্দ্রনাথ ছিল তাঁর অন্তরে।
তাঁর ছবি দেখেই প্রথম জানা বাংলার বুকে ছড়ানো কত রঙের গ্রাম- মন্দিরা, পলাশবুনি, কীর্ণাহার, বাতাসপুর, খণ্ডগ্রাম, বাতিকর, খয়রাশোল…।
অযথা খ্যাতি বা প্রচারের আলোয় ছোটেননি কোনদিন। বড় বড় ফিল্মি পার্টি চিরকাল এড়িয়ে চলেছেন। তাঁর ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের বগুড়া শহরে। দেশভাগের পর চলে যান ওপার বাংলার উত্তরবঙ্গে। ভুটান বর্ডারের কাছাকাছি প্রায়।
নিজের মত খুব সাধারণ ছবিই বানাতে চেয়েছিলেন তিনি। চেয়েছিলেন বাংলার ঘরে ঢুকে সেই ঘরের মানুষদের কথাই বলবেন। তিনি পেরেছেন। এখনও পর্যন্ত তাঁর শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ভালোবাসার বাড়ি’ (২০১৮)।
তাঁর সংগ্রহে রয়েছে চারটি জাতীয় পুরস্কার, সাতটি বি.এফ.জে.এ. সম্মান, পাঁচটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ও একটি আনন্দলোক পুরস্কার। ১৯৯০ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হয়।
২০২২ সালের ৪ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তরুণ মজুমদার ১৯৩১ সালের আজকের দিনে (৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশের বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment