Press "Enter" to skip to content

উইলিয়াম ব্লেক শুধু লেখাটা আর পড়াটা শিখতে যতদিন লাগে, ততদিনই স্কুলে গিয়েছিলেন। দশ বছর বয়সে তিনি স্কুল ছেড়ে দেন…….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ উইলিয়াম ব্লেক

বাবলু ভট্টাচার্য : ইংরেজি সাহিত্যে রোমান্টিক যুগের অন্যতম সেরা একজন কবি উইলিয়াম ব্লেক।

একইসাথে তিনি ছিলেন কবি ও চিত্রকর এবং খোদাইশিল্পী। জীবদ্দশায় অখ্যাত থাকা এই কবি বর্তমানে ইংরেজি সাহিত্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী কবিদের একজন। তার চিত্রকলাগুলোও রোমান্টিক যুগের সেরা চিত্রকলাসমূহের প্রতিনিধিত্ব করে।

তার বাবা জেমস ব্লেক ছিলেন কাপড়ের ব্যবসায়ী। আর তার মা ক্যাথেরিন রাইট আর্মিটেজ ব্লেক তাদের সাত ভাইবোনের দেখাশোনা করতেন। ব্লেক দম্পতির সাত সন্তানের মধ্যে দু’জন শৈশবেই মারা যায়।

উইলিয়াম ব্লেক শুধু লেখাটা আর পড়াটা শিখতে যতদিন লাগে, ততদিনই স্কুলে গিয়েছিলেন। দশ বছর বয়সে তিনি স্কুল ছেড়ে দেন। বাকি শিক্ষালাভ বাড়িতে মায়ের পায়ের কাছে বসেই। এ বিষয়ে পরবর্তী জীবনে তিনি লেখেন– “ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আমার স্কুলে যেতে হয়নি, বোকাদের ধরন-ধারণ অনুসরণ করতে বাধ্য হতে।”

সুযোগ পেলেই তিনি লন্ডনের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। গভীর আগ্রহে চারপাশ অবলোকন করতেন। বাবার কিনে দেওয়া বইগুলো থেকে প্রাচীন গ্রিক চিত্রকর্মগুলো খোদাই করার চেষ্টা করতেন। এসব চিত্রকর্ম নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়েই রাফায়েল, মাইকেলেঞ্জেলো, হিমস্কার্ক, ডিউরার প্রমুখের ক্ল্যাসিকাল কর্ম দ্বারা তিনি প্রভাবিত হন। এসময় কবিতার প্রতিও ধীরে ধীরে তার আকর্ষণ জেগে ওঠে।

তার প্রথম দিককার কাজগুলোতে বেন জনসন, এডমান্ড স্পেন্সার ও সাম (Psalm) এর জ্ঞান পরিলক্ষিত হয়। ‘সাম’ হলো ইহুদী ও খ্রিষ্টধর্মে প্রচলিত ধর্মীয় শ্লোক সংবলিত ভজনসঙ্গীত। বাইবেলের সুগভীর প্রভাব ছিল ব্লেকের উপর আজীবন। তার কর্মে, চিন্তায় ও কল্পনায় এর সম্যক প্রতিফলন বিদ্যমান।

ব্লেকের শৈশব শান্ত ও সুখদায়ক ছিল, কিন্তু আট বছর বয়স থেকে তিনি বিভিন্ন কাল্পনিক দৃশ্য দেখতে শুরু করেন। যেমন, গাছের ডালে দেবদূত দেখা বা ডানা গজানো তারকা। এসবই আসলে তার অতি কল্পনাপ্রবণ মনের চাঞ্চল্য ছিল। এই দৃশ্যপট কল্পনাক্ষম মন তার কাব্যচর্চার ক্ষেত্রে তাকে দিয়েছিল আলাদা সুবিধা। ব্লেকের কবিতাগুলো পড়তে গেলে পাঠকের মনে হবে, তারা কোনো খোদাই করা দৃশ্য দেখছেন।

১৭৮২ সালে ব্লেক স্থানীয় এক মুদি দোকানীর মেয়ে ক্যাথেরিন বাউচারের সাথে পরিচিত হন। এই পরিচয় পরবর্তীতে প্রণয় ও পরিণয়ে গড়ায়। এই দম্পতির কোনো সন্তান না থাকায় ব্লেক বেশিরভাগ সময় ক্যাথেরিনকে লিখতে, পড়তে ও আঁকতে শেখাতেন। ১৭৮৩ সালে ব্লেক তার প্রথম কবিতার সংকলন ‘পোয়েটিকাল স্কেচেস’ প্রকাশ করেন। কাব্যে খুব একটা কাটতি না হলেও খোদাইকারী হিসেবে ব্লেকের খ্যাতির কারণে তাদের সংসার চলে যাচ্ছিল।

১৭৯৫ সালে ব্লেক ‘লার্জ কালার প্রিন্টস’ নামে একটি সিরিজ শুরু করেন। বাইবেল, মিল্টন ও শেক্সপিয়ার থেকে বিষয়বস্তু নিয়ে তিনি এই সিরিজ চালিয়ে যান। সে বছরই ব্লেক টমাস বাটস নামে একজন পৃষ্ঠপোষক পেয়ে যান। অর্থাৎ বাটসের অর্থায়নে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ব্লেক বেশ কয়েক বছর যাবৎ তার জন্য ছবি আঁকেন। এখানে ব্লেক আর্থিক স্বচ্ছলতার সাথে সাথে শিল্পে অবারিত স্বাধীনতাও ভোগ করেন।

উইলিয়াম ব্লেকের নাম তার সমসাময়িক শেলী, কলরিজ, কীটস, ওয়ার্ডসওয়ার্থ প্রমুখের সাথে সমান্তরালে উচ্চারিত হয়নি। খুব স্বল্পসংখ্যক মানুষই সে সময় তার কদর উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।

রোমান্টিক যুগের অন্যতম ধারক ও বাহক হিসেবে ব্লেক ব্যক্তিগত কল্পনাশক্তির উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি সমসাময়িক বোধিতত্ত্ব ও নগরায়ণের সংস্কৃতিকে পরিহার করেছিলেন। তার আধ্যাত্মিক ও অলীক দর্শনসমূহ ছিল তার সৃজনশীলতার মূল উৎস। তার নিজ কল্পনার একটা আলাদা আবহ আর আলাদা জগৎ ছিল।

১৮২৭ সালের ১২ আগস্ট ব্লেক পরলোকগমন করেন। মৃত্যুবরণের দিনও নিরন্তর কাজ করে গেছেন। কাজ করতে করতে এক সময় তিনি ক্ষান্ত দেন, তারপর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেন, “থাকো কেট, এভাবেই থাকো। আমি তোমার ছবি আঁকবো। কারণ তুমিও আমার জীবনে দেবদূতের কম ছিলে না।”

উইলিয়াম ব্লেক ১৭৫৭ সালের আজকের দিনে (২৮ নভেম্বর) লন্ডনের সোহোতে গোল্ডেন স্কয়ারের ২৮ নং ব্রড স্ট্রিটে (বর্তমান ব্রডউইক স্ট্রিট) জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.