ডাঃ দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায় : কলকাতা, ৩১ মার্চ, ২০২৫।
সবাইকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা বা ঈদ মোবারক ৷
এক মাস সিয়াম সাধনার বিশেষ দুদিন ‘শব এ কদর ‘ বা ‘লায়লাতুল কদর ‘ , রমজানের শেষ শুক্রবার ‘জামাতুল বিদার পর ইসলামী বর্ষপঞ্জীর দশম বা শাওয়াল মাসের এক ফালি চাঁদ দেখা গেল অর্থাৎ আসলো “ঈদ ঈল ফিতর ” ৷ ধ্বনি উঠছে সর্বত্র “উঠলো বাঁকা চাঁদ , মেলে দিলাম দু’হাত !”
ঈদ মানে খুশীর জোয়ার , সহমর্মিতা ও সহযোগিতার অপূর্ব বন্ধন ৷ সব বিভেদ দূর হয়ে সমগ্র মানব জাতির মধ্যে এই উৎসব খুশীর বন্যা নিয়ে আসুক ৷ ঈদ মোবারক বলে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানানো হয় ৷ আরবী ” ঈদ” এর দু’টি অর্থ আনন্দ আর উদ্ যাপন ৷ ” মোবারক” মানে কল্যাণময় ৷ অর্থাৎ, আনন্দ উদযাপন কল্যাণময় হোক ৷ তবে, হজরত মহম্মদ তাঁর সঙ্গী( সাহাবী) দের বলতেন ” তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম ” বাংলা করলে হয় আল্লাহ আমাদের বা আপনাদের তরফ থেকে কবুল করুন ৷
ঈদ- উল – ফিতর মানেই” ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ / তুই আপনারে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাগিদ ” বেজে উঠছে প্রতিটি মহল্লায় ৷
নজরুলের আরেকটি গানও ” পথে পথে আজি হাঁকিব , বন্ধু ঈদ মোবারক , আসসালাম ” !
মুসলিম উম্মাহ্ র প্রধান দুটি উৎসবের মধ্যেও প্রধান “ঈদ উল ফিতর” ৷ ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ সাওম পালনের পর অর্থাৎ একমাস সারা দিন খাদ্য – পানীয় না খেয়ে রোজা পালনের পর আসে এই খুশীর পরব ৷ দীর্ঘ একমাস সিয়াম ও কিয়ামের
মধ্যে দিয়ে মানুষ হয়ে ওঠে ধৈর্যশীল , সংযমী , উদার ও মানবিক ৷ মন হয় আল্লাহ্ ( ঈশ্বর ) মুখী ৷
হজরত মহম্মদ তাই বলেছেন এক মাস সংযম পালনের পর রোজাদাররা হয় নিষ্পাপ শিশুর মত পবিত্র ৷ ১২ বছরের উপরের সব মুসলমান ছেলে মেয়ের জন্য “রোজা” ফরজ (অবশ্য পালনীয় – কোরানের সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াত)৷
রোজা শেষে রোজ সন্ধ্যায় ” ইফতারের ” মধ্যে দিয়ে খেতে হয়৷ শেষ খাওয়া “সেহরী ” হয় শেষ রাতে ৷ শিখ ছাড়া প্রায় প্রতিটি ধর্মে উপবাসকে পবিত্র ভাবা হয়েছে ৷ যেমন ৩ মার্চ বুধবার থেকে শুরু হয়েছে খ্রিস্টানদের ৪০ দিন ব্যাপী “লেন্ট” বা ‘আস -সাওম – উল – আরবাইন নামের উপবাস পালন ৷ একবার পুরো পেট খেয়ে উপবাসে থেকে কখনো আরো দুবার হাল্কা কিছু খেয়ে যিশুর ক্রুশ বিদ্ধ হওয়ার আগের চল্লিশ দিন উপবাসের ও ত্যাগের স্মরণে বিশ্ব ব্যাপী অসংখ্য খ্রিস্ট ধর্মাবল্মবী মানুষ গুড ফ্রাইডে পর্যন্ত উপবাস পালন করেন ৷ এই নিরামিষ খায় ৷ খ্রিস্ট ও ইসলাম ধর্ম আসার আগেও উপবাস প্রচলিত ছিল ৷ হিন্দুরা একাদশী , প্রদোষ , পূর্ণিমা , অমাবস্যা , ছট পূজা , মহাশিবরাত্রি , নবরাত্রি , আয়াপ্পা পূজা সহ সোমবার শিবের জন্য , মঙ্গলবার শক্তিদেবী মারিয়াম্মানের , বৃহস্পতিবারে বিষ্ণুর এবং শনিবার আয়াপ্পার জন্য নানা কারণে উপবাস করেন ৷ তবে শ্রীবিদ্যায় তন্ত্র মতে পিতামাতার মৃত্যুদিন ছাড়া উপবাস করতে মানা করা হয়েছে ৷ বলা হয়েছে কেউ ক্ষুধার্ত থাকলে দেবীও ক্ষুধার্ত থাকেন ৷ ইহুদীরা রশ হাশানাহতে ( ওদের নববর্ষ) এবং ইয়ম কিপুর বা প্রায়শ্চিত্তের দিনে সূর্যাস্ত থেকে পরবর্তী সূর্যাস্ত পর্যন্ত একটানা ২৫ ঘন্টা উপবাস করেন ৷ বাহাই ধর্মে ১৫থেকে ৭০ বছর বয়সী সবাইকে( বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া) ২ মার্চ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত ১৯ দিনের উপবাস পালন করতে হয় ৷ জৈন ধর্মে কঠোর অহিংসা অর্জনের জন্য ৪০ দিনের দীর্ঘ উপবাসের বিধান আছে ৷ বৌদ্ধরা বিনয়নীতি অনুসরণে দুপুরের আহারের পর উপবাস করেন ৷ অষ্টবিধান অনুসারে সপ্তাহের একটি দিন এবং বজ্রযান বৌদ্ধরা নুয়াং নে অনুসরণে উপবাস করেন ৷ পারসিকরা পাঁচসালা , প্রাচীন গ্রীকগণ হিসমোফেরিয়া উপবাস করতেন ৷ ইয়েজেদিরা ডিসেম্বর মাসে তিন দিন রোজা রাখে ৷ শিখরা স্বাস্থ্যগত কোন চিকিৎসা পরামর্শ ছাড়া উপবাস করেন না ৷ মনে করেন তাতে কোন আত্মিক সুবিধা হয় না ৷ ইসলাম ছাড়া কোন ধর্মে সেহরী খাওয়ার বিধান নেই ৷ ঈদের নামাজ ( সালাত) হয় খোলা জায়গায় ” ঈদগায়” ৷ প্রতিটা পুরুষ – জাতি , বর্ণ ,
ধনী , গরিব নির্বিশেষে এক কাতারে দু’ রাকাত
ওয়াজিব নামাজ পড়ে ” ঈদ ” পালন করে ৷ এক মাস রোজা রাখার কঠোর সাধনায় সফল হয়ে খাবারে ও পোশাকে সমৃদ্ধির প্রকাশ করে ঈদের দিন ৷ গরিবদের জাকাত ( সাদাকাতুল ফিত্ র)দেয় ৷ পানাহারের সবকিছু আল্লার দান ৷ রোজা সেই বোধ এনে দেয় ৷ শরীর , মন , জ্ঞান , বুদ্ধি ও বিবেকের উপর রোজায় সংযম সাধিত হয় ৷ পয়লা শাওয়াল ঈদের দিন মানুষ আল্লার মেহমান ৷ এই দিনে তাই সবাইকে আপ্যায়ন ও দাওয়াত দেওয়া হয় ৷আবার একসাথে নামাজ পড়ে ও কুশল বিনিময় করায় সেটা হয় মানবতার জয়গান ,মানুষে মানুষে সৌর্হাদ্য ও সংহতির প্রকাশ ৷ আবার ঈদের নামাজের সময় তাকবীরে আল্লাহু আকবর বলে কান পর্যন্ত হাত তুলে স্রষ্টার প্রতি আত্মসর্মাপন করতে হয় ৷এই দিন সবার গায়ে থাকে “খুশবু ” ৷ বু মানে গন্ধ আর খুশ যা আনন্দিত করে যে গন্ধ তাই “খুশবু” ৷ এদিন সবাই “বাবু” ৷ “বু” সুগন্ধের সঙ্গে থাকে যে “বা” সেই তো “বাবু” ৷ নামাজের আজান শুধু শোনার নয় ৷ অপূর্ব মধুর সে আওয়াজ ! নামাজ দেখারও ৷ তার জনবিন্যাস ও মানববন্ধন ঐক্যলালিত সৌন্দর্যের তরঙ্গ ৷ মহম্মদের প্রিয় তিনটি জিনিস – নামাজ , নারী ও সুগন্ধ ৷ “ওহি ” মানে প্রত্যাদেশ , , “এলহাম ” মানে অনুভূতি ৷ওহি রসুল মহম্মদের মাধ্যমে প্রকাশিত প্রত্যাদেশ৷ আর এলহাম ধ্যানীর ধ্যানে প্রকটিত অনুভূতি ৷ আল্লার বাণী হজরতের কাছে যিনি বয়ে আনতেন সেই জিব্রাইল ফেরেস্তার অস্তিত ছিল লাল গোলাপের সুঘ্রাণ ৷ ইসলাম অনাড়ম্বর ধর্ম হলেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর জোর দিয়ে বলেছে তা ঈমানের অঙ্গ ৷ খালিগায়ে নামাজ পাঠ কে বলেছে “মকরুহ” ৷ যা অনুচিত ৷ তাই নতুন বা পরিচ্ছন্ন জামা কাপড় পরে ঈদের নামাজে সবাই অংশ নেবে ৷ আমার মুসলিম বন্ধুদের জানাই আমার ” ঈদ মোবারক”!
ঈদ মোবারক….। ঈদ মানে খুশীর জোয়ার, সহমর্মিতা ও সহযোগিতার অপূর্ব বন্ধন…. ৷

More from CultureMore posts in Culture »
- মহা সমারোহে আয়োজিত হল TV9 বাংলার দ্বিতীয় ‘নক্ষত্র সম্মান’…।
- বেলঘরিয়া থিয়েটার একাডেমির ১৫ বছর এবং ডাক্তার অমিতাভ ভট্টাচার্যের অভিনয় জীবনের ৫০ বছর উদযাপন….।
- স্বভূমিতে রোটারি ক্যালকাটা মহানগর আয়োজিত ‘ব্লুম অ্যান্ড ব্লেন্ড’ লাইফস্টাইল প্রদর্শনী উদ্বোধনে ঋতুপর্ণা…।
- সাহিত্য অকাদেমির ওয়েবলাইন সাহিত্যমালার অধীনে আয়োজিত হলো বহুভাষিক কবি সম্মেলন…।
- কলকাতায় ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে দোল উৎসব….।
- ইমন চক্রবর্ত্তীর একক অনুষ্ঠান বোরোলিন তোমাকে দেখব বলে…।
More from InternationalMore posts in International »
- বাঙালিয়ানার মধ্যে বাংলা স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র ও ছবির উৎসব সুতানুটি শর্টস্….।
- ১০ম NEZ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব মহা সমারোহে সম্মানিত পুরস্কারে ভূষিত হলেন শিল্পীরা….।
- রোমান্টিক কমেডি চলচ্চিত্র ‘হাঙ্গামা ডট কম’….।
- TV9 বাংলার নতুন নিউজ সিরিজ ফুরফুরায় ‘ধর্মযুদ্ধ’…..।
- কল্যাণীতে সংবিধান ও স্বাধীনতা আলোচনাসভা….।
- মহা সমারোহে আয়োজিত হল TV9 বাংলার দ্বিতীয় ‘নক্ষত্র সম্মান’…।
Be First to Comment