শ্রীজিৎ চট্টরাজ : ১৪ এপ্রিল ২০২২।বিশ্বে এমন সব আশ্চর্য্যজনক স্থাপত্য আছে, যার অঙ্গসজ্জা দেখলে ভাবতে হয়, প্রাচীন যুগে এত শৈল্পিক কীর্তি কি করে গড়ে উঠলো? এই প্রসঙ্গে বলা যায়, মহাভারতের পান্ডবদের রাজ্য ইন্দ্রপ্রস্থ সম্পর্কে। হস্তিনাপুরের নগর সভ্যতার পাশে যা ছিল নেহাৎ বনাঞ্চল, সেখানে সেযুগের স্থপতি ময়দানব এমন এক নগর নির্মাণ করেছিলেন, যা নকল করা সম্ভব নয় । লোকমুখে পান্ডবদের প্রাসাদের সুখ্যাতি শুনে দূর্যোধন এসেছিলেন সেই প্রাসাদ দেখতে। ময়দানব এমন করেই প্রাসাদ বানিয়েছিলেন,যেখানে প্রখর সূর্যের তাপ থাকলেও প্রাসাদ গরম হতো না। প্রাসাদে এমন এক কৃত্রিম জলাশয় নির্মাণ হয়েছিল, আসলে যা স্ফটিকের তৈরি। চোখের বিভ্রমে মনে হতো, সত্যিই জলাশয়। সেখানেই বোকা বনে দূর্যোধন পড়ে যান। হেসেছিলেন দ্রৌপদী। বলেছিলেন অন্ধ পিতার অন্ধ পুত্র। সেই অপমান ভোলেননি দূর্যোধন। হয়েছিল ভয়ানক যুদ্ধ। পুরাণের আর এক কারিগর ছিলেন বিশ্বকর্মা। এদেশে তাই স্থাপত্য ও স্থাপত্যের অঙ্গসজ্জার এক ঐতিহ্য রয়েছে বিশ্বের দরবারে।
আধুনিক যুগে এদেশে এমন বহু বিশ্বকর্মা ও ময়দানব স্থপতি অসাধ্য সাধন করছেন। এঁদের এক সংগঠন এসোসিয়েশন অফ আর্টিটেকস, বিল্ডার্স, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার অ্যান্ড অ্যালাইড ট্রেড আগামী মে মাসে কলকাতার সাইন্স সিটিতে আয়োজন করতে চলেছে পূর্ব ভারতে সর্ববৃহৎ মেলা এবিড ইন্টেরিয়রস ২০২২। গত ৩০ বছর ধরে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে সংগঠন কাজ করছে। এই উপলক্ষে গত বুধবার একটি সংগীত মুখর সন্ধ্যা উপহার দিলেন সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা। এসেছিলেন সংগঠনের প্রতীক হিসেবে অভিনেত্রী কনীনিকা ব্যানার্জি।
কনীনিকা জানালেন, সুখী গৃহকোণ রচনা করতে সবসময় অনেক টাকার দরকার পড়ে না। আমার বাড়ি বা ফ্ল্যাটের অবস্থান, পরিমাণ ও আমার রুচির সংমিশ্রণে একটি নান্দনিক বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারি। আমি মনে করি, আমার ঘর, আমার বাড়ির পরিবেশ আমাকে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা দিতে পারে যদি আমি একটি রুচিসম্পন্ন পরিবেশ গড়ে তুলতে পারি। বাজারে ইন্টেরিয়র শিল্প আজ কোথায় পৌঁছচ্ছে সেটা বুঝতে এমন একটি মেলার কত প্রয়োজন তা আমি গতবারের মেলায় গিয়ে বুঝেছি। এবার শুনলাম, বিখ্যাত সব সংস্থা ২৫০টির বেশি স্টল নিয়ে আসছেন । গরমকালে মেলা হলেও সমস্যা হবে না। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেলা।
সংগঠনের তরফে সভাপতি অজিত জৈন বলেন, এই মেলা নতুন দিশা দেখাবে বাড়ি, ফ্ল্যাট, খুচরো বিক্রির দোকান, মল এবং ব্যবসায়িক স্থানের মালিকদের। আমরা নিজেদের সাংগঠনিক ভাবে এমন ভাবে প্রস্তুত করেছি, সেখানে এই শিল্পে জড়িত তৃণমূলস্তরের কর্মীদের দক্ষ করে তোলার পদক্ষেপ নিই। সামগ্রিকভাবে এই শিল্পে জড়িত সবার সঙ্গে এক যোগসূত্র রচনা করি ।
সংগঠনের সম্পাদক বিজয় চোখানি বলেন, আমাদের লক্ষ্য, একটি সার্বিক ক্ষেত্র গড়ে তোলা যেখানে এই ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত পেশাদার মানুষদের সংগঠিত করে সমাজের মানোন্নয়ন ঘটানো। সহসভাপতি অজিত সিংঘি বলেন, এই মেলা ইন্টেরিয়র ডিজাইনার, নির্মাণকারী সংস্থা, বাড়ি তৈরির কাঁচামাল নির্মাণকারী, আসবাবপত্রনির্মাণকারী ও আলোকসজ্জার নির্মাণকারী সংস্থা, আর্কিটেক্টস, স্থাপত্য সংস্থা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে গৃহনির্মাণকারীদের সমন্বয় ঘটার সুযোগ মিলবে একই ছাদের নিচে। কোষাধ্যক্ষ সন্দীপ গুপ্তা বলেন, মেলায় শুধু পণ্য প্রদর্শন নয় , যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজার ও চাহিদা নিয়ে অনেক সেমিনার ও ওয়ার্কশপ করা হবে। ক্রেতা বিক্রেতার পরস্পর পরিচিত হওয়ার সুযোগ মিলবে।
সংগঠনের সহ সম্পাদক করণ জৈন বলেন, সংগঠন এক্সিবিশন,সেমিনার, ওয়ার্কশপ ধারাবাহিক ভাবে করে থাকে। ফলে একটি সফল ও চিত্তাকর্ষক মেলা হিসেবে ইতিমধ্যেই যা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। করোনা পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হয়ে ক্রেতা বিক্রেতার যুগলবন্দিতে এবারের মেলা যে সাফল্যের শিখরে পৌঁছবে , এব্যাপারে নিশ্চিত অ্যাসোসিয়েশন অফ আর্টিটেক্টস , বিল্ডার্স, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার অ্যান্ড অ্যালাইড ট্রেড ।
Be First to Comment