শ্রীজিৎ চট্টরাজ: কলকাতা, ১০ মে ২০২২। ফ্যাশন দুনিয়ায় ২৪ বছরের সাফল্য,বিশ্বাস আর যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে ইন্টারন্যশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন সংক্ষেপে আই এন আই এফ ডি শিক্ষাক্রম পরিবেশন করছে। না হলে গত ২৪ বছরে এই শিক্ষাকেন্দ্র থেকে পাশ করেছেন প্রায় ৫ লাখ ছাত্রছাত্রী। প্রতি বছর পাশ করেন ২৫ হাজার ছাত্রছাত্রী। শিক্ষালয়ের প্রাণপুরুষ পরিচালক জন ম্যান্তস এবং সুসান ম্যান্তস।
জাতীয় ক্ষেত্রে এই শিক্ষা সংস্থার এক পরিচিতি আছে। এই শিক্ষাকেন্দ্র শুধু ফ্যাশন বা ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের যোগ্য করে তোলে তা নয়। নিজস্ব জীবিকা নির্মাণের ব্যাপারেও সহায়তা করে। করোনা পরিস্থিতিতে ঘরবন্দী ছাত্রছাত্রীদের ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যেমন উৎসাহিত করেছেন, তেমন সহজ উপায়ে শিখিয়েছেন পাঠ্যক্রম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার প্রাক্কালে এই শিক্ষা সংস্থা টুমরো মেকার্স ২০২১-২২ একটি বিশেষ কার্যক্রম সংগঠিত করতে চলেছে। মধ্য কলকাতার লিন্ডসে স্ট্রিটে এই উপলক্ষে আয়োজন হয় এক সাংবাদিক সম্মেলনের। সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান জন ম্যান্তস বলেন, টুমরো মেকার্স ২০২১-২২ একটি ভার্চুয়াল ফ্যাশন শো। যেখানে করোনা পরিস্থিতি ও পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষিতে ফ্যাশনের সময়ের বিবর্তন তুলে ধরা হচ্ছে। স্বকীয়তায় ফ্যাশন শোতে সাতটি পোষাক শৈলী উপস্থাপন হচ্ছে। ১) আলভারা। যেটি শক্তি, সাফল্য, লক্ষ্যপূরণের প্রতীকী। নির্মাতা মোহিনী হাঁসদা, জেনি পল , বিশাখা মুন্দ্রা, অর্চনা সুরানা ও ঋতুপর্ণা সাহা। ২) গালভ্যানি। যেখানে তড়িৎ শক্তির ব্যবহারিক প্রয়োগ নির্মাতা ও গ্রাহকের সম্পর্ক একসূত্রে গড়ে তোলা হচ্ছে। থাকছে পাঁচটি উপাদান। তড়িৎশক্তি, ধারাবাহিকতা, বিবর্তন, সহায়ক তড়িৎ কেন্দ্র, তড়িৎ শক্তির বিপণন, সংরক্ষণ। নির্মাণশৈলীর উদ্ভাবক সিল্কি কলওয়ানি, মৌসুমী রায় মজুমদার, বান্টি রায় ও সারিকা কুহার। ৩) রেডিয়ান্ট রিবিল্ট। বিভিন্ন রং ও তার দৃশ্যশ্রাব্যতার শৈল্পিক উপস্থিতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এই পর্যায়ের নির্মাতা এস্থার রাণী হোরো, ঋতুমণি রায়, মেঘনা মণ্ডল, ও দীনবন্ধু পাত্র । ৪) আর্টিস্ট্রি অফ বেঙ্গল। বাংলার বিয়ে,, পুজো , জামাইষষ্ঠীতে বরণ ডালা এক সাংস্কৃতিক ধারা। সেই বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি কুলোকে বিভিন্ন আকৃতিগত নান্দনিক এক নির্মাণ গৃহ সজ্জার ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় করে তুলেছেন রিদ্ধি মণ্ডল, ইন্দ্রজিৎ কর্মকার, ঈশিকা মাখাল, ঋষভ ঘোষ, মঞ্জিমা বিশ্বাস ও ধনঞ্জয় ঘোষ। ৫) ক্যাসকেড অফ স্টাইল। গ্রীষ্মের প্রাক্কালে মিকা দ্বীপের একটি রাস্তা মাইকোনস স্ট্রিট একটি আকর্ষণীয় স্থান। এলাকার বাড়ি ,দোকান, মন্দির সবেতেই রঙের সর্বজনীন আবেদন। সেখানে মেলে রংবেরংয়ের ফুল। সেই রাস্তার শৈল্পিক আবেদন শিক্ষালয়ের পক্ষে নির্মাণকারীরা রঙের বাহারি নান্দনিক ব্যবহারে তাঁদের সৃষ্টি নিবেদন করেছেন। নির্মাণকারী শ্যামলী পাল, শ্রেয়া আগরওয়াল, সায়নিকা দত্ত, সিম্মি জয়সয়াল ও জুহিনা মল্লিক। ৬) দি ককটেল অ্যাভিয়েশন। দীপিকা রাঠি, গরিমা চান্ডক, সঙ্গীতা গুপ্তা, সারিকা গুপ্তা ও রাধিকা সোনির সৃষ্টিশৈলীতে প্রভাব ফেলেছে রাশিয়ার মস্কোর দি ইভলিউশন টাওয়ার। এই স্থাপত্যের নির্মাণশৈলীকে নিজস্ব দৃষ্টিতে রূপ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। ৭) জলকিন। মায়া সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন চার রকমের ক্যালেন্ডার। সূর্য ও চন্দ্রের গণনা ও গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ক্যালেন্ডারের ভিত্তিতে জন্ম, পুনর্জন্ম, সৌভাগ্য ও শয়তানের দৃষ্টি নিয়ে পাঁচ দিনের সপ্তাহের যে রেখ চিত্র গড়ে উঠেছিল তার ভিত্তিতে এক শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গির নির্মাণ করেছেন যূথিকা বর্মন, জ্যোতি ভগৎ, সায়নী ঢালী, মালিহা পারভীন ও ভানলারকিমা আচি।
এই প্রদর্শনীর জুরি তালিকায় আছেন বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার পল্লবী শেঠি, অঙ্কিতা ব্যানার্জি, আমন ঝাঁঝরি ও নিকিতা দত্ত। উল্লেখ করা যেতে পারে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফ্যাশন শৈলী প্রদর্শিত হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নিউ ইয়র্কের ফ্যাশন সপ্তাহে। ভারতীয় সংস্কৃতির এক নিদর্শন সেই ফ্যাশন শোতে তুলে ধরা হয়। যা আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসা পায়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেশের ল্যাকমে ফ্যাশন উইক ও আর্ন্তজাতিক স্তরে লন্ডন ও নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকে যোগদান করে খ্যাতির শীর্ষ ছুঁয়েছে এমনই দাবি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম আধিকারিক মিথিলা দে।
মিথিলা দে জানালেন,আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রান্তিক অঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের নতুন প্রজন্মকে মূল স্রোতে নিয়ে এসেছি। এখানে শুধু শিক্ষা নয়, একজন পেশাদার হিসেবে গড়ে ওঠার পাঠ দেওয়া হয়। আমাদের প্রাক্তনীরা বিনোদন জগতে যেমন চাকরি করছেন, অনেকে নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করে সাফল্যের সঙ্গে উপার্জন করছেন।
Be First to Comment