Press "Enter" to skip to content

” আহা কি অমিক্রণ আকাশে বাতাসে”….।

Spread the love

(প্রদীপের সঙ্গে আলাপ= প্রলাপ) (বিড়বিড়ানীর ক্রমিক সংখ্যা= ০৯৬) — মতামতের জন্য একমাত্র পাঠক দায়ী কে বলেছিলো পড়তে ??
Direct from the desk of
Magus P. C. SORCAR Junior (ডঃ প্রদীপ চন্দ্র সরকার M. Sc., Ph. D. (Cal)
———————————————————
” আহা কি অমিক্রণ আকাশে বাতাসে”

আজ ছাব্বিশে জানুয়ারি, আমার ঘুম ভাঙলো ভোর আটটায় । হ্যাঁ, ভোরই বটে। অনেক দিনের শখ ছিলো বেশ প্রাণ ভ’রে ঘুমোবো। জয়শ্রী বেচারা এখনও ভোশ্ ভোশ্ করে ঘুমোচ্ছে। এটাও একটা আজব দৃশ্য। প্রতিদিন ও এই সময়ে ঘুম থেকে উঠে নাইট ল্যাম্প, মশা বিতরণী যন্ত্রটার সুইচ অফ করা, আমার গায়ের কম্বলটা ঠিক-ঠাক টানটান করে টেনে সেন্সর করে দেওয়া ইত্যাদি ঘরের কিছুনা কিছু কাজ করে। নিঃশব্দে। আর তারপর মিউজিক কন্ডাক্টরের মতো বাড়ির কাজের মাসী, পিসি, জ্যাঠাদের পরিচালনা করেন। আমি যে জেগে আছি বলিনা। বললেই তো “গুড মর্নিং” অর্থাৎ একটা মিথ্যে কথা দিয়ে দিনটা শুরু করতে হবে। এই পরিস্থিতি তে “গুড একটা কিছু” বলে জ্যোতিষীগিরির কেরামতী ফলাতে যাওয়া ঠিক নয়। মার খাবো। তাই চুপ করে থাকি।
কিন্তু আজ!! এ কী হল!!?? জয়শ্রী ঘুমুচ্ছে। ওর নাক ডাকার আওয়াজ আগে কখনও শুনিনি। জানতাম না ও এতো সুন্দর নাক ডাকে। যেন প্রেমিকাকে বিয়ের পর ফুলশয্যার সানাই। নিশ্চিন্ত! এত সুখ মোর সইবে কি?

হঠাৎ মনে পড়লো, এই এত সুখের কারণটা কি! কোভিড ল্যাজ তুলে ভেগেছে। গত রাতে আমরা ভারতবাসীরা বারান্দায়, ছাতে, ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে উঁকি মেরে থালা, বাটি, গ্লাস, হাততালি, বগল যে যা পারে তা বাজিয়ে কোভিডকে অফিশিয়ালি বিদায় দিয়েছি। ব্র্যাকেটটা যেভাবে শুরু, সেভাবেই ক্লোজড হলো। সাঙ্গ-পাঙ্গ সহ , দাড়ি, গোফ, আঁচিল, আর তার সরু সরু শূড় চেঁছে কোভিড ভাইয়া, বিজ্ঞান সম্মতভাবে চোঁ-চা দৌড় দিয়ে নাকি পালিয়েছে।

হঠাৎ মনে পড়লো, আজ সাধারণ তন্ত্র দিবস। এই মন্ত্র-তন্ত্রে আমি বিজ্ঞান-মনস্ক বলেই বিশ্বাস করি। সেজন্যই সুনাগরিক হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি আর আমার খুব আন্তরিক বন্ধু এম. জে. আকবর, একসাথে। আমি কট্টর সনাতনী হিন্দু, আর ও হচ্ছে আদর্শ নামাজি মুসলমান। দুজনেই বুক ফুলিয়ে হেরেছি। আলোচনা করে দেখে ছিলাম, আমাদের ভোটে দাঁড়ানো উচিত। নইলে উত্তরসূরিরা প্রশ্ন তুললে কী জবাব দেবো? “দেশের দুর্দিনে তোমরা কোথায় ছিলে? কী করছিলে? ” বলতে পারবো, “সৎ ভাবে নিজেকে এগিয়ে দিয়েছিলাম… কিন্তু জনগণ আমাকে পছন্দ করে নি। সেজন্য ওঁদের মনপসন্দ, যোগ্য ব্যক্তিকেই বেছে নিয়ে ছিলেন। ওঁরা ওঁদেরকেই চান। যে পূজোয় যে ফুল। আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। দেশের ভালো চাই। আমি সেজন্য হাড়িকাঠে গলা দিয়ে ছিলাম। জেনে শুনে বিষ করছি পান।
—তো ওই হাড়িকাঠে কেন?
—সব ওস্তাদেরা তো শুরুতে তাই করেছেন। গেলেও বিচিত্র পথে, আসলে সর্বত্রগামী। সব্বাই।
—তুমি ওদের মতো নির্লজ্জ, ছ্যাচোর হতে পারবে না।
—কে বললো স্যার। চান্স পেলে আমি ওঁদের মুখ রাখবো। ওঁরা তো এঁটো কাঁটা ফেলে যায়। আমি কথা দিচ্ছি, ঝেড়ে সব ফাঁক করে দেবো।
—এই জন্যই তোমাকে ওঁরা এড়িয়ে যান। ওদেরকেও কামাতে দিও। ভুলে যেও না, এটা সাম্যবাদ।
—না না স্যর, ওরা অতো খারাপ নন। খারাপ হলে ওঁরা আমায় পদ্ম-পুরস্কার দিতেন।
—এর সাথে ওর যোগাযোগটা কোথায়?
—ওরা আমাকে ভালোবাসে। বাঁচিয়ে রাখতে চায়।
—মানে??!!!
—পদ্ম-পুরস্কার পেলেই তার দুদিন পর সে মারা যায়। একটু এদিক- ওদিক তাকান, দেখতে পাবেন।

3rd wave এর ফলে নিউটনের 3rd Law of motion-দারুণ কাজে লেগেছে। হেঃ হে। যাব্বে কোথায়!? বিজ্ঞান, রাজনীতি, দুর্নীতি, বদলানীতি সব কিছু ওই নীতি অনুযায়ী হৈ হৈ করে মেনেছে। “To every action, there is an equal and opposite reaction !” কোভিড যতোই দাঁত চেপে কামড়ে ধরেছে, ততোই ওর দাঁত ক্ষয়েছে। এখন ফোকলা হয়ে গেছে। মাস্ক ঢাকা আছে বলে দেখতে পারছি না। হুর্-রে। মাড়ি দিয়ে কামড়ে মহামারী হয় না। কোভিড ফুরিয়েছে এখন ইকুয়্যাল এন্ড অপোজিট রিয়্যাকশন শুরু হবার পালা। মাস্ক পড়তে হবে না। পানের পিক নিশ্চিন্তে ফেলতে পারা যাবে। ফলে রাস্তাঘাট, সিড়ির কোণা আরও পিকচারিস্টিক হবে। মাস্কে জমা, নিজের পরিত্যক্ত কারবন-ডাই অক্সাইড আবার ফেরত নিতে, কোলাকুলি ছেলেদের সঙ্গে মেয়েদের এলাউড। আবার মিছিল বেড়ুতে পারবে, আবার বন্ধ্ হবে, আবার স্কুল খুলবে, আবার পূজোর/ ঈদের/গরমের ছুটি চুটিয়ে শুরু হবে। ভাগারেস্তোরা আবার খুলবে। অফিসে সময়মতো হাজিরা আবার দিতে হবে, মন্ত্রীরা অনেকদিন বিদেশে ইন্ডাস্ট্রি খুঁজে ধরতে হাওয়া বদলে যান নি। যেতে পারবেন। মানে সেই যে ইন্দিরা গান্ধী প্রবর্তিত এমারজেন্সি, সেটা ফিরে আসবে। আরও কয়েক ডিগ্রি কড়া। পাশ ফেল প্রথা উঠে যাবে, মন্ত্রীর আত্ম-জীবনী পড়ানো হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে র্্যাশন পৌছে তো দেবেই, স্বজন হলে রেঁধে, বেড়ে, খাইয়ে, আঁচিয়ে, মুখ মুছিয়ে, বিছানায় পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে চাদর চাপা দিয়ে, পিঠ থাপড়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবে। কষ্ট করে ভোট দিতে যেতেও হবে না। পার্টির লোকেরা সেটা চুকিয়ে দেবে। …… “অভয় দিচ্ছি, শুনছো না যে, ধরবো নাকি ঠ্যাংদুটো? সবাই মিলে কামড়ে দেবো, মিথ্যে এমন ভয় পেলে।…. ”
ধুত্তোর’! ইশ…এতো সুন্দর স্বপ্নের ঘুমটা ভেঙে গেলো।

্্

More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.