স্মরণ : ক্ষু দি রা ম ব সু
বাবলু ভট্টাচার্য : বিশ শতকের প্রথম চারটি দশক ছিল বাংলার ইতিহাসে অগ্নিযুগ। বাঙালি বীর তরুণ-তরুণীরা ব্রিটিশ বিরোধী অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা গ্রহণ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীকে বিতাড়নের লক্ষ্যে, ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।
১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল রাত সাড়ে আটটায় সুদূর বিহারের মুজফ্ফরপুরের জেলা ও দায়রা জজ মি. কিংসফোর্ডকে হত্যার উদ্দেশে অন্ধকারের মধ্যে একটি গাড়ি (শকট) লক্ষ্য করে হাত বোমা ছোঁড়া হয়। সৌভাগ্যবশত কিংসফোর্ড সাহেব সে গাড়িতে না থাকায় প্রাণে রক্ষা পান। নিহত হন মিস ও মিসেস কেনেডি নামে দুজন শ্বেতাঙ্গ মহিলা। পরদিন সকালে ঘটনাস্থল থেকে ২৫ মাইল দূরে ওয়াইনি নামক স্টেশনে একজন আসামি ধরা পড়েন। পুলিশের হাতে ধরা পড়া তরুণটি হলেন ক্ষুদিরাম বসু।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় নরহত্যার অভিযোগে বিচার শুরু হয়। ক্ষুদিরামের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন উকিল কালিদাস বসু, উপেন্দ্রনাথ সেন ও ক্ষেত্রনাথ ব্যানার্জী। পরবর্তীকালে যোগ দেন আরো কয়েকজন আইনজীবী, যাঁরা পারিশ্রমিকে মামলা চালান ও অন্যান্য খরচ বহনের জন্য চাঁদা তোলেন।
আসামি পক্ষের উকিলেরা ক্ষুদিরামের বয়স কম বিবেচনায় লঘু শাস্তির আবেদন করেন। কিন্তু বিচারক সে আবেদন অগ্রাহ্য করে প্রাণদণ্ডের আদেশ দেন। হাইকোর্টে আপিল আবেদন করা হয়। ক্ষুদিরামের পক্ষে আইনী লড়াই করেন আইনজীবী নরেন্দ্রকুমার বসু।
দুই শ্বেতাঙ্গ বিচারক দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনলেন, ১৩ জুলাই ১৯০৮ আপিলের রায় ঘোষণা করা হলো। ক্ষুদিরামের ফাঁসির আদেশ বহাল। ১১ আগস্ট ফাঁসির দিন ধার্য করা হলো।
ক্ষুদিরাম বসু দেশের জন্য শহীদ হন। এক নির্ভীক দেশপ্রেমিকের মৃত্যু হলো কিন্তু তাঁর বিপ্লবী আদর্শের মৃত্যু হয়নি। মৃত্যুর মধ্যদিয়ে বিপ্লবের যে অগ্নিশিখা বাংলার বুকে জ্বালিয়ে গেলেন অচিরেই সেই শিখা বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
শহীদ ক্ষুদিরামের আত্মহুতি দিবসে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
Be First to Comment