শু ভ জ ন্ম দি ন সা য় রা বা নু
বাবলু ভট্টাচার্য : আশৈশব স্বপ্ন ছিল- মায়ের মতো নায়িকা হবেন আর দিলীপ কুমারকে বিয়ে করবেন। পূর্ণ হয়েছিল দুই স্বপ্নই সায়রা বানুর। অথচ‚ কোনও এক সময় দিলীপ কুমার মোটেও পছন্দ করতেন না তাঁকে। হিন্দি ছবির অপার্থিব এই সুন্দরী জীবন্ত কিংবদন্তি।
সায়রার মা ছিলেন তিন ও চার দশকের নামী নায়িকা নাসিম বানু। বাবা, প্রযোজক এহসান উল হক।
তাঁর বাবার পারিবারিক শিকড় খুবই অভিজাত। কিন্তু মায়ের দিক দিয়ে পারিবারিক অবস্থান বিশেষ সম্মানীয় ছিল না। সায়রা বানুর দিদিমা ছিলেন চামিয়াঁ বাঈ। বিভিন্ন সুলতান- বাদশাদের দরবারে নৃত্যগীত পরিবেশন করতেন। ইংরেজিতে পরিশীলিত ভাষায় যাকে বলে ‘Courtesean’।
সায়রা বানু ও তাঁর ভাই সুলতান যখন ছোট‚ বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের বাবা- মায়ের। দুই ভাইবোনকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ইংল্যান্ডে। লন্ডনে দীর্ঘদিন ছিলেন তাঁরা।
১৬ বছর বয়সে সায়রা বানুর প্রথম অভিনয় শাম্মি কাপুরের বিপরীতে ‘জঙ্গলি’ ছবিতে। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত। দর্শক মনে জায়গা করে নেন নবাগতা।
তবে সমকালীন নায়িকাদের থেকে পিছিয়ে পড়তেন নাচ না জানায়। কঠোর প্রশিক্ষণে ধ্রুপদী নাচ আয়ত্ত করেন তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি চূড়ান্ত জনপ্রিয় হয় তাঁর স্টাইল স্টেটমেন্ট। তাঁর বেশিরভাগ পোশাক আর গয়না ছিল মা নাসিম বানুর ডিজাইন করা। ইন্ডিয়ান ও ওয়েস্টার্ন দু-রকমের পোশাকেই স্বচ্ছন্দ তিনি।
শাম্মি কাপুর ছাড়া বিশ্বজিৎ‚ রাজেন্দ্র কুমার‚ জয় মুখার্জি‚ ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে জমে ওঠে তাঁর জুটি। গ্ল্যামারাস রোম্যান্টিক নায়িকার ভূমিকায় তিনি অতুলনীয়া।
তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল- ‘আয়ি মিলন কি বেলা’‚ ‘আদমি আউর ইনসান’‚ ‘আও প্যায়ার করেঁ’‚ ‘পুরব অউর পশ্চিম’, ‘ব্লাফমাস্টার’‚ ‘দূর কি আওয়াজ’‚ ‘ঝুক গ্যয়া আসমান’, ‘পকেটমার’ এবং অবশ্যই ‘পড়োশন’।
সায়রা বানু, দিলীপ কুমারের প্রতি দুর্বলতা কোনদিন লুকোননি। পরিচালকদের কাছে হত্যে দিতেন দিলীপ কুমারের বিপরীতে তাঁকে কাস্টিং করার জন্য। দিলীপ কুমার চোস্ত উর্দু বলেন বলে শিক্ষকের কাছে এই ভাষা শিখেছিলেন সায়রা বানু।
শোনা যায় ‘রাম অউর শ্যাম’ ছবিতে প্রথমে তাঁকেই নায়িকা হিসেবে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু নাকচ করে দেন স্বয়ং দিলীপ কুমার। কারণ সায়রা বানু তাঁর থেকে ২২ বছরের ছোট ছিলেন। দু’জনের কেরিয়ারে একসঙ্গে ছবি নামমাত্র।
ততদিনে রাজ কাপুর‚ দেব আনন্দের সঙ্গেও অভিনয় করে ফেলেছিলেন সায়রা বানু। কিন্তু অধরা ছিল স্বপ্নের নায়কের সঙ্গে কাজ। ‘মুঘল-এ-আজম’ ছবির প্রেমিয়ার শো-এর পার্টিতে মায়ের ভারী শাড়ি‚ গয়নায় সেজে গিয়েছিলেন তিনি। শুধু দিলীপ কুমারের জন্য। কিন্তু দিলীপ কুমার নিজেই আসেননি সেখানে।
অবশেষে দিলীপ কুমার এলেন তাঁর জীবনে। সত্যি হল সায়রা বানুর বালিকা বয়সের স্বপ্ন। ১৯৬৬ সালে বিয়ে হয় দিলীপ কুমার-সায়রা বানুর। স্বপ্নের মানুষ‚ মনের মানুষ তখন জীবনসঙ্গী। দু’জনে একসঙ্গে কাটিয়ে দিয়েছেন ৬৫টি বসন্ত। পরে আরও একবার বিয়ে করেছিলেন দিলীপ কুমার। কিন্তু সেটির স্থায়িত্ব ছিল কয়েক বছর।
সায়রা বানু ১৯৪৪ সালের আজকের দিনে (২৩ আগস্ট) ভারতের মুসৌরিতে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment