Press "Enter" to skip to content

‘আমি বীরসা মুন্ডা নই, আমি ধরতি আবা এই পৃথিবী আমার সন্তান আমি মুন্ডাদের নতুন ধর্ম শিখাব…..।

Spread the love

স্মরণ : বী র সা মু ন্ডা

“আমার অরণ্য মা-কে কেউ যদি কেড়ে নিতে চায়, আমার সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে কেউ যদি অন্য সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়, আমার ধর্মকে কেউ যদি খারাপ বা অসভ্য ধর্ম বলে, আমাকে কেউ যদি শুধু শোষণ করে নিতে চায় তবে আমি বিদ্রোহ করবই।”

[ বীরসা মুন্ডা ]

বাবলু ভট্টাচার্য : ১৮৫৫-৫৬ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহের পর ভারতের আদিবাসী অধ্যুষিত জায়গাগুলোয় আদিবাসীদের ওপর জমিদারদের অত্যাচার চলতে থাকে। আদিবাসী মুন্ডাদের মধ্যে তারা খ্রিস্টধর্ম, হিন্দুধর্ম প্রচার করে তাদের নিজ ধর্ম থেকে আলাদা করা হয়। এতে মুন্ডাসহ অন্য আদিবাসীদের সমাজ- ব্যবস্থা, সংস্কৃতি বিপন্ন হতে শুরু করে।

১৮৯৫ সালের দিকে ২০ বছরের যুবক বীরসা বুঝতে পারেন আর চুপ করে থাকলে চলবে না। মুন্ডাদের আদি ধর্ম থেকে কুসংস্কার বাদ দিয়ে তাদের নতুন ধর্ম শেখাতে হবে। তাই বলেছিলেন— ‘আমি বীরসা নই, আমি ধরতি আবা। এই পৃথিবী আমার সন্তান। আমি মুন্ডাদের নতুন ধর্ম শিখাব। আমি তোদের কোলে নিয়ে ভুলাব না। দুলাব না। আমি মুন্ডাদের মরতে আর মারতে শিখাব।’

কানে কানে এই খবর চলে গিয়েছিল রাঁচির ডেপুটি কমিশনারের কাছে। তিনি বীরসাকে ধরতে হুকুম দিয়েছিলেন। এদিকে মুন্ডারি ভাষায় অভিধান লিখে বিখ্যাত হয়ে ওঠা পাদ্রি হফম্যান ইংরেজ সরকারকে আভাস দেয় যে, বীরসা স্থির করেছে মিশনারিদের হত্যা করবে। শুরু হয় বীরসা মুন্ডাকে ধরার অভিযান।

রাতের আঁধারে ধরা হলো বীরসাকে। বীরসার বিচার হলো। একতরফা বিচার। ইংরেজ শাসকদের সাজানো বিচারে বীরসার দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হলো।

হাজারীবাগ জেলে বীরসা দীর্ঘ সময় থাকার পর ১৮৯৭ সালের ৩০ নভেম্বর সরকার তাঁকে মুক্তি দেয়। বীরসার মুক্তিতে মুন্ডাসহ আদিবাসী সমাজে উৎসবের আমেজ বসে। বীরসা আবার তাঁর নতুন ধর্মে সবাইকে দীক্ষিত করতে শুরু করে। বীরসার নতুন ধর্মে যারা যোগ দিল, তাদের ‘বীরসাইত’ বলা হলো। শুরু হলো বিদ্রোহের প্রস্তুতি। সভা হতে লাগল মুন্ডা এলাকার গ্রামে গ্রামে।

সেইসব সভায় বীরসা ব্রিটিশ রাজের লাল নিশান দেখিয়ে মুন্ডাদের বলে— ‘দিকুদের সঙ্গে যুদ্ধ হবে। এই নিশানের মতো লাল রক্ত বইবে মাটিতে।’

১৮৯৯ সালের ডিসেম্বরে সাহেবদের বড়দিন উৎসবের ওপর বীরসা নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সিংভূম ও রাঁচির ছয়টি থানায় ২৪ ডিসেম্বর বীরসাইতরা মিশনগুলোয় আক্রমণ করে। এ সময় বহু মিশন, গির্জায় আগুন জ্বলতে থাকে। বেশকিছু ইংরেজ সাহেব, মিশনারি, চৌকিদার আহত-নিহত হয়। ব্রিটিশ সরকারের টনক নড়ে।

সৈলরাকাব পাহাড়ে অভিযান চালায় ইংরেজ বাহিনী। স্ট্রিটফিল্ড বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান করে, কিন্তু বিদ্রোহীরা তার এ আহ্বানে সাড়া দেয়নি। শুরু হয় এক অসম যুদ্ধ।

আধুনিক অস্ত্রসশস্ত্রের কাছে তীরধনুক পেরে ওঠে না। বীরসা তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। বীরসাকে ধরার জন্য ৫০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

১৯০০ সালের ফেরুয়ারির ১৩ তারিখে বীরসা সেনত্রা জঙ্গলে ঘুমাচ্ছিলেন। বিশ্বস্ত সাথী ডোনকা মুন্ডার স্ত্রী সালী ভগবানের (বীরসা) জন্য ভাত রাঁধছিলেন। জঙ্গলের মাথার ওপর ধোঁয়া দেখে মনমারু ও জারকাইল গ্রামের মানুষজন সেখানে গিয়ে বীরসাকে অতর্কিতে ধরে ফেলে।

বীরসা সহ তাঁর সাথে থাকা ৫৮১ জন বীরসাইতের বিচার শুরু হয়। এর মধ্যে তিনজনের ফাঁসি এবং ৭৭ জনের দ্বীপান্তরসহ নানা মেয়াদে কারাদণ্ড হয়।

বীরসা মুন্ডা ১৯০০ সালের আজকের দিনে (৯ জুন) জেলের মধ্যেই মারা যায়।

More from CultureMore posts in Culture »
More from GeneralMore posts in General »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.