সুদীপা চৌধুরী: মেদিনীপুর, ১৫ জুলাই, ২০২৫। নদী বা সমুদ্র নিজ গুনে নিজ রূপে এমনিতেই সুন্দর। আর সেই সৌন্দর্য নিয়ে তারা যখন বর্ষার সাথে মিলিত হয়, তখন ভালোবাসার ছোঁয়ায় সেই সৌন্দর্য আরো অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়।
আমার ঘরে একটি অদ্ভুত মানুষ বাস করেন যার নাম ডাক্তার সুদীপ চৌধুরী যিনি ঝড় জল বৃষ্টি শীত গ্রীষ্ম, এমনকি করোনার সময়ও, যদি নিজের জ্বর হয়ে থাকে বা শরীর খারাপ থাকে তবুও চেম্বার কিন্তু বন্ধ করেন না, খুব জরুরি বা বিশেষ কারণ ছাড়া।
এই বর্ষার দিনে সকাল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি দেখে বারণ করেছিলাম অত দূরে চেম্বারে যেতে, কিন্তু কে কার কথা শোনে। ঠিক মোটরসাইকেল নিয়ে, সাথে রেইন কোট গায়ে চড়িয়ে রওনা হয়ে গেছেন। আর বেশিরভাগ চেম্বার তিনি মেদিনীপুরের রিমোট এরিয়াতে করেন।
মেদিনীপুর শহর থেকে ঝাড়গ্রাম অঞ্চলের মানিকপাড়া নামক একটি জায়গায় চেম্বার করতে যেতে ওনাকে পার হতে হয় কাঁসাই নদী। না নিজে সাঁতরে পার হন না। নৌকা করে পারাপার। তবে একা নয়,বাইক টাকেও নৌকার উপর চাপাতে হয়। আর সেই নৌকায় শুধু মানুষ নয় গরু-ছাগল আরো অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র শহর থেকে গ্রামে যায়। প্রত্যেক সপ্তাহে তিনি এই ভাবেই কঙ্কাবতী ঘাটে গিয়ে বাইক চাপিয়ে ওপারে যান, গ্রীষ্মকাল বা শীতকালে অতটা টেনশন থাকে না। কিন্তু বর্ষাকালে নদী যখন তার অপার সৌন্দর্য মেলে ধরেছে, জলের প্লাবনে এ কুল ও কুল ছাপিয়ে যাচ্ছে তখন একটু বারণ করার প্রয়োজন বোধ করি। কিন্তু পরে যখন বলে গ্রামের মানুষগুলো অপেক্ষা করে থাকবে, তখন চুপ থাকি।
সাথে সাথে এটাও ভাবি ও তো একা যাচ্ছে না আরও তো কত মানুষ যাচ্ছে ওই ভাবেই। শহরের মানুষদের কাছে বর্ষাটা রোমান্সের হলেও গ্রামের মানুষদের কাছে, বা অতি দরিদ্র মানুষদের কাছে বর্ষাটা তীব্র কষ্টের। প্রথম প্রথম আমি যখন শুনতাম বাইক, গরু ,ছাগল , মোষ নৌকার উপরে উঠে এদিক থেকে ওদিকে যায়, খুব অবাক হতাম এসব তো আগে শুনিনি। এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
ছবিগুলো তুলে আনে যখন নৌকার ঘাটে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ,কারণ নৌকা খুব একটা বেশি থাকে না। কত মানুষ কত ধরনের কষ্ট করে, জীবন যাপনের জন্য।আমি খালি গ্রামের মানুষ গুলোর কথা ভাবি এই বর্ষায় তাদের কত কষ্ট হয়। জীবনের জন্য এত যুদ্ধ অথচ মরণের পরে এসব কিছুই আর থাকে না। জীবনটা খুব অদ্ভুত, যতক্ষণ বেঁচে আছো শুধু সংগ্রাম শান্তির জন্য আর শান্তি যখন আসে তুমি আর বেঁচে নেই সেই সময়।।

















Be First to Comment