Last updated on September 22, 2022
জন্মদিনে স্মরণঃ কু সু ম কু মা রী দা শ
“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?
মুখে হাসি বুকে বল, তেজে ভরা মন
‘মানুষ হইতে হবে’– এই যার পণ…”
[ কুসুমকুমারী দাশ/ ‘আদর্শ ছেলে’ ]
বাবলু ভট্টাচার্য : বিখ্যাত এই কবিতার রচয়িতা বাঙালি মহিলা কবি, যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। কবির জ্যেষ্ঠ পুত্র জীবনানন্দ দাশ বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান এবং জনপ্রিয় কবি।
কুসুমকুমারীর পিতা চন্দ্রনাথ দাশ এবং মা ধনমাণি। চন্দ্রনাথ ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করায় গ্রামবাসীদের বিরোধিতায় গৈলা গ্রামের পৈতৃক ভিটা ছেড়ে বরিশালে চলে আসেন।
কুসুমকুমারী বরিশাল ব্রাহ্মসমাজ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের হাইস্কুলে ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর ছাত্রীদের অভাবের জন্য স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে কুসুমকুমারীকে তাঁর বাবা কলকাতায়, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে রেখে বেথুন স্কুলে ভর্তি করেন। একবছর পর ব্রাহ্মবালিকা বোর্ডিং-এ লাবণ্যপ্রভা বসুর তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করেন।
প্রবেশিকা শ্রেণীতে পড়ার সময়েই ১৮৯৪ সালে তাঁর বিয়ে হয় বরিশালের ব্রজমোহন ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সত্যানন্দ দাশের সঙ্গে। তাঁরই অনুপ্রেরণায় কুসুমকুমারী সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যান।
বরিশালের ব্রাহ্মসমাজের সভা-উৎসব-অনুষ্ঠানে কুসুমকুমারী যোগদান করতেন। তিনি ১৩১৯ থেকে ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই, বরিশাল ছাত্র সংঘের সপ্তাহকালব্যাপী মাঘোৎসবের মহিলা দিবসের উপাসনায় আচার্যের কাজ করেছেন।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে এমন একটি স্বাভাবিক মর্যাদার অধিকারিণী হয়েছিলেন যে, শুধু মহিলাদের উৎসবে নয়, ব্রাহ্মসমাজের সাধারণ সভাতেও তিনি আচার্যের কর্মভারের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ছোটবেলা থেকেই কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতেন কুসুমকুমারী। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, শিশুদের জন্য যে চিত্রশোভিত বর্ণশিক্ষার বই লিখেছিলেন, তার প্রথম ভাগে কুসুমকুমারী রচিত যুক্তাক্ষরবিহীন ছোট ছোট পদ্যাংশ ছিল।
তিনি সম্পাদক মনোমোহন চক্রবর্তীর অনুরোধে লিখেছেন ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকায়। তাঁর কিছু কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রবাসী’ ও ‘মুকুল’ পত্রিকায়।
তাঁর কবিতায় বার বার এসেছে ধর্ম, নীতিবোধ, দেশাত্মবোধ। কবিতা ‘মুকুল'(১৮৯৬) তাঁর কাব্যগ্রন্থ। পৌরাণিক আখ্যায়িকা নামের একটি গদ্যগ্রন্থও তিনি রচনা করেন
‘নারীত্বের আদর্শ’ এক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় কুসুমকুমারী স্বর্ণ পদকে ভূষিত হন। তার পুত্র কবি জীবনানন্দ লিখেছেন-
“সাহিত্য পড়ায় ও আলোচনায় মাকে বিশেষ অংশ নিতে দেখেছি। দেশি বিদেশি কোনো কোনো কবি ও ঔপন্যাসিকের কোথায় কি ভাল, কি বিশেষ তাঁরা দিয়ে গেছেন- এ সবের প্রায় প্রথম পাঠ তাঁর কাছ থেকে নিয়েছি। তাঁর স্বাভাবিক কবিমনকে তিনি শিক্ষিত ও স্বতন্ত্র করে তোলবার অবসর পেয়েছিলেন। কিন্তু বেশি কিছু লিখবার সুযোগ পেলেন না।… তখনকার দিনের সেই অস্বচ্ছল সংসারের একজন স্ত্রীলোকের পক্ষে শেষ পর্যন্ত সম্ভব হল না।”
১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর কলকাতার রাসবিহারী এভিনিউয়ের বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়।
কবি কুসুমকুমারী দাশ ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের আজকের দিনে (২১ সেপ্টেম্বর) বরিশালের বাখরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment