শ্রীজিৎ চট্টরাজ : কলকাতা, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২। ১৮৭৪ সালে রাজনারায়ণ বসু তাঁর সেকাল আর একাল গ্রন্থে লিখেছেন, বাঙালির নিজস্ব পোশাক বলে কিছু নেই । সেই একই কথা ১৮৬৪ সালে বলেছেন দ্বিজেন্দ্র লাল রায়। তিনি বলেন, বাঙালির কোনো নিজস্ব পোশাক নাই বলিলেই চলে। স্বভাবতই বাঙালি যেমন সর্বভূক, তেমন পোশাক পরিধানে আন্তর্জাতিক। প্রাচীন যুগে বাঙালি পুরুষেরা পড়ত সুতোবিহীন কাপড় দুকুল।মেয়েরাও কাঁচুলির মত পড়ত পাতলা দুকুল।
একটা সময় বাঙালি পাটের সুতো ও কার্পাস তুলো তৈরি করতে শিখল। স্বয়ং চানক্য বাংলার কার্পাস সুতোর প্রশংসা করে গেছেন । চিনা মশুক, কৌশ, পট্ট ও দুকুলেই সন্তুষ্ট ছিল বাঙালি নারী পুরুষ। ১৯ শতকের শেষ ও ২০ শতকের শুরু থেকে মুসলিম প্রভাবে বাংলায় পুরুষ পাঞ্জাবি পাজামা পড়তে শেখে। ঠাকুর পরিবারের জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর কাছে থেকে আধুনিক শাড়ি পড়া রপ্ত করে। এখন তো কথাই নেই। বাঙালি নারীর বিচরণ এখন বিশ্বজুড়ে। এহেন পোশাক নেই বাঙালির অঙ্গে ওঠেনি।
দিন দশকের অপেক্ষা। বাঙালি মাতবে শারদ উৎসবে। আম বাঙালির পুজোর বাজার প্রায় সারা। তবু পিছিয়ে নেই জোড়া বঙ্গতনয় শান্তনু গুহ ঠাকুরতা, সুমিত ঘোষ চৌধুরী । ফ্যাশন জগতের দুটি নির্ভরযোগ্য নাম। অনেকদিনের স্বপ্নের রূপ দিতে দক্ষিণ কলকাতার শিশু মঙ্গল হাসপাতালের বিপরীতে খুললেন সেল্ফ স্টোরি পোশাক বিপণি। নারী ও পুরুষের পোশাক সম্ভার নিয়ে। উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশের মডেল ও ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল। বাংলাদেশ ও বিশ্বের নানা প্রান্তে তিনি বিবি আপা নামে পরিচিত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী সায়ন্তনী গুহ ঠাকুরতা সহ বিশিষ্ট মডেলরা। সেল্ফ স্টোরির দুই কর্ণধার জানালেন, কাঁথাস্টিচের দুনিয়ায় আলাদা এক নৈপুণ্যের দাবিদার তাঁরা। পোশাকের জগতে ফিউশন তাঁদের স্বতন্ত্রতার পরিচয় দেয়।
অন্ধের কলমকারির সঙ্গে কাঁথা স্টিচ, বা রাজস্থানের বন্ধেজ, ভেজিটেবল ডাই ও গুজরাটি স্টিচ, মধ্যপ্রদেশের মাহেশ্বরির সঙ্গে হ্যান্ড ক্রাফটের কলমকারি, অ্যাপ্লিক, পিয়র কটন বা তসর। সঙ্গে পুরুষদের নান্দনিক পাঞ্জাবি, যা অনন্য ব্যক্তিত্বের সহায়ক হয়ে উঠবে এমন বিশাল সম্ভার। দাম মাত্র হাজার টাকা থেকে শুরু শেষ শাড়ি ৩০ হাজারে। ন্যায্য দাম আর রুচিসম্পন্ন পোশাক বিপণন আমাদের বৈশিষ্ট।
Be First to Comment