জন্মদিনে স্মরণঃ শ্যা ম ল মি ত্র
বাবলু ভট্টাচার্য : বাবা সাধন কুমার মিত্র চেয়েছিলেন ছেলে হোক তার মতো এক আদর্শ স্বনামধন্য চিকিৎসক। বাবার চাওয়ার আগেই সুরের সরগম ছুঁয়েছিল তার মন। তাই আর মানা হয়নি পিতৃ আদেশ।
শ্যামলের প্রাথমিক শিক্ষা স্থানীয় স্কুলে। হুগলি মহসিন কলেজ থেকে আই.এ এবং কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। তাঁর সঙ্গীত শিক্ষার গুরু সুধীরলাল চক্রবর্তী পরে শেখেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে।
পিতা-পুত্রের সম্পর্কে পড়েছিল অসম ভাঁজ। তবুও গানেই ভুবন ভরিয়েছিল সে। সিনেমার মতই অতীতের ছোট ছেলেটি একদিন হয়ে উঠেছিলেন বাংলা আধুনিক সঙ্গীতের অন্যতম সুরকার-গায়ক শ্যামল মিত্র।
আধুনিক আর সিনেমার গান বাদেও অতুলপ্রসাদী, রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং নজরুল গীতিতেও শ্যামল মিত্রের কীর্তি স্মরণীয়।
তবে, ঠিক সিনেমার মতো জীবন নয় শ্যামল মিত্রের। তার সাফল্য নিয়ে কোনও সংশয় না থাকলেও রয়েছে শিল্পী হিসেবে তার মূল্যায়ন নিয়ে। শ্যামল মিত্রের গাওয়া কিছু গান এখন সুলভ। কিন্তু সে তো হিমশৈলের উপরিভাগ মাত্র।
কেন? তথ্য বলছে, প্রায় পঞ্চাশটি ছবিতে শ্যামল মিত্র সুর দিয়েছিলেন এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন। শুরুটা হয়েছিল ১৯৫৩ সালে, ‘লাখ টাকা’ ছবিতে। এ ছবিতে শ্যামল মিত্রের সঙ্গে যৌথভাবে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন নীরেন লাহিড়ী। এ ছবিতে গান ছিল চারটি, ‘আলো যে জেগেছে চাঁদে’, ‘বলো প্রিয়তম বলো’, ‘অর্থের অর্থ অনর্থ ভাইরে’ এবং ‘সান্ত্বনা নাহি মানে মন’।
এ ভাবেই একের পরে এক ‘জয় মা কালী বোর্ডিং’, ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’, ‘ডেলি প্যাসেঞ্জার’, ‘ভ্রান্তি’, ‘সখের চোর’, ‘হাসি শুধু হাসি নয়’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’, ‘দেয়া নেয়া’, ‘সপ্তর্ষি’, ‘তৃষ্ণা’, ‘রাজকন্যা’, ‘খেয়া’, ‘হঠাৎ দেখা’, ‘গড় নাসিমপুর’, ‘বিবাহ বিভ্রাট’, ‘দুরন্ত চড়াই’, ‘সমান্তরাল’, ‘পদ্মগোলাপ’, ‘প্রতিবাদ’, ‘জননী’, ‘জীবন জিজ্ঞাসা’, ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’, ‘অন্ধ অতীত’, ‘বনপলাশীর পদাবলী’, ‘চিঠি’, ‘অমানুষ’, ‘ফুল ঠাকুরমা’, ‘আমি সে ও সখা’, ‘রাজবংশ’, ‘অজস্র ধন্যবাদ’, ‘জাল সন্ন্যাসী’, ‘আনন্দ আশ্রম’, ‘বন্দী’, ‘নিশান’, ‘ধনরাজ তামাং’, ‘প্রিয়তমা’, ‘খনা বরাহ’, ‘বন্দী বলাকা’, ‘কলঙ্কিনী’, ‘মায়ের আশীর্বাদ’, ‘মাটির স্বর্গ’, ‘সংসারের ইতিকথা’, ‘কেনারাম বেচারাম’, ‘মহামিলন’, ‘একাকী’…।
তালিকাটি একটু দীর্ঘ হলো। তার কারণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বা মান্না দে সম্পর্কে যেভাবে যতটা তথ্যায়ন এখনও পর্যন্ত হয়েছে, শ্যামল মিত্র সম্পর্কে তার প্রায় কিছুই হয়নি। এই ৪৬টি ছবিতে শ্যামল মিত্রের সুরে প্রায় দেড়শো গান আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সুরকারের সুরে নানা ছায়াছবিতে শ্যামল মিত্র বহু গান গেয়েছেন। তেমন ছায়াছবির সংখ্যা প্রায় ১০০। গড়ে একটি করে গান ধরলেও অন্য সুরকারের সুরে শ্যামল মিত্রের গাওয়া গানের সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১০০। সুতরাং শুধু ছায়াছবির গান হিসেব করলেই শ্যামল মিত্রের গাওয়া গানের সংখ্যা ১৫০-র মতো। অথচ তার মাত্র গোটা পঞ্চাশেক এখন বহু কষ্টে শ্রুতিসুলভ।
বেসিক রেকর্ডে শ্যামল মিত্র গেয়েছেন দেড়শোরও বেশি আধুনিক গান। তার গীতিকার-সুরকারের তালিকায় পবিত্র মিত্র, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, শ্রীশঙ্কর, শ্যামল গুপ্ত, সুধীন দাশগুপ্ত, সুধীরলাল চক্রবর্তী, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, হিমাংশু দত্ত, সলিল চৌধুরী, সুবীর হাজরা, শৈলেন রায়, পঙ্কজ মল্লিক, মোহিনী চৌধুরী, নিতাই ঘটক, দুর্গা সেন বিখ্যাত, স্বল্পখ্যাত নামগুলি এ রকমই। স্পষ্টত, বাংলা গানের কোন সুবর্ণযুগে শ্যামল মিত্রের সঙ্গীতজীবন জড়িয়ে আছে, বোঝাই যাচ্ছে।
১৯৮৭ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
শ্যামল মিত্র ১৯২৯ সালের আজকের দিনে (১৪ জানুয়ারি) পশ্চিমবঙ্গের নৈহাটিতে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment