শতরূপা সান্যাল : চলচ্চিত্র প্রযোজক ও বিশিষ্ট পরিচালক।
সেই রাতটাও ছিল আগের রাতগুলোর মত
উন্মত্ত জন্তুর দাঁতনখের আঁচড়কামড়
তারপর মেঝেয় নিরীহ সাপের মত বিষ ঢেলে দেবার পর
নেতিয়ে পরা পৌরুষ
পাশের ঘরের বিছানায় নিষ্পাপ শিশুরা
আয়নায় ধ্বস্ত বিক্ষত নিজেকে দেখে সেই রাতে মনে হল,
আর নয়।
রুপোলী রাংতার মোড়ক ছিঁড়ে একটার পর একটা
ঘুম পাড়ানি বিন্দু নেমে গেলো গলা বেয়ে
একটি করে বিন্দু নামাই আর দুচোখের ঢলে বুক ভাসে।
কাল ওরা যখন আমার অপ্রাণ শরীরটা কাটাছেঁড়া করবে
দেখবে, দুচোখের অশ্রুগ্রন্থি নি:শেষিত।
বাচ্চাদুটো খুব কাঁদবে। তারপর একদিন ভুলে যাবে
মা বলে কেউ ছিল।
মা বাবা ছুটে আসবে খবর পেয়ে।
মা জোরে কাঁদেনি কোনোদিন, এবার ডুকরে কাঁদবে।
বাবা বলবে, আমায় কেন বলিসনি তোর এত কষ্ট!
আমার বুকে কি জায়গা দিতাম না?
কতক্ষণ অতল শীতল অন্ধকারে ডুবে ছিলাম, জানিনা।
যেমন মনে নেই, কতকাল আমি মায়ের অন্ধকার জঠরে
রক্তের বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলাম।
বাচ্চাদের কলকাকলিতে চোখ খুললাম।
বিকেল হয়ে গেছে।
ইশান কোন থেকে ধেয়ে আসছে কালো মেঘ
ছাতে খেলছে ওরা, কচি কচি পায়ে ছুটে বেড়াচ্ছে রুমঝুম।
তিনতলার ছাদ লাগোয়া ঘরটা থেকে
আমি সব দেখতে পাচ্ছি।
দেখতে পাচ্ছি সর্বনাশ ছুটে আসছে ডাকাতের মত,
দস্যুর মত, শত্রু সেনাদলের মত..
শরীর চলছেনা।
আমি কি বেঁচে নেই? যেটা পড়ে আছে, সেটা কি আমার মৃতদেহ?
শনশন হাওয়ার দমকা ঢুকে পড়ল ঘরে,
আমার আঁচল দুলে উঠলো
ছুটে এলাম ছাদে, দুহাতে জাপটে তুলে নিলাম শিশুদের।
আমার অশ্রুগ্রন্থি শুকোয়নি।
এত জল কোথায় জমা রাখে , মন?
বুকের কাছে চড়ুই পাখির মত ধুকপুক করছে দুটো প্রাণ।
আমার আত্মা সত্ত্বা শরীর ছেনে মুক্তি পাওয়া দুটো জীবন!
সেই আমার যাত্রা শুরু
আত্মঘাতের বিপরীতে, ইশান কোন থেকে ধেয়ে আসা মেঘের আগে আগে
তেজী পক্ষীরাজের সওয়ার হয়েছি সেদিন
তারপর থেকে উড়াল ডানায় শুধুই জীবন
শুধুই মাধবী শুধুই করুণাময় ইচ্ছেরা।
হাত পা ছড়িয়ে, নীচে পড়ে আছে
আত্মঘাতী ছিন্নভিন্ন ক্ষতবিক্ষত অপমানগুলো।
Be First to Comment