Press "Enter" to skip to content

আজ কাটোয়া, হালি শহর, পশ্চিম বর্ধমানের পাল বাড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় ধুমধামের পালিত হচ্ছে কার্তিক পুজো তবে দক্ষিণ ভারতে কার্তিক পুজো অধিক জনপ্রিয়……। 

Spread the love

সঙ্গীতা চৌধুরী : কলকাতা, ১৭ নভেম্বর, ২০২২। আজ বহু জায়গায় আড়ম্বরের সঙ্গে কার্তিক পুজো পালিত হচ্ছে। দুর্গাপুজোর কিছুদিন পরই কার্তিক মাসের সংক্রান্তিতে কার্তিক পুজো অনুষ্ঠিত হয়। কথিত আছে, কার্তিক হলেন হিন্দু যুদ্ধদেবতা। তিনি পরম পুরুষ শিব ও আদি পরাশক্তি পার্বতীর সন্তান। জানা যায় প্রাচীন ভারতে সর্বত্র কার্তিক পুজো প্রচলিত ছিল। কোথাও তিনি স্কন্দ, কোথাও মুরুগন, আবার কোথাও বা সুব্রক্ষণ্য নামে পরিচিত। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ ভারতে কার্তিক পুজো অধিক জনপ্রিয়। শুধুমাত্র ভারতেই নয়, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, মরিশাস প্রভৃতি যে সকল স্থানে তামিল জনগোষ্ঠীর প্রভাব বিদ্যমান সেখানেই মুরুগানের পুজো প্রচলিত। অন্যান্য হিন্দু দেবদেবীর মতো কার্তিকও একাধিক নামে অভিহিত হন। যেমন- কৃত্তিকাসুত, আম্বিকেয়, নমুচি, অগ্নিজ, বাহুলেয়, বিশাখ, দেবসেনাপতি, কুমার ষড়যন্ত্র ইত্যাদি। জানা যায় পুরান অনুসারে কার্তিকের গায়ের রঙ হলুদ বর্ণের। তিনি চির কুমার। তবে পুরান মতে কোথাও কোথাও তার বিবাহের উল্লেখ পাওয়া যায়। কার্তিকের বাহন হল ময়ূর। পশ্চিমবঙ্গের কিছু স্থানে অতি সমারোহের সঙ্গে এই পুজো হয়। এছাড়াও বাংলার গনিকা সমাজে কার্তিক পুজো বিশেষ জনপ্রিয়।

পুরানে কথিত আছে যে, পরাক্রমশালী যোদ্ধা কার্তিকের জন্ম হয়েছিল ব্রক্ষ্মার বরে মহাবলী তারকাসুরের নিধনের জন্যই। তারকাসুরের অত্যাচারে দেবলোক খুব অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল, কোন দেবতার পক্ষেই তাকে বধ করা সম্ভবপর হয়ে উঠেছিল না। ঠিক সেই সময়ই দৈববলে প্রাপ্ত অজেয় শক্তির অধিকারী এই দেবশিশু কার্তিক তারকাসুরকে বধ করেছিলেন। তাই কার্তিক ঠাকুর দেব সেনাপতি হিসেবে পরিচিত। তাকে রক্ষাকর্তা হিসেবে অনেকেই পুজো করেন। তাছাড়া কার্তিক নম্র ও বিনয় স্বভাবের দেবতা। যেহেতু এই দেবতা সুদর্শন ও বলিষ্ঠ চেহারার সেজন্য হিন্দু ধর্মের মেয়েরা কার্তিকের মত নম্র , বিনয়ী এবং সুদর্শন পুরুষকে নিজেদের স্বামী হিসেবে পেতে চান।

কার্তিক হিন্দুদের উর্বরতার দেবতা। এই পুজোর মাধ্যমে দম্পতিরা সন্তান প্রার্থনা করেন। কার্তিকের চেহারা অত্যন্ত সুন্দর বলিষ্ঠ তাই কার্তিক পুজোর মাধ্যমে দম্পতিরা সুন্দর ও বলিষ্ঠ চেহারার সন্তান প্রার্থনা করে থাকেন। কথিত আছে ব্রক্ষ্মা ও সাবিত্রীর মেয়ে দেবী ষষ্ঠী পুরান মতে কার্তিকের স্ত্রী। কার্তিক ঠাকুরের সঙ্গে ছয় সংখ্যা জড়িয়ে আছে। সেজন্য হয়ত স্ত্রী ষষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর মিল। তিনি বাচ্চা বড় না হওয়া অবধি বিপদ থেকে তাদের রক্ষা করেন। মানুষ মনে করেন তাঁর আশীর্বাদ পেলে সন্তান লাভ ও ধনলাভ হয়। সেজন্য নিঃসন্তান দম্পতির বাড়ির সামনে কার্তিক ঠাকুরের মূর্তি ফেলা হয়। লোকাচার হিসেবে পাড়ার অল্প বয়সী ছেলেরা যে সকল নিঃসন্তান দম্পতি সন্তান কামনা করেন তাদের বাড়িতে রাতের অন্ধকারে কার্তিক ঠাকুরের মূর্তি লুকিয়ে রেখে আসে। পরদিন ভোরে সেই দম্পতি কার্তিক পুজোর আয়োজন শুরু করেন। তাদের মনস্কামনা পূরণ হওয়ার সঙ্গেই সঙ্গেই পাড়ার ছেলেদের নিমন্ত্রণ করা হয় ঐ বাড়িতে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। আজও কোথাও কোথাও এধরনের ঘটনা বেশ প্রচলিত।

পশ্চিমবঙ্গে কাটোয়ার কার্তিক পুজো বিখ্যাত বলেই এখানে এক পুজোর সঙ্গে অন্য পুজোর প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কার্তিক লড়াই বলে। কার্তিক পুজোর দিন কাটোয়ার রাস্তায় এক বিশাল মিছিল বের হয়। সব পুজো – মণ্ডপের দলবল তাদের ঠাকুর নিয়ে শোভাযাত্রায় যায়। কার ঠাকুর আগে যাবে তাই নিয়ে লড়াই চলে। এ লড়াই রীতিমত লাঠিসোটা, এমন কি তলোয়ার নিয়েও চলে। হালি শহরের ‘জ্যাংড়া কার্তিক ও ‘ধুমো কার্তিক ‘ পুজোও খুব বিখ্যাত। প্রাচীন বর্ধমান তথা আজকের পশ্চিম বর্ধমান জেলার গৌরবাজার গ্রামে বিগত ১৬৬ বছর ধরে পাল বাড়িতে তিন কার্তিক পুজো হচ্ছে। এই পুজোর বিশেষত্ব হল তিনটি কার্তিক – বড় কার্তিক, মেজো কার্তিক ও ছোট কার্তিক। এই পুজোর পেছনে বহুকাল আগে এই জমিদার বাড়ির ভাইদের সন্তান লাভের গল্প জড়িয়ে আছে।


দক্ষিণ ভারতে কার্তিক ঠাকুরের খুব জনপ্রিয়তার কারনে সেখানে তাঁর অসংখ্য মন্দির আছে। তবে তামিলনাড়ুর ৬ টি মন্দির খুব পবিত্র। সেগুলি হল – (১) স্বামীমালাই মুরুগান মন্দির। (২) পালানী মুরুগান মন্দির,  (৩) থিরুচেন্দুর মুরুগান মন্দির, (৪) থিরুপ্পারামকুমারাম মন্দির, (৫) থিরুথানি মুরুগান মন্দির, (৬) পাঝামুদিরচোলাই মুরুগান মন্দির।

কৌমারাম একটি সম্প্রদায়। যাদের বিশেষ করে দেখা যায় দক্ষিণ ভারত ও শ্রীলঙ্কার তামিল, কন্নড়, বেদ্দাদের মধ্যে। তাদের কাছে কার্তিক হলেন পরমেশ্বর। তারা ভগবান কার্তিকেয়কে ত্রিমূর্তির চেয়েও শ্রেষ্ঠ মনে করেন। তাই শুধুমাত্র তাঁর সেবা করার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করে।

বেলেঘাটা য় সুবর্ণা দেবনাথ এর বাড়ির জোড়া কার্তিক পূজো।

আগের  তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে কার্তিক পুজোর জনপ্রিয়তা কিছুটা কমলেও এখনো কিছু জায়গাতে ধুমধাম করে এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়। আশ্বিন মাসে দুর্গা পুজোর সময়েও কার্তিক ঠাকুরের পুজো করা হয়। আবার কলকাতাতেও বর্তমানে কার্তিক ঠাকুরের মন্দির আছে। দেবতাদের সেনাপতি হিসেবে তিনি অসীম শক্তিধর দেবতা, এজন্য তাঁকে রক্ষাকর্তা হিসেবে অনেকেই পুজো করেন। তবে যে কারনেই পুজো করা হোক না কেন নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁকে স্মরণ করলে তিনি সকলের মনস্কামনা পূরন করবেন বলেই মানুষের বিশ্বাস।

প্রচ্ছদ ছবি – সুবর্ণা দেবনাথ এর বেলেঘাটা বাড়ির কার্তিক পূজো উদযাপনের।

More from CultureMore posts in Culture »
More from GeneralMore posts in General »
More from InternationalMore posts in International »
More from SocialMore posts in Social »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.