বাবলু ভট্টাচার্য : দেড়শো বছর পরও বিশ্ব চেনাচ্ছে ‘ক্যাপিটাল’৷ পুঁজিবাদী পদ্ধতি এবং সম্পর্কের বহিরঙ্গের আবরণ ছিঁড়ে ফেলা যুগান্তকারী রচনা প্রকাশের ১৫৪ বছর পূর্ণ হলো।
১৮৬৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছিল মার্কসের ‘ক্যাপিটাল : ক্রিটিক অফ পলিটিক্যাল ইকনমি’; ‘ডাস ক্যাপিটাল’-এর প্রথম খণ্ড। প্রথম ছাপা হয়েছিল এক হাজার কপি। শেষ পর্যন্ত মোট তিন খণ্ডে ক্যাপিটাল বিক্রি হয়েছে কয়েক কোটি। যত বিক্রি হয়েছে তার থেকে বহু গুণ বেশি তার ঐতিহাসিক প্রভাব।
মার্কসের জীবদ্দশায় শুধু প্রথম খণ্ডই প্রকাশিত হয়েছিল। অভিন্নহৃদয় বন্ধু ও কমরেড উইলহেলম উল্ফকে উৎসর্গ করা হয়েছিল এই খণ্ড। মার্কসের জীবনাবসানের পরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড নোট থেকে বইয়ের আকার দেন ফ্রেডরিক এঙ্গেলস।
ক্যাপিটালের প্রথম ইংরাজি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৮৭ সালে। পরে পৃথিবীর বহু ভাষায় তা অনূদিত হয়েছে।
প্রথম খণ্ড দিয়েই সমগ্র ক্যাপিটালকে বুঝতে যাওয়া উচিত নয় বলেই মার্কস-চিন্তার গভীর চর্চাকারীদের অনেকের মত। সাধারণভাবে বলা হয়, প্রথম খণ্ডে মার্কস দেখিয়েছিলেন পুঁজিবাদী আহরণ, আত্মসাৎ ও উৎপাদনের চরিত্র। দ্বিতীয় খণ্ডে পুঁজির সঞ্চরণশীলতা ও বাজারে তার মূল্য সৃষ্টি। তৃতীয় খণ্ডে উদ্বৃত্ত মূল্যের নানা রূপ ও মুনাফা অর্জনের বিবিধ চরিত্র।
মার্কস দেখিয়েছিলেন পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা শ্রমিককে বিচ্ছিন্ন, ভগ্ন, টুকরো মানুষে পরিণত করে। তাকে যন্ত্রের দাসে পরিণত করে। তার শ্রমের উপাদানকে নিপীড়নে রূপান্তরিত করে। শেষ পর্যন্ত দারিদ্রের, অভাবের সঞ্চয় সম্পদের সঞ্চয়ের জন্য অনিবার্য উপাদান হয়ে ওঠে। শ্রম ও শ্রমজীবীকে শোষণের চাকায় পিষ্ট না করে পুঁজির মুনাফা অর্জন হতে পারে না।
মার্কস ক্যাপিটালে দেখিয়েছিলেন শোষণ নিহিত থাকে উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্যেই, বাজারে নয়। বাজারে শ্রমিকরা প্রতারিত হয় বলে উদ্বৃত্ত মূল্য তৈরি হয় না, তৈরি হয় উৎপাদনের প্রক্রিয়াতেই।
বিশ্ব ধনতন্ত্রের চরিত্র ও সংকট বুঝতে মার্কসের বিশ্লেষণের শরণাপন্ন হচ্ছেন প্রথাগত অর্থনীতিবিদরাও। রাস্তার লড়াইয়ে বারংবার উদ্ধৃত হচ্ছে ক্যাপিটালের আলোড়ন-তোলা সমস্ত বাক্যবন্ধ।
আজকের দিনে কার্ল মার্কসের ‘ডাস ক্যাপিটাল’ (পুঁজি) প্রকাশিত হয়েছিল
Be First to Comment