Press "Enter" to skip to content

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ১৮৯২ সালে কলকাতায় মাত্র ৭০০ টাকা বিনিয়োগ করে গড়ে তুললেন বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড। বর্তমানে বাংলাদেশে খুলনা টেক্সটাইল মিলস এটি তাঁর হাতেই গড়া….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ আ চা র্য প্র ফু ল্ল চ ন্দ্র রা য়

“প্রেম রসায়নে ওগো সর্বজনপ্রিয়,
করিলে বিশ্বের জনে আপন আত্মীয়।”

[ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ]

বাবলু ভট্টাচার্য : বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার সুফল তিনি পৌঁছে দিয়েছিলেন গণমানুষের মাঝে। তাঁর জীবনের সবটুকু জুড়েই ছিল এদেশের মানুষ। আমরা আজ যে সমবায়ের কথা বলি তারও জনক ছিলেন তিনি।

একসময় তার মাসিক আয় ছিল পৌনে দুই হাজার টাকা। অথচ তিনি তার সকালের খাবারের জন্য বরাদ্দ রাখতেন ১ পয়সা। মাসিক আয় থেকে নিজের জন্য মাত্র ৪০ টাকা রেখে দান করে দিতেন সব।

১৯২৬-১৯৩৬ সাল পর্যন্ত এই দশ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি একাই দান করেছিলেন ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

আজ যে আমরা মারকিউরাস নাইট্রাইড ব্যবহার করি তার জনকও তিনি, কেবল তাই নয় ১২টি যৌগিক লবণ এবং ৫টি থায়োএস্টারের আবিষ্কারক তিনি। তাঁর হাতেই সৃষ্টি হয়েছিল ভারতবর্ষের প্রথম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি।

তিনি কিংবদন্তী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়।

তাঁর বাবা হরিশচন্দ্র রায় ছিলেন স্থানীয় জমিদার। বনেদি পরিবারের সন্তান প্রফুল্লচন্দ্র রায় ছোটবেলা থেকেই ছিলেন সকল বিষয়ে তুখোড় মেধাবী। বাবার প্রতিষ্ঠিত স্কুলেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সূচনা। তারপর কলকাতার বিখ্যাত হেয়ার স্কুল। সালটা ১৮৭২। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে নিজ গ্রামে ফিরিয়ে আনা হয়।

হরিশচন্দ্র রায়ের ছিল বিশাল লাইব্রেরি। সাহিত্য, রাজনীতি, বিজ্ঞান, ইতিহাস এমন কোনো বিষয় নেই যার বই সেই লাইব্রেরিতে ছিল না। গ্রামে থাকাকালীন এই সময়টাতেই তাঁর জীবনে জ্ঞান বিকাশের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছিল।

পরবর্তীতে কলকাতার অ্যালবার্ট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে এফ এ পরীক্ষায় পাশের পর প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন বিএ’তে। এক বছরের মধ্যেই প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।

বিশ্বখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বিএসসি করার পর ডিএসসি ডিগ্রি লাভ। সেখানে তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল কপার ম্যাগনেসিয়াম শ্রেণির সম্মিলিত সংযুক্তি পর্যবেক্ষণ। দুই বছরের কঠোর পরিশ্রমে রাত দিন খেটে ডি এসসি ও সবশেষে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন।

তাঁর ওই গবেষণাপত্রটি তৎকালীন সময়ে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ গবেষণাপত্র হিসেবে মনোনীত হয়েছিল। আর তারই স্বরূপ পেয়েছিলেন হোপ প্রাইজে।

১৮৮৮ সালে প্রফুল্লচন্দ্র দেশে ফিরে যোগ দিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে।

ঠিক এমন সময়ই তিনি দেখলেন বাঙালিদের ব্যবসা নিয়ে হীনমন্যতা। ভাবলেন দেশিয় সম্পদ আর দেশিয় শিল্প বিপ্লবের কথা। তাই ১৮৯২ সালে কলকাতায় মাত্র ৭০০ টাকা বিনিয়োগ করে গড়ে তুললেন বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড। বর্তমান যে খুলনা টেক্সটাইল মিলস এটি তাঁর হাতেই গড়া।

তখন বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজে বিজ্ঞান ক্লাসে ইংরেজিতে পাঠদান করতেন শিক্ষকেরা। একমাত্র তিনিই পাঠদান করাতেন বাংলায়। বাংলা ভাষা ছিল তাঁর অস্তিত্বের সাথে মিশে। প্রতিটি ছাত্রের প্রতি ছিলেন ভীষণ যত্নবান।

১৯২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় সমগ্র বাংলা ঘুরে ঘুরে অর্থসংগ্রহ এবং ত্রাণকার্য করেছিলেন নিজে। শুধু ১৯২২ নয়, তার আগের বছর চতুর্থ বার ইংল্যান্ড ভ্রমণ শেষে তিনি দেশে ফিরে খুলনার সুন্দরবন অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের খবর পেয়েই ছুটে গিয়েছিলেন।

তাঁর ছাত্ররাও ছিলেন জগদ্বিখ্যাত। সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, নীলরতন ধর, পুলিন বিহারী সরকার, মেঘনাদ সাহা, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, বিজ্ঞানী কুদরত-ই খুদা, হেমেন্দ্র কুমার সেন, জ্ঞানেন্দ্র নাথ রায়।

প্রফুল্লচন্দ্র রায় থাকতেন কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের দোতলার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের একটি অতি সাধারণ ঘরে। আসবাবপত্রের মধ্যে ছিল একটি খাটিয়া, দুটি চেয়ার, ছোট একটি খাবার টেবিল, একটি পড়ার টেবিল ও জামাকাপড় রাখার একটি সস্তা আলনা। এই ছিল তাঁর আসবাবপত্র।

তাঁর পরনের কাপড় ছিল মোটা খোটা ধুতি, চাদর, গেঞ্জি অথবা গায়ে একটি কোট। খাওয়া দাওয়াও ছিল একবারেই সাধারণ।

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় একাধারে ছিলেন একজন কবিও। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর তিনি রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছিলেন বিখ্যাত কবিতা রবি-প্রয়াণ। রবীন্দ্রনাথের জন্মের মাত্র তিন মাস পরে জন্ম নিয়েছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র রায়। তাঁর মৃত্যু রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর তিন বছর পরে।

ব্রিটিশ গোয়েন্দা দপ্তরে প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের নাম লেখা ছিল ‘বিজ্ঞানী বেশে বিপ্লবী’। স্বদেশি আন্দোলনের প্রথম পর্যায় থেকেই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। ১৯০৫ এ বঙ্গভঙ্গের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যখন বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন গোপনে অস্ত্র ক্রয়ের জন্য তিনি বিপ্লবীদের অর্থ সাহায্য করতেন।

১৯১৯ সালে প্রফুল্লচন্দ্র নাইট উপাধি লাভ করেন।

১৬ জুন ১৯৪৪ সালে ৮২ বছর বয়সে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

স্যার আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ১৮৬১ সালের আজকের দিনে (২ আগস্ট) খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাডুলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

More from EducationMore posts in Education »
More from InternationalMore posts in International »
More from ScienceMore posts in Science »
More from TechnologyMore posts in Technology »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.