Press "Enter" to skip to content

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ছিলেন জগদীশচন্দ্র বসুর সহকর্মী, বেঙ্গল কেমিক্যালের প্রতিষ্ঠাতা এবং অন্যদিকে মার্কিউরাস নাইট্রাইট-এর আবিষ্কারক…..।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়

বাবলু ভট্টাচার্য : শুধু বিজ্ঞানী বললে তার সম্পর্কে কম বলা হবে। একদিকে তিনি ছিলেন জগদীশচন্দ্র বসুর সহকর্মী, বেঙ্গল কেমিক্যালের প্রতিষ্ঠাতা এবং অন্যদিকে মার্কিউরাস নাইট্রাইট-এর আবিষ্কারক। তিনি বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়।

পিতা হরিশচন্দ্র রায় ছিলেন স্থানীয় একজন জমিদার। প্রফুল্লচন্দ্র ১৮৭২ সালে কলকাতার হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন, কিন্তু রক্ত আমাশা হবার কারণে তিনি কলকাতায় থেকে পড়াশোনা করতে পারলেন না, বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন নিজের গ্রামে।

এরপর তিনি মেট্রোপলিটন কলেজে ভর্তি হন। ১৮৮১ সালে সেখান থেকে এফএ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএ ভর্তি হন। প্রেসিডেন্সি থেকে গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএসসি পাশ করেন এবং ডিএসসি ডিগ্রী লাভের জন্য গবেষণা শুরু করেন। তার সেই গবেষণার বিষয় ছিল কপার ম্যাগনেসিয়াম শ্রেণীর সম্মিলিত সংযুক্তি পর্যবেক্ষণ।

দুই বছরের কঠোর সাধনায় তিনি এই গবেষণা সমাপ্ত করেন এবং পিএইচডি ও ডিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। এমনকি তার এই গবেষণাপত্রটি শ্রেষ্ঠ মনোনীত হওয়ায় তাকে হোপ প্রাইজে ভূষিত করা হয়।

বিজ্ঞান আর সাহিত্যে তার ছিল গভীর আগ্রহ। শেক্সপিয়র ছিলেন তার প্রিয় নাট্যকার। হ্যামলেট নাটক গোটাটা তিনি মুখস্থ বলতে পারতেন। এই সময় বহিরাগত ছাত্র হিসেবে যেতেন প্রেসিডেন্সি কলেজে, সেখানে অধ্যাপক আলেকজাণ্ডার পেডলারের ক্লাসে মুগ্ধ হয়ে তিনি রসায়নের গবেষক হবার সিদ্ধান্ত নেন।

ঘি সরষের তেল ও বিভিন্ন ভেষজ উপাদান নিয়েই তিনি প্রথম গবেষণা শুরু করেন। ১৮৯৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে তার প্রথম গবেষণা পত্রের নাম ছিল– ‘অন দ্য কেমিক্যাল একজামিনেশন অফ সার্টেন ইন্ডিয়ান ফুড স্টাফস, পার্ট ওয়ান, ফ্যাটস অ্যাণ্ড অয়েলস’। পরবর্তীকালে প্রফুল্লচন্দ্রের গবেষণার মূল বিষয় ছিল নাইট্রাইট যৌগ নিয়ে কাজ— যা তাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়।

১৯১৯ ও ১৯২০ সালে পর পর দুই বছর অনাবৃষ্টির কারণে সমগ্র খুলনা এলাকায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ১৯২১ সালে চতুর্থবার বিলাত থেকে আসার পর গরমের ছুটিতে গ্রামে বেড়াতে এসে তিনি দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেন। জেলা কালেক্টরেট (বর্তমানে জেলা প্রশাসক) এই দুর্ভিক্ষের কথা স্বীকার করেন নি। মানুষকে বাঁচাতে এই মহান ব্যক্তির নেতৃত্বে গড়ে ওঠে রিলিফ কমিটি। ১৯২২ সালে উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ বন্যা হলে সেখানেও ছুটে যান তিনি।

প্রফুল্লচন্দ্রের জীবন ছিল অনাড়ম্বর। ছাত্রদের সঙ্গে ছিল নিবিড় বন্ধুত্বের সম্পর্ক। জাতীয় শিক্ষা ও শিল্পোদ্যোগের প্রতি ছিল অকৃপণ সহায়তা। মানবকল্যাণে নিজের অর্জিত সব অর্থ অকাতরে দান করেছেন।

৭৫ বছর বয়সে তিনি পালিত অধ্যাপক হিসেবে অবসর নেওয়ার পরও আট বছর বেঁচে ছিলেন। সেই সময়ও কেটেছে বিজ্ঞান কলেজের ওই ছোট কক্ষে— যেখানে ছিল একটি খাটিয়া, দুটি চেয়ার, খাবার ছোট একটি টেবিল, একটি পড়ার টেবিল ও একটি আলনা।

সারা জীবনে তিনি বহু সম্মানেই ভূষিত হয়েছেন, তার মধ্যে ১৯১১ সালে কলকাতা বিশ্ববাদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হিসেবে তৃতীয়বারের মতো তিনি ইংল্যান্ড যান এবং সেখান থেকেই সি আই ই লাভ করেন।

১৯১১ সালে ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী দেয়। এছাড়া ১৯৩৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরবর্তীকালে মহীশুর ও বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তিনি ডক্টরেট পান।

১৯১৯ সালে তিনি নাইট উপাধি লাভ করেন।

১৬ জুন ১৯৪৪ সালে ৮২ বছর বয়সে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ১৮৬১ সালের আজকের দিনে (২ আগস্ট) খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাডুলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »
More from SocialMore posts in Social »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.