Press "Enter" to skip to content

‘আইনজীবী’ মন্ত্রী সাধন পান্ডের মৃত্যুতে শোকাহত রাজ্যের আইনজীবী মহল….।

Spread the love

মোল্লা জসিমউদ্দিন : কলকাতা, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২।দীর্ঘ রোগভোগের পর ফুসফুস জনিত রোগে মুম্বাইয়ের এক হাসপাতালে মারা গেছেন রাজ্যের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পান্ডে(৭১)। আজ অর্থাৎ সোমবার সকালে প্রয়াত মন্ত্রীর নিথর দেহ রাখা হলো পিস হাভেনে। এরপর কাঁকুরগাছির তাঁর বাড়িতে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়, তারপর বুড়োতলা তৃণমূল অফিস সহ ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরে মন্ত্রীর দেহ নিয়ে যাওয়া হবে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবার জন্য। তিনি যেমন একাধারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় তিনবারের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরে মন্ত্রী ছিলেন। ঠিক তেমনি টানা ৯ বারের বিধায়ক ছিলেন প্রয়াত সাধন পান্ডে। প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি ৯ বারের বিধায়ক থাকলেও টানা জয়ের রেকর্ড শুধুমাত্র রয়েছে সাধন পান্ডের রাজনৈতিক ইতিহাসে। বড়তলা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৬ বার এবং মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রে ৩ বার বিধায়ক হিসাবে জিতেছিলেন তিনি। যা গিনেস রেকর্ড বুকে নথিভুক্ত। রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরে মন্ত্রী হিসাবে জেলা তো বটেই মহকুমাস্তরে আদালতে স্বতন্ত্র এজলাস গড়ার নৈপুণ্যতা তিনি দেখিয়ে গেছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী হিসাবে। ঠিক যেমনই প্রয়াত অজিত পাঁজা কংগ্রেস জমানায় রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী হিসাবে পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। প্রয়াত সাধন পান্ডে রাজনৈতিক নেতা হিসাবে রাজ্যের আলোচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। টানা ৯ বারের বিধায়ক তথা তিনবার রাজ্যের একই দপ্তরের ক্যাবিনেট মন্ত্রী। তবে তাঁর এক অরাজনৈতিক পরিচয় ছিল। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে তিন বছরের আইনী ডিগ্রি করেছিলেন। প্রথম দিকে ব্যাংকশাল আদালতে আইনজীবী হিসাবে পেশাগত ভাবে যুক্ত ছিলেন। পরে বিখ্যাত ব্যারিস্টার পিকে রায় ( ব্যারিস্টার প্রমিত কুমার রায়ের বাবা) এর জুনিয়র ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টে।কলকাতা হাইকোর্টে একসময় ওকালতি করতে দেখা যেত তাঁকে। প্রয়াত মন্ত্রী সাধন পান্ডের ভাগ্নে তথা কলকাতা হাইকোর্টের স্বনামধন্য আইনজীবী সুদীপ্ত পান্ডা জানান – ” অসহায় মানুষদের পাশে আইনি সাহায্য সহ সবধরনের সহযোগিতা করে যেতেন। “বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের পদাধিকারী আনসার মন্ডল বলেন – ” একদা আইনজীবী সহকর্মী কে হারিয়ে শোকাহত। মানুষ হিসাবে নিতান্ত সাধারণ জীবনযাপনে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি”।

সম্প্রতি গত ৪ দিন ধরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল বলে জানা গিয়েছিল। গত বছর ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে মানিকতলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। গতকাল তাঁর মেয়ের একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ঘিরে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। দীর্ঘ এক বছরের লড়াই থেমে গেল। মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। গতকাল বিকেলেই তাঁর মৃতদেহ কলকাতায় আনা হয়। রবিবার তাঁর মৃতদেহ রাখা থাকে   পিস ওয়ার্ল্ডে। তবে আজ তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হলো। গত রবিবার সকালেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  টুইটে শোকবার্তা জ্ঞাপন করেছেন। তিনি টুইট বার্তায় লিখেছেন, “আমাদের বর্ষীয়ান সহকর্মী, দলের নেতা এবং ক্যাবিনেট মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে আজ সকালে মুম্বইয়ে মারা গিয়েছেন। ওঁর সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আমার।  তাঁর পরিবার, বন্ধুবান্ধব, অনুগামীদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা।” রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রীর মৃত্যুতে কলকাতা সহ রাজ্যের সমস্ত সরকারি অফিসের জাতীয় পতাকা আজ অর্ধনমিত থাকলো। তাঁর রাজনৈতিক কর্মজীবন কংগ্রেসের হাত দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীকালে ঘাসফুল শিবিরে যোগদান করেছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সালে তিনি কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে কলকাতা উত্তর-পূর্ব লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে লড়েছিলেন। তিনি কংগ্রেসের দলের বিশ্বস্ত নেতা ছিলেন। ২০১১ সাল অবধি বড়তলা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ছয়বার বিধায়ক হয়েছিলেন। ২০১১ সালে হাত ছেড়ে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন সাধন পাণ্ডে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি তৃণমূলের টিকিটে মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে জয়ী হন। ২০১১ সাল থেকেই মমতার ক্যাবিনেটে নিজের উপস্থিতি বজায় রেখেছিলেন তিনি। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের সময় নিজে প্রচারে অংশগ্রহণ করেছিলেন। নির্বাচনে জয়ী হয়ে  তিনি ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তবে বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাজনীতির ময়দানে সেইভাবে দেখা যায়নি তাকে। অসুস্থতার কারণে রাজনীতির ময়দান থেকে অনেকদিন আগে থেকেই বিচ্ছিন্ন ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক সাধন পাণ্ডে।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.