অঙ্গনা চট্টোপাধ্যায় : ১৮, ডিসেম্বর, ২০২০। “আমি যে রাজা থেকে ফকির হয়ে গেলাম “চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে নাটকের এই সংলাপ পাঠ করতে লাগলেন বিমল বাবু, বছর চল্লিশের বিমল বসু ছোটো একটি নাটকের গোষ্ঠীতে নাটক করে সংসার চালান, সেই নাটক করে খুবই কম অর্থ উপার্জন করেন, দুই মেয়ে, স্ত্রী আর বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে তার সংসার, বিয়ের পর থেকে তার চাকরি করার কোনোদিনই মতিগতি ছিলো না, শিল্প স্বত্তায় পরিপূর্ণ বিমলবাবু তাই নাটকের পথ বেছে নিয়েছে, ছোটবেলায় স্কুলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নানা চরিত্রে অভিনয় করে তার ছোটবেলা থেকেই শখ ছিলো বড়ো অভিনেতা হওয়ার, অভিনেতা হওয়ার সর্বপ্রকার গুন থাকলেও ভালো মঞ্চ না পাওয়ায় তার ভাগ্য থমকে গেছে, ঘরের প্রতিটা জিনিসে যেনো অভাব মাখানো.. যে শিল্প কী ভরসা করে সংসারের এতো গুলো মানুষ বেঁচে আছে, সেই মানুষ গুলোর দিকে যেনো কষ্টে আর তাকাতে পারেনা বিমলবাবুর স্ত্রী ” আর পাঁচটা লোকের মতো আপিস করে অর্থ উপার্জন করো এতো দিন তো অনেক রঙ্গই করলে বলি তাতে লাভ টা কি হলো ” উনুন খোঁচাতে দিতে দিতে বিমল বাবুর স্ত্রী গজরাতে লাগলেন, বিমল বাবু চিরকালই প্রয়োজনের থেকে নিজের শখ কেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন… প্রতিদিন পাড়ার বিল্টুর দোকান থেকে রিহার্সাল শেষের পর একটা লটারির টিকিট কিনে বাড়ি ফেরেন, যদি ভাগ্য পরিবর্তন হয়, আর রোজ সকালে অধীর আগ্রহে খবরের কাগজের পাতা খুলে সংখ্যা মেলাতে বসেন, কিন্তু ভাগ্য কোনোদিনই তার সাথ দেয় না তবুও হাল সে ছাড়ে নি… এটা যেনো তার একটা নেশা, ভাগ্যের দরবারে সৌভাগ্যের আশায় যেনো তার দিন অতিবাহিত হচ্ছে… আগামী সপ্তাহে তার একটি নাটক অনুষ্ঠান আছে, জোর কদমে চলছে রিহার্সাল, নাটকের সংলাপ উপস্থাপনা যেনো কোনোটাই আজ তার পছন্দ হচ্ছে না, দেখতে দেখতে নাটক অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন এলো, থিয়েটারের লোক সংখ্যা খুবই কম, হলের চারিদিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ হতাশ বিমল বাবু নাটক পরিবেশন করলেন, ভালোয় মন্দ মিশিয়ে নাটক টি শেষ হলো, বাড়ি ফেরার পথে দেখলেন বছর আশির গোরা পন্ডিত অশ্বত্থ গাছের নিচে বসে ঘুমে ঢুলছেন… এই গোরা পন্ডিতের জ্যোতিষ বিদ্যায় অসীম জ্ঞান, তিনি নাকি কপাল দেখেই ভবিষ্যৎ বাণী করতে পারেন, বিমল বাবু জ্যোতিষে কোনো দিনই বিশ্বাস নেই কিন্তু ভাগ্যের দরবারে প্রতিবার ঠোক্কর খেয়ে, জীবনের প্রতিটা অসফলতা গোরা পন্ডিত কে দেখে যেনো সতেজ হয়ে উঠলো, ” ও গোরা জ্যাঠা… বলি ও জ্যাঠা”… বলে ডাকলেন গোরা পন্ডিত কে… চোখ দুটো আলতো করে খুললেন গোরা পন্ডিত… ” বলি আমার হাত দুটো একটু দেখো না…. কি আছে ভবিষ্যতে ” বলে হাত দুটো এগিয়ে দিলেন গোরা পন্ডিতের দিকে… গোরা পন্ডিত তার হাতের দিকে না তাকিয়ে বিমল বাবুর কপালের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন…. রাস্তার ধারের আলো এসে পড়েছে বিমল বাবুর কপালে তা দেখে যেনো কি বিড়বিড় করছে গোরা জ্যাঠা… “কি দেখছো জ্যাঠা” চোখের পলক না ফেলে কপালের দিকে তাকিয়ে সুদিনের ইঙ্গিত দিলেন তিনি… মনে কিছুটা আনন্দ পেলেও জীবনের প্রতি চরম হতাশা সেই আনন্দ কে খানিক ম্লান করলো, পরদিন সকালে বাজার সেরে যথারীতি রোজকার মতো মা কালির নাম মনে মনে স্মরণ করে বিল্টুর দোকান থেকে লটারির টিকিট নিলেন, দৈনন্দিন এক ঘেঁয়েমিতে যেনো অস্থির হয়ে পড়েছেন বিমল বাবু, সারাদিন কাটলো যথারীতি রোজকার মতো, রাত পেরিয়ে ভোর হলো… নতুন সূর্য, নতুন দিন, জানলার বাইরের দিকে তাকিয়ে ভোরের সূর্যের দিকে চেয়ে ভাবলেন দিনটা নতুন বাইরের কতো পাখি ডাকছে, কচি কচি পাতা গুলো হাওয়ার ছন্দে দুলছে, শুধু জীবন টাই একঘেয়ে….. এমনি সময় সাইকেলের বেলের আওয়াজ… কাগজওয়ালা… কাগজওয়ালার হাত থেকে কাগজ নিয়ে ঘরে এসে চিয়ারে বসে কাগজে চোখ রাখতেই মনে পড়লো লটারির টিকিটের কথা….আলমারি থেকে লটারির টিকিট বার করে কাগজ খুলে নম্বর মেলাতে শুরু করলেন, কাগজে দেওয়া নম্বর আর লটারির টিকিটের নম্বর প্রতিটা মেলাতে লাগলেন বিমল বাবুর চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, হাত থেকে পরে যাওয়া কাগজ টা আবার তুলে নিয়ে ফের মেলাতে লাগলেন, স্ত্রী কে চেঁচিয়ে ডাকলেন এবং বললেন তিনি লটারিতে বিশাল অংকের টাকা জিতেছেন, বিমল বাবুর নীরবে বোনা স্বপ্ন গুলো যে সাকার হবে তা তিনি কোনোদিনই ভাবতে পারেন নি…. একটা লটারির টিকিট তাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিলো, এখন তার নাটকের গোষ্ঠীও বড়ো হয়েছে…..গোরা জ্যাঠার ভবিষ্যত বাণী সত্যি সফল হয়েছে… অর্থ হয়তো কিছু ক্ষেত্রে অনর্থের মূল… কিন্তু অর্থের হাত ধরেই সুদিন আসে!
অর্থ হয়তো কিছু ক্ষেত্রে অনর্থের মূল… কিন্তু অর্থের হাত ধরেই সুদিন আসে…………!
More from GeneralMore posts in General »
- পরিবারে একত্রিত, বয়সে বিভক্ত: হেল্পএজ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন আন্তঃপ্রজন্মীয় বন্ধন কে জোরদার করার আহ্বান জানায়…।
- নতুন সংসার শুরু করার স্বপ্ন স্বামী স্ত্রীর চোখে, ভালোবাসার হাসি, প্লেনে চড়ার আনন্দ, বিদেশ যাত্রা সব কিছু কেমন যেন আকাশ এই মিলিয়ে গেল আর হঠাৎ করে হয়ে গেল সবাই আকাশের-তারা…।
- Lupin Receives Tentative Approval from U.S. FDA for Oxcarbazepine ER Tablets….
- ইংরেজি দৈনিক ইকো অফ ইন্ডিয়া গ্রুপের বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন…।
- Cycling is Faster than Perceived – Beats Cars in Congested Corridors….
- দুপুর বেলায় খাওয়া দাওয়ার পর্ব হল শেষ, বাংলাদেশে এই দিনটার গুরুত্ব অশেষ…।
Be First to Comment