জন্মদিনে স্মরণঃ অ ম লা শ ঙ্ক র
বাবলু ভট্টাচার্য : তিনি এমন একজন কিংবদন্তী নৃত্যশিল্পী, যাঁর দেখানো পথেই এগিয়েছে গোটা বিশ্বের অসংখ্য নৃত্যশিল্পী। তাঁর নৃত্য পরম্পরায় সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলার সংস্কৃতি।
তিনি অমলাশঙ্কর- একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নৃত্য শিল্পী ও শিক্ষয়িত্রী।
গ্রামের পাঠশালায় তত্ত্বাবধানে অমলা নন্দীর শিক্ষাজীবন শুরু। পরবর্তীতে তিনি খুলনা ও কলকাতায় উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন।
বিশিষ্ট স্বর্ণ ব্যবসায়ী পিতা অক্ষয় কুমার নন্দীর সঙ্গে প্যারিসে অবস্থানকালেই কলোনিয়াল এক্সিবিশনে উদয়শঙ্করের সঙ্গে অমলা নন্দীর প্রথম পরিচয় হয়। উদয়শঙ্করের আমন্ত্রণে তিনি তাঁর ট্রুপে যোগদান করেন। উদয়শঙ্করের নির্দেশনায় পরিচালিত নৃত্যে অংশগ্রহণ করে ইউরোপের একাধিক মঞ্চে তিনি যশস্বী হয়ে ওঠেন।
দীর্ঘ এক বছর ইউরোপ সফর শেষে অমলা কলকাতা ফিরে নৃত্য চর্চায় নিমগ্ন হন। এ সময় তিনি উদয়শঙ্কর ও কথাকলির নৃত্যগুরু শঙ্করণ নামবুদ্রির কাছে নৃত্যের তালিম নিতে থাকেন। পরবর্তীতে আলমোড়ায় ইন্ডিয়ান কালচার সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হলে অমলা এখানে এসে যোগদান করেন। এখানে তাঁর নৃত্য চর্চার সাথে সাথে চলতে থাকে চিত্রকলার চর্চা। এর মধ্যে উদয় শঙ্করের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
এভাবে ব্যাপক উদ্দীপনার সংগে শিক্ষা সমাপ্ত করে অমলাশঙ্কর স্বামী উদয় শঙ্করের সংগে তাঁর নৃত্য দলের প্রধান নৃত্যশিল্পী হিসেবে বেরিয়ে পড়েন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। সেই সময়কার অনুষ্ঠানগুলোতে তাঁর অসাধারণ নৃত্য কলাকৌশল যে সৌন্দর্যময় স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি করতো, তা দর্শকের হৃদয়ে আজও অম্লান হয়ে আছে।
নৃত্যশিল্পী অমলাশঙ্করের আর একটি বিশেষ শিল্পীসত্তার পরিচয় পাওয়া যায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর অংকিত চিত্রকলার মাধ্যমে। বিশেষ করে কলকাতা ইডেন গার্ডেনের উন্মুক্ত মঞ্চে উদয়শঙ্করের ‘লাইফ অফ বুদ্ধ’ রঙিন ছায়ানৃত্যে তাঁর অংকিত সুন্দর সুন্দর স্লাইডগুলো দর্শকদের আকৃষ্ট করেছিল এবং পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সামান্য ক্ষতি’ নৃত্যনাট্যেও তাঁর আঁকা স্লাইডগুলোও ব্যাপক প্রশংসিত হয়।
শ্রীমতী অমলাশঙ্করের একমাত্র কন্যা মমতাশঙ্করও নামকরা অভিনেত্রী ও আন্তজার্তিক খ্যাতি সম্পন্ন নৃত্য শিল্পী। মমতাশঙ্কর সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনসহ অনেক খ্যাতিমান পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করেছেন। তিনি কলকাতা মমতাশঙ্কর ব্যালে ট্রুপস-এর কার্যক্রমসহ কয়েকটি নৃত্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতীয় নৃত্য প্রশিক্ষণ ও প্রচারে নিয়োজিত।
অমলাশঙ্করের একমাত্র পুত্র আনন্দ শঙ্কর সংগীত জগতে এক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। তাঁর সেতারের সুর বিশ্বনন্দিত। তিনি বেশ কয়েকটি ছায়াছবিতে সুর সংযোজন ও সংগীত পরিচালনা করেন। ১৯৭৪ সালে পরিচালক মৃণাল সেনের ‘কোরাস’ ছবিতে সুরারোপের জন্য তিনি পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার। তাঁর স্ত্রী তনুশ্রীশঙ্করও একজন নামকরা নৃত্য শিল্পী ও অভিনেত্রী।
শ্রীমতি অমলাশঙ্কর তাঁর কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন প্রচুর সম্মান ও ভূষিত হয়েছেন একাধিক পুরস্কারে। ১৯৯১ সালে ভারত সরকারের কাছ থেকে ‘পদ্মভূষণ’ লাভ করেন। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে অমলাশঙ্করকে বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারের দ্বারা সম্মানিত করা হয়৷
২০২০ সালের ২৪ জুলাই ১০১ বছর বয়সে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
অমলাশঙ্কর ১৯১৮ সালের আজকের দিনে (২৭ জুন) বাংলাদেশের মাগুরা জেলার বাটাজোড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment