জন্মদিনে স্মরণঃ অ ভি জি ৎ রা য়
“বাবা আমাকে ‘রাজপুত্রে’র মত বড় করতে পারেননি বটে, কিন্তু বাবাই আমাকে যত রাজ্যের বইয়ের জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।”
[ অভিজিৎ রায় ]
বাবলু ভট্টাচার্য : অভিজিৎ রায় বিজ্ঞানমনস্ক মুক্তচিন্তার জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। যুক্তিনির্ভর লেখালেখিতে তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য। তাঁর লেখার ভিত্তি ছিল বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ জ্ঞান, পর্যবেক্ষণ ও তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ। যাবতীয় কুসংস্কার, সামাজিক নিপীড়ন ও অনাচারের নির্মোহ বিশ্লেষণ করেছেন তিনি।
তাঁর পিতা অজয় রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২০১২ সালে অজয় রায় একুশে পদক সম্মানে ভূষিত হন।
অভিজিৎ রায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগ থেকে ব্যাচেলরস ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী অভিজিতের ফলাফল ছিল ঈর্ষণীয়। পাশ করার পর, কিছুদিন বুয়েটে শিক্ষকতাও করেছেন তিনি।
পরে সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর (NUS) থেকে তিনি বায়োমেডিক্যালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
পেশাগত জীবনে যন্ত্র-প্রকৌশলী অভিজিৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া প্রদেশের আটলান্টা শহরে বসবাস করতেন।
অভিজিৎ রায় ২০০১ সালের দিকে সমমনা কয়েকজন লেখকদের নিয়ে ‘মুক্তমনা’ নামক একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন। এই ওয়েবসাইটটি ‘দ্য ববস’ সেরা অনলাইন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।
২০০৭ সালে মুক্তবুদ্ধি, নাস্তিকতা, বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসার আর মানবাধিকার ও সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখার প্রেক্ষিতে মুক্তমনা ওয়েবসাইট শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক অর্জন করে।
অভিজিৎ রায় পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম ছাড়াও সেন্টার ফর ইনক্যুয়ারি এবং ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট এন্ড এথিক্যাল ইউনিয়ন প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির নিকট সমর্থনের আবেদন জানান।
তিনি ঢাকা, নিউইয়র্ক সিটি, ওয়াশিংটন ডিসি, লন্ডন, অটোয়া প্রভৃতি শহরে বন্দী ব্লগারদের সমর্থনের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ সংগঠিত করেন।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ রায় এবং তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা একুশে বইমেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের নিকটে দুস্কৃতিদের দ্বারা আক্রান্ত হন। তাঁদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে অভিজিৎ রাত সাড়ে দশটা নাগাদ মৃত্যুবরণ করেন।
অভিজিতের ইচ্ছানুসারে তাঁর মৃতদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্রের গবেষণার জন্য প্রদান করা হয়।
অভিজিতের লেখার বিষয় ছিল আধুনিক বিজ্ঞান, নাস্তিকতা, সমকামিতা এবং দর্শন। মৃত্যুর পূর্বে প্রকাশিত তাঁর বইগুলো : ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’, মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে, ‘স্বতন্ত্র ভাবনাঃ মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি’।
এছাড়াও উল্লেখযোগ্য আরও কিছু বই- ‘সমকামিতাঃ বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান’, ‘অবিশ্বাসের দর্শন’, ‘বিশ্বাস ও বিজ্ঞান’, ‘ভালবাসা কারে কয়’, ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’, ‘ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোঃ এক রবি-বিদেশিনীর খোঁজে’।
অভিজিৎ রায় ১৯৭২ সালের আজকের দিনে (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment