Press "Enter" to skip to content

অনুব্রত কে খুনের হুমকি দেওয়া মামলায় ‘কেস ডাইরি’ তলব হাইকোর্টের……।

Spread the love

অনুব্রত কে খুনের হুমকি দেওয়া মামলায় ‘কেস ডাইরি’ তলব হাইকোর্টের…….।

মোল্লা জসিমউদ্দিন : কলকাতা, ১৭, নভেম্বর, ২০২০। চলতি সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে নিম্ন আদালতে দাখিল হওয়া মামলা খারিজের পিটিশন নিয়ে শুনানি চলে। পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকারা পুরসভার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায়ের মামলা খারিজের পিটিশন এটি। বিচারপতি অন্তবর্তী নির্দেশে নিম্ন আদালতের বিচারপ্রক্রিয়ার সাময়িক স্থগিতাদেশ জারী করেছেন। সেইসাথে এই মামলা কেস ডাইরি আগামী ২৬ নভেম্বর এর মধ্যে আউশগ্রাম আইসি কে উচ্চ আদালতে দাখিল করার আদেশনামা দিয়েছেন। পূর্ব বর্ধমান জেলায় বহু চর্চিত এই মামলা। কেননা মামলাটি হয়েছিল দক্ষিণবঙ্গের বিতর্কিত তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডল কে ঘিরে। বকেয়া টাকা উদ্ধারে সোশাল মিডিয়ায় অনুব্রত মন্ডল কে নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায় খুনের হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। প্রথমে পুলিশি হেফাজত, পরবর্তীতে জেল হেফাজত কাটিয়ে বর্তমানে ব্যক্তিগত বন্ডে জামিনে মুক্ত রয়েছেন নিত্যানন্দ বাবু। । উল্লেখ্য গত অক্টোবর মাসে আউশগ্রাম থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল গুসকারা পুরসভার প্রাক্তন তৃনমূল কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায় ওরফে নিতাই বাবু কে। কে এই নিতাই? যার অডিও এবং ভিডিও নিয়ে তোলপাড় গোটা বীরভূম – পূর্ব বর্ধমান জেলা সহ রাজ্যরাজনীতি!  ১৯৯৮ সালে তৃনমূল দল গঠনের সময় পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দলীয় রাজ্য সভাপতি । সেসময় সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বীরভূমের দায়িত্বে৷ সুশোভন বাবুর শারীরিক অসুস্থতায় বীরভূমের বোলপুর মহকুমার সাময়িক দায়িত্ব পেয়েছিলেন গুসকারা পুরসভার তৎকালীন বিরোধী দলনেতা নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায় ওরফে নিতাই বাবু৷ অনুব্রত মন্ডল তখন কেস্টদা হয়ে উঠেননি৷ একজন সাধারণ দলীয় কর্মীর মতনই ছিলেন বীরভূমের রাজনীতিতে। তাই দলীয় পর্যবেক্ষক নিতাই তখন অনুব্রতের গুরুদেব তুল্য৷ ২০০০ সালের পর নানুরের সুচপুরে গনহত্যা ঘটনায় রাজনৈতিক মাইলেজ পেয়ে যান অনুব্রত  মন্ডল।এই ছিল অনুব্রত মন্ডল এবং নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায়ের সেসময়কার রাজনৈতিক অবস্থান। সময়ের ব্যবধানে নানুরের হাটসেরিন্ডির বাসিন্দা  অনুব্রত মন্ডল এখন রাজ্য রাজনীতিতে হেভিওয়েট  ‘পিঞ্চহিটার’ নেতা। তর্কবিতর্কে সংবাদ শিরোনামে সর্বদা থাকেন তিনি। অপরদিকে আউশগ্রামের ব্যবসায়ী নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায়   তাঁর রাজনৈতিক পরিমন্ডল পুরসভা কেন্দ্রিকেই আটকে থাকেন। সম্প্রতি বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় তৃণমূল নেতা নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায় বয়সজনিত কারণ দেখিয়ে দলত্যাগের ঘোষণা করেন। তবে এটি ছিল ভিন্ন রাজনৈতিক অঙ্ক। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চারবারের তৃনমূল কাউন্সিলর ছিলেন তিনি। তবে কখনোই পুরপ্রধান কিংবা সহকারী পুর প্রধান হওয়ার সুযোগ ঘটেনি। গুসকারায় কান পাতলেই শোনা যায়, ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গুসকারা পুরসভার যাবতীয় টেন্ডারের কাজে অলিখিতভাবে দেখতো ‘রায় – চ্যাটার্জি’ জুটি। বাৎসরিক কুড়ি কোটি টাকার বেশি টেন্ডার চলে থাকে এই পুরসভায় । যে পুরপ্রধান এই পুরসভার দায়িত্ব নেওয়ার আগে এক আলুর আড়তে হিসেবরক্ষকের কাজ করে মাসিক ৩ হাজার মাইনে পেত। সেই পুরপ্রধান জলাশয় ভরাট করে রাজপ্রসাদ তুল্য বাড়ি গড়ে নদীয়ায় বেশ কয়েকটি ফ্লাট নিয়েছেন বলে এলাকায় দাবি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরসভার সংশ্লিষ্ট ঠিকেদারদের একাংশের দাবি – ‘রায় – চ্যাটার্জি জুটি কে ১৫% কাটমানি না দিলে কাজের বরাত মিলতো না ‘৷ এই কাটমানির টাকা বোলপুরের এক জাঁদরেল নেতার বাড়িতে পৌঁছে দিতে হত। তা নাহলে দলীয় পদ কিংবা প্রশাসনিক পদ থেকে সরতে বেশি সময় লাগতো না বলে বিশেষ সুত্রে প্রকাশ  । যেমন অতি সম্প্রতি গুসকারা পুরসভার প্রশাসক মন্ডলী থেকে বাদ পড়েছেন খোদ প্রাক্তন পুর চেয়ারম্যান। কলকাতা থেকে কাটোয়া সবজায়গায় পুর প্রশাসক মন্ডলীর শীর্ষে রয়েছেন প্রাক্তন মেয়র / চেয়ারম্যানরা। ২০১৮ সালের পর থেকে পুরভোট না হওয়ায় এই পুরসভাটি প্রশাসনিক আধিকারিকরা চালাতেন। গত মাসে দলের প্রাক্তন তিন কাউন্সিলরদের গুসকারা পুরসভার  প্রশাসক মন্ডলীতে বসানো হয়। এরপরই ঘটে রাজ্য রাজনীতিতে বিস্ফোরণ!  ফেসবুকে পোস্ট করা এক অডিও ক্লিপিংসে নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায় নাকি অনুব্রত মন্ডল কে গুলি করে খুন করার হুমকি দেন। কেন এই হুমকি?  নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায়ের দাবি – ‘অনুব্রত মন্ডলের স্ত্রীর ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য তিনি নগদ কুড়ি লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন’।  সেই টাকার তাগাদায় গেলে সেই টাকা নাকি অনুব্রত বাবু দিতে অস্বীকার করেন। টাকা লেনদেনের সমস্ত তথ্য প্রমাণ নাকি নিতাই বাবুর কাছে আছে?  তবে বিতর্ক যতই ঘটুক স্থানীয় রাজনীতি মহল জানাচ্ছে – ‘একাধারে গুসকারা পুরসভার প্রশাসক মন্ডলীতে স্থান না পাওয়ার জন্য এহেন ব্লাকমেলিং করছেন নিতাই বাবু’। আরেক মহল জানাচ্ছে –  ‘ দক্ষিণবঙ্গের হেভিওয়েট শাসক দলের নেতা কে অডিও হুমকি পোস্ট করে বিজেপির আশীর্বাদ চাইছেন নিতাই। যাতে আগামী বিধানসভার ভোটে আউশগ্রাম কিংবা মঙ্গলকোটে গেরুয়া প্রার্থীপদ  পাওয়া যায়’। অঙ্ক যেমনই হোক না কেন নিতাই বাবুর বিরুদ্ধে লুটের টাকা রাখার অভিযোগ থেকে দলীয় প্রতীক জালিয়াতি সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়। এমনকি জেল হেফাজতে থাকতেও হয়েছে। সম্প্রতি   বর্ধমান জেলা আদালতে এসিজেম এজলাসে পেশ করা হয়েছিল এই বিতর্কিত রাজনৈতিক নেতা কে। প্রথমে তিনদনের জেল হেফাজত হয়েছে। পরে পুনরায় পেশ করা হয় এই নেতা কে। যেখানে চারদিনের পুলিশি হেফাজত হয়েছে।পরে জেল হেফাজত হয়।বর্তমানে জামিনে মুক্ত তিনি।কুড়ি লক্ষ টাকা কোথায় পেলেন নিতাই বাবু? কিভাবে বোলপুরের জাঁদরেল নেতার বাড়িতে পৌছালেন তিনি। অডিও গুলি আসল কিনা তার জন্য কন্ঠস্বর পরীক্ষা, দুই নেতার মোবাইল কললিস্ট থেকে লোকেশন ট্র্যাকিং, প্রভৃতি বিষয় গুলি খতিয়ে

দেখলে অনেক কিছুই পরিস্কার হবে। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে নিম্ন আদালতের দাখিল ফৌজদারি মামলা খারিজের আবেদন করেন নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায়। যার শুনানি চলতি সপ্তাহে হয়।সেখানে নিম্ন আদালতের বিচারপ্রক্রিয়ায় অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ জারী করা হয়েছে। আউশগ্রাম পুলিশ কে ২৬ নভেম্বরের মধ্যে কেস ডাইরি জমা দিতে বলা হয়েছে। মামলায় পুলিশি তদন্তে বিস্তর গড়মিল আছে বলে ইতিমধ্যেই বর্ধমান জেলা আদালতে সরব হয়েছিলেন নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায়ের আইনজীবী কমল দত্ত মহাশয়। এখন দেখার কলকাতা হাইকোর্টে আউশগ্রাম থানার পুলিশ যথাযথ তদন্ত প্রক্রিয়ার উত্তর দিতে পারে কিনা!

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.