Press "Enter" to skip to content

অতিমারী পরিস্থিতিতে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে সুরক্ষা বেষ্টনী…..।

Spread the love

সঙ্গীতা চৌধুরী : কলকাতা, ১১, ডিসেম্বর, ২০২০। আজ প্রায় নয় মাস ধরে করোনা সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করছে গোটা পৃথিবী। এই দীর্ঘ সময়ের বেশ কিছুটা সময় লকডাউন দ্বারা মানুষের জীবন স্তব্ধ হয়ে যায়। এই সময়টাতে অনেক পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠানকেই স্হগিত রাখতে হয় , তারমধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠানটি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । এরপর আনলক পর্ব শুরু হলে বিবাহ অনুষ্ঠানে প্রথমে পঞ্চাশ জন, তারপর একশো এবং বর্তমানে দুশো জন আমন্ত্রিতকে নিয়ে অনুষ্ঠান করার অনুমতি মিলেছে সরকারি ভাবে। তাই যাদের নিমন্ত্রিত অতিথির লিস্ট অনেক দীর্ঘ তাদের অনেক ছাট – কাট করে তবেই চূড়ান্ত লিস্ট বানাতে হয়েছে। শুধু এই দিকেই বিড়ম্বনা নয়, বিয়ের কেনাকাটা থেকে শুরু করে পুরো অনুষ্ঠানটি শেষ না হওয়া অবধি সংক্রমণের আতঙ্ক তাড়া করে বেড়ায়। এমন ও ঘটছে বিবাহের শেষ মুহূর্তে পাত্র বা পাত্রীর পরিবারের কারো কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ছে , তখন আনন্দের তাল কাটে। এরকম নানা সংশয় নিয়ে করোনা -বিধি মেনেই বর্তমান অতিমারি পরিস্হিতিতে বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। তবে চিকিৎসকদের মতে, যত কম সংখ্যক লোক সমাগম হয় সংক্রমণের ভয় ততই কম থাকবে। এখানে দুটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল করোনা – বিধি মেনে গাইড লাইন অনুযায়ী কিভাবে তারা অনুষ্ঠানের ব‍্যবস্থা করেছেন।

গড়িয়াহাট অঞ্চলের বাসিন্দা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুভাশিস চৌধুরীর একমাত্র পুত্রের বিয়ে ঠিক হয়েছিল এই ডিসেম্বরেই । বিয়ের কথা ফাইনাল হয় গত ফেব্রুয়ারিতে , আর তারপরই বিয়ের রিসেপশন পার্টির জন্য কসবা অঞ্চলের লীলাবতী রিসোর্ট বুক করে ফেলেন। কিন্তু মার্চের কোভিড পরিস্থিতি ও লকডাউনের সময় বিয়ে নিয়ে দোলাচলে পড়েন । তাই লকডাউন একটু শিথিল হতেই অগস্ট মাসে রেজিস্টি বিয়ের কাজটি সেরে রাখেন। সুভাশিস বাবুর স্ত্রী স্বরূপা চৌধুরী জানালেন , “দুর্গাপুজোর আগে অবধি অনুমান করতে পারছিলাম না বিয়ের অনুষ্ঠানটা আর করা যাবে কি না! তবে পুজোর পরই পরিস্থিতি লক্ষ্য করে আশায় বুক বেঁধে বিয়ের কেনাকাটা শুরু করি। তবে মনের মধ্যে সব সময় একটা ভয় তো তাড়া করছেই।

আমি বেশিরভাগ কেনাকাটা অনলাইনেই করেছি। বাড়িতে জিনিসগুলো ডেলিভারি দেওয়ার পর স‍্যানিটাইজ করে নিয়েছি। তবে শাড়িগুলো দোকানে গিয়ে পছন্দ করে নেওয়া। বিয়ের গয়না আগে থেকেই রেডি ছিল বলে দোকানে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে নি। আর এখনকার উর্ধ্বমুখী সোনার দামের মধ্যেও পড়তে হয় নি। ” বিয়েতে অতিথি আপ‍্যায়নের প্রসঙ্গে স্বরূপাদেবীর আক্ষেপ, ” একমাত্র ছেলের বিয়েতে অনেক অতিথিকেই ডাকতে পারছি না, পাঁচশো থেকে অনেক ছাটকাট করে আড়াইশো করেছি।

আমাদের অনুষ্ঠান বাড়ির স্থানটি অনেক বড় তাই গাইড লাইন অনুযায়ী স্থান বিচারে পঞ্চাশ শতাংশ নিমন্ত্রিত ডাকা যায় বলে দুশো থেকে বাড়িয়ে আড়াইশো করতে পেরেছি। রিসোর্টে এই অনুষ্ঠানের স্থানটিতে প্রবেশের মুখেই স‍্যানিটাইজার টানেল থাকবে , প্রত‍্যেক অতিথিকে সেটা অতিক্রম করেই প্রবেশ করতে হবে। তাছাড়া থার্মাল স্ক্রিনিং -এর ব‍্যবস্থাও থাকছে। প্রত‍্যেককেই মাস্ক পড়তে হবে । এবং সামাজিক দূরত্ব ও অবশ‍্যই বজায় রাখার চেষ্টা করা হবে। বর ও কনে বিশেষ কিছু মুহূর্ত ছাড়া মাস্ক পড়বে। এই ভাবে সব রকম সুরক্ষা – বিধি মেনেই অনুষ্ঠানটি করার চেষ্টা করছি “।

সিরিটি মুচিপাড়ার নেতাজি সড়কের বাসিন্দা অয়ন দাসগুপ্ত সম্প্রতি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। ওর থেকে জানা গেল করোনা কালে বিবাহের অভিজ্ঞতা। অয়ন বললেন, “এক বছর আগেই আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। তাই অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে শুরু করে কেটারিং সহ আরও খুটিনাটি বিষয় সবই এক বছর আগেই বুক করে ফেলি। এমনকি বিয়ের বেশিরভাগ কেনাকাটা ও হয়ে যায়। তাই লকডাউন যখন দীর্ঘতর হয় তখন খুব মন খারাপ হয়ে যায়।আনলক পর্ব শুরু হলে জুলাই নাগাদ ঠিক করি রেজিস্ট্রি করে অল্প আত্মীয় – স্বজন নিয়েই বিয়েটা করবো। কিন্তু পুজোর সময়ের পরিস্থিতি দেখে আশান্বিত হই। তারপর ক‍্যাটারারের সঙ্গে যোগাযোগ হলে সরকারি গাইড লাইনে দুশো জন অতিথি ডাকা যাবে জানতে পারি। এরপরই বিয়ের প্রস্তুতিতে লেগে পড়ি। বিয়ের বেশিরভাগ শপিং- ই প‍্যানডেমিক পরিস্থিতির আগেই সারা হয়ে গিয়েছিল, বাকিটা এরপর করি।

যেমন – তত্ত্বের জিনিসপত্র বাকি ছিল , সেগুলো বাড়িতে এনেই আগে স‍্যানিটাইজ করে নিই। নিমন্ত্রিত অতিথির লিস্ট থেকে ও আমাকে কিছুটা কমিয়ে, সাড়ে তিনশোকে দুশো করতে হয়। সব অতিথিকে আগে থেকেই মাস্ক পড়ার কথা বলে রাখি। বিয়ের আগের দিন থেকে যে সব আত্মীয় – স্বজনরা বাড়িতে আসতে থাকেন , তাদের সকলকে স‍্যানিটাইজ করে ঢোকানো হয়। রিসেপশনের দিনও সকলকে স্প্রে-এর মাধ্যমে স‍্যানিটাইজ করে প্রবেশ করানো হয়। তাছাড়া একজনকে দায়িত্ব দেয়া ছিল যে উপহার দেওয়ার সময়ও যেন তা স‍্যানিটাইজ করে নেওয়া হয়। সোশ‍্যাল ডিসটেন্সসিং – এর দিকেও নজর রাখি। একজন শুধু এই সব নজরদারি করার জন্যই ছিল। খাবার জায়গায় বুফেতে এক একটা ধাপে যাতে বেশি ভিড় জমে না যায় তার জন্য পঁচিশ জনের প্লেট রাখা ছিল । এই ভাবে যতটা সম্ভব সুরক্ষা বিধি মেনে চলার চেষ্টা করেছি।” কাঁকুরগাছি অঞ্চলের বাসিন্দা গৌতম তালুকদার তার একমাত্র মেয়ে ভাগ্যশ্রী র বিবাহ দিলেন গত ৩০শে নভেম্বর এবং রিসেপশন এর আয়োজন করেছিলেন ২রা ডিসেম্বর। গৌতম বাবুর আক্ষেপ বহু অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো সম্ভভপর হয়নি সরকারি বিধি নিষেধের জন্য। তাদের আয়োজিত বিবাহ মণ্ডপ প্রতি মুহূর্তে স্যানিটাইজ করা হয়েছে। বিবাহ মণ্ডপে প্রবেশের জন্য সকল অতিথিদের স্যানিটাইজেশন ট্যানেলের মধ্য দিয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয় এবং প্রত্যেক অতিথিদের হাতে একটি করে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল তুলে দেওয়া হয় করোনা অতিমারীর সুরক্ষার কথা ভেবে।

বিয়ের মতো আনন্দ অনুষ্ঠান ও এই অতিমারির সময়ে নিরবিচ্ছিন্ন আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মানুষ করোনা আতঙ্ক ও ত্রাসকে সঙ্গী করেই এই অনুষ্ঠানে সামিল হচ্ছেন। তবে সব মানুষই যদি শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে এ ব‍্যাপারে সচেতন থাকেন , তাহলে এধরণের অনুষ্ঠান থেকে সংক্রমণ রোধ সম্ভব হবে।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.