**সবথেকে বড় সমস্যা ওজন বৃদ্ধি**
সঙ্গীতা চৌধুরী: কলকাতা, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২। আজ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলে দেওয়া হলো। প্রায় দুবছর ধরে ছাত্র-ছাত্রীরা বাড়িতে বসে। এই দলে কচিকাঁচাদের থেকে শুরু করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। মাঝে অল্প কিছুদিনের জন্য শিক্ষাঙ্গনের দরজা নবম শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মোচিত হয়েছিল। এ ছাড়াও কোভিডের ঢেউ এর পরেও আরেক দফায় শিক্ষাঙ্গনের দরজা খুলেও কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের চোখ রাঙানিতে পুনরায় তারা অনলাইন ক্লাসেই ফিরে এসেছিল। তবে বর্তমানে কোভিভ পরিস্থিতি একটু স্থিতিশীল হওয়ার পর থেকে যখন সব কিছু আবার খুলতে শুরু করে , তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা নিয়ে চারিদিকে শোরগোল সৃষ্টি হতে থাকে। তাই রাজ্য সরকার শেষ অবধি আজ ৩রা ফেব্রুয়ারি থেকে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের দরজা পুনরায় খুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি স্বরস্বতী পুজোর প্রাক্কালে শিক্ষাঙ্গন খুলে দেওয়ায় ছাত্র ছাত্রীরা খুবই খুশি। এখনও পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ গৃহবন্দি হয়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে ক্লাস করতে করতে বহু পড়ুয়াই নানা রকম সমস্যা জর্জরিত হয়ে পড়েছে। তাদের অনেকেরই সব থেকে বড় সমস্যা হল ওজন বৃদ্ধি। কিন্তু কি করে পড়ুয়ারা এই অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি রোধ করে সুস্থ স্বাভাবিকতায় ফিরতে পারবে সে ব্যাপারে বিশিষ্ট ডায়েটিশিয়ান ও নিউট্রিশনিস্ট জয়শ্রী বনিক তার অভিজ্ঞ মতামত প্রদান করেছেন।
জয়শ্রী জানান, ” এই দীর্ঘ অতিমারির সময়টি বাচ্চাদের জন্য সত্যি খুব বেদনাদায়ক। আমি অনেক বাচ্চাকেই কাউন্সিলিং করতে গিয়ে দেখেছি যে তারা দীর্ঘদিন বাড়িতে থেকে অবসাদগ্রস্ত হওয়ার ফলে ঠিক মতো খাওয়া – দাওয়া করছে না , এর ফলে ওজন অনেকটাই কমে গেছে। তবে বেশিরভাগের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা বাড়িতে থেকে এত বেশি ফাস্টফুড খাচ্ছে যে ওজন অনেক বেড়ে যাচ্ছে। তারা সকাল থেকে দুপুর অবধি হয়তো বাড়ির খাবারই খাচ্ছে কিন্তু বিকেলের টিফিনের ক্ষেত্রে বাইরের ফাস্টফুডের দিকে ঝুঁকছে। যেমন- রোল, বার্গার বা পিৎজা ইত্যাদি। কিন্তু এগুলোতে প্রচুর ক্যালরি থাকে । আর স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা ট্রান্স ফ্যাটও থাকে অত্যাধিক মাত্রায়, তাই এধরনের খাবার প্রতিদিন খেলে বাচ্চাদের শরীরে খারাপ কোলস্টরলের মাত্রা বেড়ে যায়। আবার অন্যদিকে এগুলো ফ্যাটি লিভারের বড় কারন । তাই বাচ্চাদের বাড়িতে তৈরি সহজ পাচ্য খাবার খাওয়াতে হবে। সবসময় বাড়িতে থাকার ফলে ওদের হাঁটা-চলা অনেকটাই কমে গেছে , তাই প্রতিদিন নিয়ম করে হালকা ব্যায়াম করতে হবে।
খুদে পড়ুয়ারা দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকার ফলে ওদের মানসিক বৃদ্ধিও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। একটা বাচ্চা বাড়ি থেকেই সব রকম শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। তারজন্য তার সামাজিক সংযোগ অবশ্যই প্রয়োজন। যেমন- বন্ধুদের সঙ্গে মেলামশা, স্কুলের পরিবেশ, শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের সাহচর্য ইত্যাদি। এই বিষয়টি তার শরীরে প্রভাব ফেলবে। আবার সব পড়ুয়ার কাছেই মোবাইল এখন খুবই সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। তাই পড়াশোনার বাইরে গিয়েও তারা মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকছে। ফলে পড়ুয়াদের ঘুমের ক্ষেত্রটিও যথেষ্ট বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে টিন এজারদের ক্ষেত্রে। তাদের অনেককেই দেখা যায় রাতে পড়াশোনা শেষ করে অনেক রাত অবধি মোবাইলে বিনোদনমূলক কোন অনুষ্ঠান দেখছে। তাতে সকালে উঠে তাদের ঘুমের রেশ থেকে যাচ্ছে। একজন পড়ুয়ার জন্য ৭-৮ ঘন্টা ঘুম খুবই আবশ্যিক । তা বলে রাত দুটো বা তিনটেয় ঘুমিয়ে বেলা করে উঠে সেই ঘাটতি মেটানো ঠিক নয়। রাত দশটা – এগারোটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে হবে, আর সকাল সাতটা থেকে আটটার মধ্যে উঠে পড়লে পড়ুয়ারা মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকবে। তাই ছেলে- মেয়েরা এই নিয়ম মেনে চললে স্কুল খোলার পর তাদের কোন সমস্যায় পড়তে হবে না খাওয়া ও ঘুমের এই অনিয়মের ফলে একটু উঁচু ক্লাসের ছাত্রীদের মধ্যে পিসিওডি সমস্যাও দেখা দেয়।
শেষে আর একটি বিষয়ের উল্লেখ করবো সেই দিকে অভিভাবকদের অবশ্যই নজর রাখতে হবে, পড়ুয়ারা মোবাইল বা ল্যাপটপে পর পর ক্লাস করার ফলে ওদের চোখের ওপর খুব চাপ পরে তাই অবসর সময়ে পড়ুয়াদের একটু চোখের এক্সারসাইজ করতে হবে। আবার টানা বসে থাকার ফলে কোমর বা ঘাড়েও ব্যথা হয় । তবে সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। ”
পড়ুয়াদের সুস্থ থাকার জন্য কি করণীয় :
১.প্রোটিন জাত খাবার ( মাছ, মাংস, ডিম), স্প্রাউট, ডাল এবং সহজ পাচ্য খাবার খেতে হবে।
২. সবুজ শাকসবজি খেতে হবে, তাতে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
৩.পরিমাণ মতো কার্বোহাইড্রেড খেতে হবে।
৪.নিয়ম করে পরিমাণ মতো জল খেতে হবে। তাছাড়া ডাবের জল এবং লেবুর জল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপযোগী।
৫. আমন্ড, কাজু বাদাম, আখরোট, ফ্লেক্স সিড ইত্যাদি খেতে পারলে ভালো। প্রতিদিন একটা ফল খেতে হবে।
৬. প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমনো জরুরি।
৭. ভিটামিন ডি এর জন্য রোজ দশ থেকে পনেরো মিনিট সূর্যালোক শরীরে লাগানোর প্রয়োজন আছে।
৮.নিয়মিত ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। খোলা জায়গায় খেলাধুলা করতে পারলে ভালো। ভোরের খোলা হাওয়া একটু শরীরে লাগাতে পারলে শরীর সতেজ থাকবে । সূর্য প্রণাম এবং মেডিটেশন করতে হবে।
৯. রাতে ঘুমোনোর সময় পছন্দের বই পড়তে হবে।
পড়ুয়াদের এই কাজগুলো থেকে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত::–
১.ফাস্ট ফুড থেকে দূরে থাকতে হবে।
২. ফ্রুট জুস এবং কোলড্রিংস এড়িয়ে চলা ভালো।
৩. প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল থেকে দূরে থাকতে হবে।
৪. খাবার সময় মোবাইল বা অন্য কোন মাধ্যমে চোখ রেখে খাওয়া উচিত নয়।
৫. ঘুমোনোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল বা ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে নিতে হবে।
Be First to Comment