Press "Enter" to skip to content

অংশুমান ব্যানার্জির ও টি টি প্ল্যাটফর্মের লার্জ পেগ ছবির ট্রেলার মুক্তি….।

Spread the love

শ্রীজিৎ চট্টরাজ : কলকাতা, ২৪ এপ্রিল ২০২২। বৈশাখী সন্ধায় দক্ষিণ কলকাতার ক্যাফে দি কমন রুম জুড়ে নতুন প্রজন্মের শিল্পী কলাকুশলীর উপস্থিতিতে সরগরম। উপলক্ষ অংশুমান ব্যানার্জির ও টি টি প্ল্যাটফর্মের ওয়েব সিরিজের লার্জ পেগ ছবির ট্রেলার মুক্তি। হাজির চরিত্রশিল্পী সায়ন্তনী গুহ ঠাকুরতা, শ্রীতমা দে, পায়েল রয়, সারা এম নাথ, সৈকত ঘোষ, প্রত্যুষা সরকার, শমীক কুণ্ডু, শান্তনু ব্যানার্জি প্রমুখ। হাজির ছিলেন, ছবির চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতাও। এবং ছবির মুখ্য শিল্পী অনিন্দ্য পুলক বন্দোপাধ্যায়।

পরিচালক জানালেন, অন্য একটা ছবির পরিকল্পনা চলছিল, হঠাৎই এক রাতের প্রস্তুতিতে এই একটি নতুন বিষয়ের ছবির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। মূলত লাস্ট পেগ একটি সাইকো সেক্স এর কাহিনী। এক বিখ্যাত লেখক ও পরিচালকের ব্যর্থতার হতাশা থেকে ছবির কাহিনী এগিয়েছে। থ্রিলারধর্মী এই ছবি দর্শকের আশীর্বাদ পাবে এমন বিশ্বাস রাখি। অনিন্দ্য পুলক জানালেন, আমার কাছে আমার অভিনীত সব চরিত্রই ভালো । কেননা ব্যাংকের ই এম আই দেওয়ার এক দায়িত্ব আছে। অনিন্দ্য এক বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে পেশাদার বক্তব্য রাখলেও, অভিনয় দক্ষতার গুণে দর্শকের কাছে অনিন্দ্যর একটি বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়ে গেছে। ফলে অনিন্দ্য জানেন, কোন চরিত্র তাঁর উপযোগী।

পরিচালক ও ছবির মুখ্য অভিনেতার মুখোমুখি হয়ে প্রশ্ন ছিল সাইকো বিষয়ের ছবির কথা উঠলে প্রথমেই হিচককের নাম উঠে আসে । হলিউডের বিখ্যাত প্রযোজনা সংস্থা প্যারামাউন্ট পিকচারস হিচককের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও সাইকো ছবিটি অশ্লীল আখ্যা দিয়ে চুক্তি বাতিল করে। হিচকক নিজে ছবিটি অনেক খরচ বাঁচিয়ে শেষ করেন। ছবি মুক্তি পেতেই বাম্পার হিট। সুতরাং আমাদের দেশে সাইকো সেক্স নির্ভর ছবি দর্শক রক্ষণশীলতার ট্যাবু ভেঙে কিভাবে গ্রহণ করবেন সেটা কি একটা বাড়তি চাপ থেকে যায়?

উত্তরটা অনিন্দ্যই দিলেন। বললেন, ছবির মুখ্য চরিত্র এক লেখক যখন পেশাগত ব্যর্থতার গ্লানিতে জর্জরিত, তখন তাঁর গল্পের চরিত্ররা জীবন্ত হয়ে ধরা দেয় তাঁর সামনে। সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের দেশে এখনও শিল্পীর স্বাধীনতা বলে কিছু নেই। আছে কিছু অপশন। তার মধ্য থেকে বেছে নিতে হয়। আমি আইসক্রিমের দোকানে গিয়ে কোন ফ্লেভারের আইস ক্রিম খাবো সেটা আমার পছন্দ। আমাদের দেশে কিছু তালিকা দিয়ে বলা হয়, বেছে নিতে। সেটাকে স্বাধীনতা বলা যায় না। অবশ্য পোস্ট ক্যাপিটালিজমের দেশে এটা আশা করাও বাতুলতা। তবে বাণিজ্যিক একটা শর্ত থাকে। ভাগ্যিস এখনও এই মিডিয়াতে সেন্সরশিপের নামে কোনো অভিভাবক নেই, তাই ছবিতে সাইকো সেক্স ছবির গল্পের প্রয়োজনে পরিচালক তাঁর মত করে সাজিয়েছেন। আমরা আপাতত শৈল্পিক উপস্থাপনা করে দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। এবার দর্শক বিষয়টিকে কিভাবে নেবেন তাঁদের ব্যাপার। কোনো পরিচালক বা শিল্পীর দায় থাকে না, সমাজ পরিবর্তনের। আমরা বিষয়টি তুলে ধরতে পারি এই পর্যন্ত।

অনিন্দ্যের কাছে শেষ প্রশ্ন ছিল, গল্পের চরিত্র সৃষ্টিকর্তা লেখক। তাঁর কাছে যখন চরিত্রগুলি এসে ভিড় করে, তখন সেসব চরিত্রগুলি কি লেখকের অনুগত হয়ে থাকে? নাকি অবাধ্য হয়? অনিন্দ্য জবাব দিলেন, লেখক যে সবসময় তাঁর সৃষ্ট চরিত্র গুলি বাধ্য থাকবে এমন প্রত্যাশা বোধ হয় সবসময় করে না। আপনার উত্তর ছবিটি দেখলে পেয়ে যাবেন। এক্সট্রা জিনিয়াসের মনস্তত্বকে লুনাটিক বলবেন, না তার একটা আলাদা সংজ্ঞা হবে সেটা কিন্তু এখনও বিজ্ঞানের চর্চার বিষয়। পরিচালক ও অনিন্দ্যর কথায় যা ফুটে ওঠে, তাহলো সাইকো সেক্স নির্ভর এই ছবি এক নতুন স্বাদের,যা মানুষকে ভাবাবে। ছবির তিনটি প্রধান চরিত্র এক রসায়নের ফলে এক ত্রিমাত্রিক ডায়মেনশন দেবে।

বহুদিন আগেই বিজ্ঞানী ও মনস্তত্ত্ববিদ এমিল ক্রেপেলিন প্রথম মানসিক স্থিতির দুটি শ্রেণীবিন্যাস করেছিলেন। এক, সাইকোসিস,২) নিউরোসিস। দুটোই এক পর্যায়ে গিয়ে সাইকো সোমাটিক ডিসঅর্ডারের শিকার হয়। অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, দেয়ার ইজ নও জিনিয়াস উইদাউট হেডিং এ টাচ্ অফ ম্যাডনেস। আমরা রিচার্ড ফাইনম্যানকে জানি, যিনি যুবতী ছাত্রী কল্পনা করে তার ন্যুড ছবি আঁকতেন। গবেষণায় সহযোগী ছাত্রীকে বিছানায় টেনে নিয়ে যেতেন । অরাজি হলে তাঁকে হেনস্থা করতেন। জিনিয়াসের যৌন বিকৃতিকে আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্র মানসিক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করলেও ,তাঁর ক্রিমিনাল অ্যাকটিভিটি থাকলেও তাঁর এক্সট্রা জিনিয়াস পাওয়াকেও অস্বীকার করার উপায় নেই। রবার্ট কুইলেনের একটি উক্তি দুর্দান্ত।
তিনি বলেছিলেন, জিনিয়াস বলতে যদি সত্যিই কিছু থেকে থাকে, তা হলো স্থিত:ধীভাবে একটি নির্দিষ্ট দিকে মনোযোগ রক্ষার সামর্থ্য, যতক্ষণ অব্দি না সে ব্যাপারে সম্যক জ্ঞানলাভ করা যায়।

জিনিয়াসরা যেমন অস্বাভাবিক মানসিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, তেমন তাঁরা মস্তিষ্ককে সামাজিক দায় থেকে মুক্ত করে রাখেন, ফলে তাঁরা মস্তিষ্কের সমস্ত প্রাণশক্তি সৃষ্টিশীল কাজে ব্যবহার করেন। ফ্রয়েড একে বলেছেন, নার্সিসিস্টিক নিউরোসিস। এখন দেখার বিষয়, পরিচালক অংশুমান ব্যানার্জি তাঁর লার্জ পেগ ছবির উপস্থাপনায় কতটা মুন্সিয়ানা দেখাবেন। ছবির ট্রেলার দেখে যতটুকু বোঝা গেলো, রসদ আছে পূর্ণমাত্রায়। তবে তা পূর্ণাঙ্গ ছবির ভবিষ্যত নির্ধারণ করে না। ছবিটি না দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.