*৭০এর দশকের মঞ্চ কাঁপানো নাটক টাকার রং কালো আসছে বড় পর্দায়।ছবির ট্রেলার ও মিউজিক লঞ্চে এসে কুমার শানু প্রশ্ন তুললেন, টাকার রং কি আদৌ কালো হয়? তাহলে আর টাটা আম্বানি তৈরি হতো না।*
শ্রীজিৎ চট্টরাজ : কলকাতা, ২৯ মে ২০২২। গত ২৬ মে বৃহস্পতিবারের বিকেল। উত্তর কলকাতার প্রান্তিক অঞ্চলের উপনগরী লেকটাউন। নির্ধারিত সময় ৪ টে। ৭০ এর দশকের মঞ্চ কাঁপানো নাটক টাকার রং কালো ছবির ট্রেলার ও মিউজিক লঞ্চের অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল এক ব্যাঙ্কয়েটে। হাজির ছিলেন পরিচালক কল্যাণ সরকার, ছবির সঙ্গীত পরিচালক অশোক ভদ্র এবং অনুষ্ঠানের মুখ্য আকর্ষণ কুমার শানু। সঙ্গীত পরিচালক অশোক ভদ্রের ভাষায় ভারতের মেলোডি কিং কুমার শানু এলেন নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছু পরে। সেটাই তো স্বাভাবিক। উৎসুক অনুরাগী আর মিডিয়াকে যদি একটু অপেক্ষায় না রাখা যায় ,তাহলে সেলিব্রেটির মূল্য কি?
১৯৬৫ র ২অক্টোবর। উত্তর কলকাতার বনেদি নাটক পাড়ার ঐতিহ্যবাহী অধুনা বিলুপ্ত মঞ্চ রংমহলে টাকার রং কালো নাটকের প্রথম অভিনয় । শিল্পী তালিকায় ছিলেন নক্ষত্ররা। মূল চরিত্র পশুপতি সমাদ্দারের চরিত্রে ছিলেন সত্য বন্দোপাধ্যায়। তাঁর অনুপস্থিতিতে হরিধন মুখোপাধ্যায়। প্রফেসরের চরিত্রে কিংবদন্তি অভিনেতা জহর রায় বা মনু মুখোপাধ্যায়। পশুপতি সমাদ্দারের স্ত্রীর চরিত্রে ছিলেন সরযূবালা দেবী ও মমতা বন্দোপাধ্যায়। অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে ছিলেন সবিতাব্রত দত্ত , অজিত চট্টোপাধ্যায় , দীপিকা দাসের মত অভিনেতা অভিনেত্রীরা। বছর ভর সে নাটক থাকত হাউস ফুল। নাটকের কাহিনী ও গীত রচয়িতা হাস্যরসের ফল্গুধারার কারিগর নাট্যকার সুনীল চক্রবর্তী। তাঁর আর একটি কীর্তি মঞ্চসফল নাটক আমি মন্ত্রী হব। সেখানেও মন্ত্রী হতে প্রত্যাশীর চরিত্রে দাপিয়ে অভিনয় করেছিলেন জহর রায়। সেসব দিন আজ অতীত। কিন্তু বাংলা পেশাদারী মঞ্চে বিপ্লব বলা যায়।
আমি মন্ত্রী হব নাটকটি ইতিমধ্যেই কয়েক বছর আগে সিনেমায় রূপান্তর করেন লেখকের পুত্র পার্থ চক্রবর্তী। ব্যক্তিগত জীবনে যিনি ছিলেন দূরদর্শনের নাট্য বিভাগের প্রযোজক। এই মুহূর্তে টাকার রং কালো সফল নাটকের চিত্রনাট্য রচনা করেছেন পার্থ চক্রবর্তী। একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন পার্থ বাবু। মূলত পার্থর উদ্যোগেই টাকার রং কালো নাটকটি আরও দুটি নাটকের সঙ্গে বইয়ের আকারে প্রকাশিত হয়। বইটির ভূমিকা লিখতে গিয়ে কিংবদন্তি নাট্যকার স্টার থিয়েটারের বহু নাটকের স্রষ্টা দেবনারায়ণ গুপ্ত বইটির ভূমিকা লিখতে গিয়ে বলেছিলেন, বাণিজ্যিক সফল নাট্যকার সুনীল চক্রবর্তী তাঁর প্রাপ্য সম্মান পাননি। এমনকি তৎকালীন রঙমহল মঞ্চের শিল্পী ও কর্মকর্তারাও সামান্য সৌজন্য দেখিয়েও তাঁকে মরণোত্তর সম্মান জানাননি। এসব সম্ভব এই পোড়া দেশেই।
এই মুহূর্তে প্রয়াত নাট্যকার সুনীল চক্রবর্তীর নাটক টাকার রং কালো চিত্রায়িত করেছেন নবাগত পরিচালক পেশায় সরকারি ইঞ্জিনিয়ার কল্যাণ সরকার। ছবির মূল শিল্পী তালিকায় আছেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, বিশ্বনাথ চক্রবর্তী, কাঞ্চন মল্লিক, তনিমা সেন, লাভলি মৈত্র, রাত্রি ঘটক ও অমিতাভ ভট্টাচার্য। এক অসাধু ধনী ব্যবসায়ীর টাকার প্রতি নাড়ির টান এবং সঞ্চিত কালো টাকা চুরি যাওয়ায় যে সব আলোড়ন ঘটল, সেই সব মুহূর্তই হাস্যরসের মোড়কে নাট্যকার পরিবেশন করেছিলেন নাটকে। ছবির চিত্রায়নে কতটা নাট্যকারের মর্যাদা পরিচালক রাখতে পারবেন তা ছবি রিলিজ হলে বোঝা যাবে। তবে অশোক ভদ্রের মেলোডি সুরে কুমার শানু বা রূপঙ্কর বাগচীর গান যে দর্শক ও শ্রোতার মনে আঁচড় কাটবে বলাই যায়।কুমার শানু ছবির ট্রেলার ও মিউজিক লঞ্চের পর সাংবাদিকদের জানালেন, সত্যিই কি টাকার রং কালো হয়? তাহলে আর টাটা, বিড়লা, আম্বানির সৃষ্টি হতো না। যাই হোক, বাংলা ছবির দর্শককে বলবো, বাংলা ছবি হলে গিয়ে দেখুন। অসামান্য সুর করেছে অশোক ভদ্র। ওঁর সঙ্গে আমার প্রচুর গান আছে। ওঁর সুরারোপিত তিনশো ছবিতেই আমি গান গেয়েছি। আজও ওঁর সুরে গান রেকর্ড করে আসছি। অশোক ভদ্র জানালেন, একটি বাংলা ছবিতে আটটি গান। সবকটাই কোনটা একক, কোনোটায় সহশিল্পী। কিন্তু সবকটাতেই আছে শানু। এটা বাংলা ছবির গানে আজও রেকর্ড। অনুষ্ঠান যেহেতু ট্রেলার ও মিউজিক লঞ্চ, সেহেতু আকর্ষণের সবটুকু আলো কুমার শানু শোষণ করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। আর সেটাই হলো।
তবে এই প্রতিবেদকের দীর্ঘ ৪২,বছরের অভিজ্ঞতায় যা দেখা হয়নি তাই প্রত্যক্ষ করলাম মঞ্চে গায়ক, সংগীত পরিচালক ও পরিচালক। একবারের জন্য অনুষ্ঠানে হাজির ছবির চিত্রনাট্যকার পার্থ চক্রবর্তী ,সম্পাদক ও ছবির রোমান্টিক জুটির সুনীতা মণ্ডলকে মঞ্চে ডাকা হলো না। সুনীতা সেই ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি। স্পষ্ট অভিযোগ করলেন, ছবির পোস্টার থেকেও আমাকে বাদ রাখা হয়েছে। এরকারণ অবশ্য পরিচালক ব্যাখ্যা করেননি। টাকার রং কালো হোক না হোক অনুষ্ঠানে যে একটু কালো রঙের পোঁচ পড়লো সেটা বলাই বাহুল্য।
Be First to Comment