শুভ জন্মদিন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়
বাবলু ভট্টাচার্য : ১৯৮৩ সালে ‘দুটি পাতা’ নামের ছবিটি নির্মিত হয়েছিল বলিউডের ঝড়তোলা রোমান্টিক ছবি ‘ববি’র আদলে। এ ছবিটি টলিউডের রোমান্টিক ছবির ধারাটাই বদলে দেয়। সুপারডুপার হিট হয়েছিল ‘দুটি পাতা’। আর এ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রসেনজিতের অভিষেক হয়েছিল নায়ক হিসেবে। তখন তার বয়স মাত্র ১৯। ওই বয়সেই বাজিমাত করেছিলেন আজকের কোটি কোটি সিনেমা দর্শকের প্রিয় অভিনেতা প্রসেনজিৎ। সবাই যাকে ভালোবেসে ডাকে ‘বুম্বাদা’ বলে। এরপর ‘অমর সঙ্গী’, ‘আপন আমার আপন’, ‘কথা দিলাম’-এর মতো ছবিগুলো প্রসেনজিৎকে আরো শক্ত অবস্থানে পৌঁছে দেয়। ‘অমর সঙ্গী’ ছবিটি ছিল তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। এরপর তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
৩২ বছরের ফিল্মি ক্যারিয়ারে প্রসেনজিৎ ৫০ জনেরও বেশি অভিনেত্রীর বিপরীতে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি করেছেন শতাব্দী রায় ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে ৫০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ। দেবশ্রীর সঙ্গে ২৫টিরও বেশি ছবিতে, রচনা ব্যানার্জির সঙ্গে ৩৫টি, ইন্দ্রানি হালদারের সঙ্গে ১৬টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। মাত্র চার বছর বয়সে প্রথম অভিনয় করেছিলেন প্রসেনজিৎ। বাবা অভিনেতা বিশ্বজিতের ‘ছোট্ট জিজ্ঞাসা’য় শিশুশিল্পী হিসেবে অভিষেক হয়েছিল তার। এটা ১৯৬৯ সালের কথা। যখন তার বয়স মাত্র ১৬, মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। ওই বয়সেই পিতৃহীন পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বুম্বা। মা আর ছোট বোন পল্লবী চ্যাটার্জির দায়িত্ব নেওয়ায় জীবিকার তাগিদে তাকে অভিনেতারূপে আত্মপ্রকাশ করতে হয়েছিল।
এরপর খ্যাতি, জনপ্রিয়তা, অর্থবিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তি, প্রতিষ্ঠা— সবই অর্জন করেছেন প্রসেনজিৎ। নানা চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছেন তিনি। টলিউডের বাংলা সিনেমাতেই প্রসেনজিতের ক্যারিয়ার সীমাবদ্ধ নেই। বলিউডেও তার ক্যারিয়ার বিস্তৃত হয়েছে। ১৯৯০ সালে হিন্দি সিনেমা ‘আঁধিয়া’য় প্রথম অভিনয় করেন। এরপর ‘মিত মেরে মন কে’ ছবিতে তাকে দেখা গেছে। এরপর ‘বীরতা’ নামে আরো একটি বলিউডি ছবিতেও অভিনয় করেন বুম্বা। কিন্তু বলিউডে প্রসেনজিতের কপাল খোলেনি। যে কারণে অনেক দিন হিন্দি সিনেমায় তাকে দেখা যায়নি। ২০ বছর পর দিবাকর ব্যানার্জির ‘সাংহাই’ ছবিতে একজন রাজনীতিবিদের ভূমিকায় ছোট একটি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডে তার প্রত্যাবর্তন ঘটেছে।
টালিউডের গতানুগতিক অ্যাকশন, রোমান্টিক, কমেডি ছবিতে নিজের ক্যারিয়ারকে সীমাবদ্ধ রাখেননি প্রসেনজিৎ। ২০০৩ সালে ঋতুপর্ণ ঘোষ তার ‘চোখের বালি’ ছবিতে ঐশ্বরিয়া রাইয়ের বিপরীতে প্রসেনজিৎকে অভিনয় করিয়েছেন। ওটা ছিল ঋতুপর্ণের একটা এক্সপেরিমেন্ট। সেই এক্সপেরিমেন্টের পর তার ক্যারিয়ারে নতুন অধ্যয়ের সূচনা হয়। এরপর ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘দোসর’ ছবিতে একজন অবিশ্বস্ত স্বামীর ভূমিকায় অভিনয় করেন— যা প্রসেনজিৎকে জাতীয় পুরস্কার এনে দেয়।
প্রসেনজিৎ নিজেই স্বীকার করেন যে, ‘দোসর’ ছবিটি তার জন্য মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ ওই ছবিতে তার অভিনীত কৌশিক চরিত্রটি নিয়ে অনেক সংশয় ছিল। এ ধরনের চরিত্র দর্শক আগে বাংলা ছবিতে দেখেনি। ফলে দর্শকদের কথা ভেবে প্রসেনজিৎ অনেকটা দ্বিধায় ছিলেন।
এর পর থেকে বাণিজ্যিক ধারার ছবির পাশাপাশি শিল্পশোভন ছবিতে সমানতালে অভিনয়ের মাধ্যমে নিজের দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে চলেছেন তিনি। এ ধারায় ‘মনের মানুষ’, ‘অটোগ্রাফ’, ‘চলো পাল্টাই’, ‘২২শে শ্রাবণ’, ‘নৌকাডুবি’, মিশর রহস্য’, ‘জাতিস্মর’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ। এই অভিনেতা পরিচালিত পুরুষোত্তম ছবিটি বাংলা সিনেমার প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি। বিগ বাজেটের এই ছবিটি ওড়িয়া ও বাংলা ভাষায় ১৯৯২ সালে মুক্তি পেয়েছিল।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ১৯৬২ সালের আজকের দিনে (৩০ সেপ্টেম্বর) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment