শু ভ জ ন্ম দি ন ক পি ল দে ব
বাবলু ভট্টাচার্য : টেস্ট ইতিহাসের ‘একমাত্র’ ক্রিকেটার, যার রয়েছে ৪০০০ রান এবং ৪০০ উইকেটের ‘আল্টিমেট ডাবল’ অর্জনের কৃতিত্ব। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যিনি সর্বপ্রথম পেরিয়েছিলেন ২০০ উইকেটের মাইলফলক। ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন তিনি।
তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের প্রথম ফাস্ট বোলিং আইকন, প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক, ‘হরিয়ানা হারিকেন’ খ্যাত কিংবদন্তি অলরাউন্ডার কপিল দেব।
২০০২ সালে ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ খ্যাত উইজডেন ভারতের শতাব্দী সেরা ক্রিকেটার হিসেবে নির্বাচিত করেছিল কপিল দেবকে। শচীন টেন্ডুলকার ও সুনীল গাভাস্কারের মতো কিংবদন্তিকে পেছনে ফেলে পুরস্কারটি জিতে নেন কপিল।
ক্রিকেটবোদ্ধাদের চোখে ভারতের সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলারের নাম কপিল দেব। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কপিল ছিলেন দলের এক নম্বর স্ট্রাইক বোলার। বল হাতে একাই জিতিয়েছেন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। টেস্টে পেসার হিসেবে ভারতের পক্ষে সবচেয়ে বেশি উইকেট (৪৩৪), সেরা বোলিং গড় (২৯.৬৪) এবং সেরা বোলিং ফিগারের (৯/৮৩) কীর্তিও তাঁর দখলে।
কপিলের আবির্ভাব হয়েছিল এমন একটা সময়ে, যখন ভারত ছিল সম্পূর্ণ স্পিন নির্ভর একটা দল। ফাস্ট বোলার দূরের কথা, উইকেট নিতে জানা একজন মিডিয়াম পেসার পর্যন্ত ছিল না! আসলে ভারতীয় ক্রিকেটে ফাস্ট বোলিং লিগ্যাসিই কখনও গড়ে ওঠে নি।
তিরিশের দশকে মোহাম্মদ নিসার-অমর সিং জুটির পর বলার মতো পেসার আর একজনও উঠে আসে নি। ফাস্ট বোলার সংকটে হাঁসফাস করতে থাকা ভারতীয় ক্রিকেটে কপিল এসেছিলেন এক পশলা স্বস্তির নিঃশ্বাস হয়ে।
বল হাতে কপিলের সাফল্যের মূল রহস্য ছিল শৃঙ্খলা, ফিটনেস আর ম্যারাথন দৌড়বিদের মতো অবিশ্বাস্য স্ট্যামিনা। ক্লান্তিহীনভাবে বোলিং করে যেতে পারতেন ঘন্টার পর ঘন্টা, স্পেলের পর স্পেল।
পারফেক্টলি সাইড অন একশনের কারণে ন্যাচারাল আউটসুইং হতো কপিলের বলে। তার সিগনেচার ডেলিভারিই ছিল আউটসুইঙ্গার। ইনসুইঙ্গারও দিতেন তবে কদাচিৎ।
কেবল ফাস্ট বোলারই নন; তিনি ছিলেন একজন অ্যাগ্রেসিভ লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং অ্যাথলেটিক ফিল্ডার। তাকে মনে করা হয় আধুনিক হেলমেটবিহীন যুগের সেরা পাওয়ার হিটারদের একজন।
পুল এবং হুক শটে পারদর্শী কপিলের মূল দর্শন ছিল একটাই— আক্রমণ। প্রথম বল থেকে প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর চড়াও হতে চাইতেন তিনি। ওয়ানডের স্লগ ওভারে দ্রুত রান তোলায় ছিলেন দারুণ পারদর্শী। এমনকি টেস্ট ম্যাচেও ব্যাট করতেন ওয়ানডে স্টাইলে।
১৯৮৩-র বিশ্বকাপে ভারতীয় দল নিয়ে কারোরই কোনও আশা ছিল না। আগের দুবার ছ’ম্যাচ খেলে মাত্র ১টি ম্যাচ জিতেছিল পূর্ব আফ্রিকার সঙ্গে। যাই হোক সেবার ২৪ বছর বয়সী ছেলেটি অধিনায়ক। তবে সেই নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে প্রথম ম্যাচে আগের দু’বারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় ভারত। পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারালেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারে ১৬২ রানে। তবে সেই ম্যাচে অধিনায়ক ছেলেটি ৪৩ রানে পায় ৫ উইকেট।
ফাইনালে ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে মাত্র ১৮৩। কিন্তু অনেকখানি দৌড়ে অসাধারণ দক্ষতায় ভিভ রিচার্ডসের ক্যাচ তালুবন্দি করে ফের দলকে উদ্দীপ্ত করলেন সেই অধিনায়ক। প্রথম এশীয় অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জিতলেন কপিল দেব।
কপিল দেব টেস্ট ইতিহাসে তখন একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি একইসঙ্গে ব্যাটিংয়ে ৪,০০০ রান আর বোলিংয়ে ৪০০ উইকেট শিকারি। তিনিই একমাত্র অধিনায়ক, যিনি এক ইনিংসে ৯ উইকেট নিয়েছেন।
একজন খেলোয়াড়কে শুধু মাঠে নয়, তাকে লড়াই করতে হয় ফিটনেস ঠিক রাখার ক্ষেত্রেও। ১৬ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে ইনজুরির কারণে কখনোই কোনও টেস্ট ম্যাচ মিস করেননি কপিল। ১৮৩ ইনিংসের টেস্ট ক্যারিয়ারে কখনোই রান আউট হননি কপিল।
কপিল দেব নিখঞ্জ ১৯৫৯ সালের আজকের দিনে (৬ জানু) হরিয়ানা প্রদেশের রাজধানী চন্ডীগড়ে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment