শুভ জন্মদিন কেট উইন্সলেট
বাবলু ভট্টাচার্য : কেট উইন্সলেট! পুরো নাম, কেট এলিজাবেথ উইন্সলেট নামটি শুনলেই মোহনীয় এক সুন্দরীর চেহারা মনের পর্দায় ভেসে ওঠে, তাই না? ঐ যে, টাইটানিক সিনেমার নায়িকা! যার নাম ছিল রোজ, আর তার প্রেমিকের নাম ছিল জ্যাক। হ্যাঁ, আমাদের অধিকাংশ দর্শকের সাথে এই সুন্দরীর প্রথম পরিচয় ‘টাইটানিক’ সিনেমার মাধ্যমেই। বাবা রজার উইন্সলেট ও মা স্যালি অ্যানি ব্রিজেস-উইন্সলেট দুজনেই মঞ্চে অভিনয় করতেন। দাদু অলিভার আর দিদিমা লিন্ডা ব্রিজেস চালাতেন রিডিং রেপার্টরি থিয়েটার। মামা রবার্ট ব্রিজেস চাকরি করতেন লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ড থিয়েটার ডিস্ট্রিক্টে। অর্থাৎ কেট উইন্সলেট এমন এক পরিবারে বেড়ে উঠেছেন, যেখানে নিয়মিত অভিনয় ও সংস্কৃতি চর্চা হয়েছে। পারিবারিকভাবে পাওয়া সহজাত প্রতিভার বলেই হয়তো মাত্র ১১ বছর বয়সে প্রথম টিভি বিজ্ঞাপনে কাজ করেন কেট। সেই সাথে অ্যাকাডেমিকভাবে অভিনয় শেখার জন্য ভর্তি হন হাইস্কুলের পারফর্মিং আর্টসে। পরবর্তী কয়েক বছর অভিনয়ের কলাকৌশল রপ্ত করার পাশাপাশি নিয়মিত সেগুলোকে হাতে-কলমে প্রয়োগ করতে থাকেন বিভিন্ন সিটকমে অল্প-বিস্তর অভিনয় করার মাধ্যমে। ৬ বছর পর প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ পান ‘হ্যাভেনলি ক্রিয়েচারস’ (১৯৯৪) নামের একটি চলচ্চিত্রে, যেখানে তাকে একজন খুনে কিশোরীর চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছিল। সিনেমাটি বক্স অফিসে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু করতে না পারলেও, সমালোচকদের কাছ থেকে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল।

পরের বছর অডিশন দিলেন অ্যাং লি’র ‘সেন্স অ্যান্ড সেন্সেবিলিটি’ (১৯৯৫) চলচ্চিত্রের জন্য। নিজের অভিনয় নৈপুণ্যে অডিশনের সবাইকে হারিয়ে দিয়ে বগলদাবা করেন চরিত্রটি। শুধু তা-ই নয়, এই চলচ্চিত্র দিয়েই তিনি জিতে নেন ব্রিটিশ একাডেমি অ্যাওয়ার্ড। সাথে বাড়তি পাওনা হিসেবে মাত্র ২০ বছর বয়সেই পেয়ে যান সেরা পার্শ্ব-অভিনেত্রী হিসেবে অস্কারের মনোয়ন! এরপর তিনি ‘জুড’ এবং ‘হ্যামলেট’ নামের দুটো চলচ্চিত্রে কাজ করলেন ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৭ সালে জেমস ক্যামেরনের পরিচালনায় অভিনয় করলেন বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘টাইটানিক’-এ। এই ছবি তাকে রাতারাতি আন্তর্জাতিক তারকা বানিয়ে দিল। মোহনীয় রূপ দিয়ে কোটি পুরুষের হৃদয় তো হরণ করলেনই, সেই সাথে সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে রোল মডেল হয়ে গেলেন তৎকালীন নারীদের কাছেও! দ্বিতীয়বারের মতো অস্কারের জন্য মনোনয়ন পেলেন কেট। অবশ্য এবার সেরা অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে। এত অল্প বয়সে অস্কারে দুটো মনোয়ন পেয়ে অনন্য এক কীর্তি গড়েছিলেন কেট।রাতারাতি খ্যাতি পাওয়ার পরও তিনি স্টারডমে গা ভাসাননি। গুজব আছে, শেকসপিয়র ইন লাভ (১৯৯৮) ও অ্যানা অ্যান্ড দ্য কিং (১৯৯৯) এই সিনেমা দুটোতে তাকে অভিনয় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কেট রাজি হননি।ফলস্বরূপ, ‘হিডিয়াস কিনকি’ (১৯৯৮) সিনেমায় তিনি একজন সিঙ্গেল মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। ‘হলি স্মোক’ (১৯৯৯)-এ অভিনয় করেন কট্টরপন্থী চরিত্রে।

একে একে ব্যতিক্রমধর্মী সব চরিত্র রূপায়ণের মাধ্যমে এগিয়ে চলে কেট উইন্সলেটের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। অভিনয় করেন ‘কুইলস’ (২০০০), ‘ইনিগমা’ (২০০১), ‘লাইফ অব ডেভিড গ্যাল’ (২০০৩) ইত্যাদি চলচ্চিত্রে। পাশাপাশি কণ্ঠ দেন ‘অ্যা ক্রিসমাস ক্যারল’ (২০০১) নামের অ্যানিমেটেড সিনেমায়, এখানে তার কণ্ঠে গাওয়া একটা গানও রয়েছে। ‘হোয়াট ইফ’ শিরোনামের গানটি ২০০১ সালের নভেম্বরে সিঙ্গেল ট্র্যাক হিসেবে মুক্তি দেওয়ামাত্র ইউরোপের টপ টেন হিট চার্টে জায়গা করে নেয়। সেই সাথে প্রথম স্থান দখল করে নেয় অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম এবং আয়ারল্যান্ডের মিউজিক চার্টে। শুধু তা-ই নয়, ২০০২ সালে ওজিএই সং কনটেস্টে পুরস্কার জিতে নেয় কেটের গানটি। ২০০৪ সালে কাজ করেন ‘ইটারনাল সানশাইন অব দ্য স্পটলেস মাইন্ড’ ছবিতে। বিখ্যাত অভিনেতা জিম ক্যারির সাথে তাকে দেখা যায় এই চলচ্চিত্রে। আবারও অস্কারের জন্য মনোনয়ন পান কেট। মাত্র ২৯ বছর বয়সে মোটমাট চারবার অস্কারের জন্য মনোনয়ন! অস্কারের ইতিহাসে কেট উইন্সলেট গড়লেন এক কৃতিত্বময় রেকর্ড। এই সিনেমায় কেটের তুখোড় অভিনয়ের জন্য এটিকে পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ১০০ অভিনয়ের তালিকায় (২০০৬) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ‘ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড’ (২০০৪) সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন আরেক কিংবদন্তী অভিনেতা জনি ডেপের সাথে। তার ক্যারিয়ারে টাইটানিকের পর এই সিনেমা বক্স অফিসে সর্বোচ্চ সাফল্য লাভ করে।২০০৭ সালে পুনরায় জুঁটি বাধেন টাইটানিক সিনেমার নায়ক লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর সাথে, সিনেমার নাম ‘রেভল্যুশনারি রোড’। পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কেটের দ্বিতীয় স্বামী স্যাম মেন্ডিজ। এই সিনেমার জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার জিতে নেন কেট। গ্লোডেন গ্লোবের জন্য মোট সাতবার মনোনয়ন পেয়েছিলেন এই মেধাবী অভিনেত্রী। ২০০৮ সালে কেট অভিনয় করেন বিশেষ এক সিনেমায়, নাম ‘দ্য রিডার’। বরাবরের মতো এবারও পেয়ে যান অস্কারের মনোনয়ন; ৬ষ্ঠ বার! তবে এবার শুধু মনোনয়ন পেয়েই ক্ষান্ত দেননি। অস্কারের আরাধ্য পুরস্কারটি বগলদাবা করে নেন তিনি। সাথে ঝুলিতে তোলেন বাফটা পুরস্কার, গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার ও স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার! ২০১৩ সালে তাকে আবার দেখা যায় ‘দ্য লেবার’ নামের সিনেমায়। কেট এবার ছিলেন ১৩ বছর বয়সী এক ছেলে সন্তানের সিঙ্গেল মায়ের চরিত্রে। দুর্দান্ত অভিনয়ের ফলস্বরূপ ১০ম বারের মতো গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডের মনোয়ন পান তিনি। ২০১৪ সালে তিনি অভিনয় করেন পিরিয়ড ড্রামা ‘অ্যা লিটল ক্যাওস’-এ। আবার কণ্ঠ দেন অডিওবুকে, এবার ‘মাটিলডা’ নামের শিশুতোষ উপন্যাস। খুব দরদ দিয়ে কাজটি করার ফলও পেয়েছেন, জিতেছেন ওডেসি অ্যাওয়ার্ড।

‘স্টিভ জবস’, ২০১৫ সালে কেটের শেষ সিনেমা। এখানে কেটের চরিত্র ছিল স্টিভ জবসের ডান হাত হিসেবে একজন বিত্তশালী কর্পোরেট নারী ভূমিকায়। পোলিশ উচ্চারণ আর কড়া মেকআপে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দর্শকদের সামনে হাজির হয়ে চমকে দেন কেট। পেয়ে গেলেন স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড ও অস্কারের মনোয়ন, ৭ম বারের মতো! সাথে জিতে নেন গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড ও বাফটা পুরস্কার।
কেট উইন্সলেট ১৯৭৫ সালের আজকের দিনে (৫ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যের, বার্কশায়ারের রিডিং-এ জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment