শু ভ জ ন্ম দি ন জে ট লি
বাবলু ভট্টাচার্য : কুং ফু’র মেগা-তারকা ব্রুস লির মৃত্যুর পর দ্বিতীয় কোনো অভিনেতা যার হাত ধরে বিশ্বে চীনের ঐতিহ্যবাহী উশুর ক্রিড়া বিষয়ে প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি হয়। রাতারাতি তিনিও বিশ্ব চলচিত্রাঙ্গনে অতি পরিচিত এবং দর্শক প্রিয় অভিনেতা হয়ে উঠলেন। স্বাভাবিক ভাবেই তার নামের পাশে মেগা-তারকা শব্দটি আজীবনের তরে খোঁচিত হয়ে থাকলো। তিনি জেট লি।
জেট লি’র আসল চাইনিজ নাম ‘লি লিয়েন চেই’। তাকে কংফু রাজা বলেও গণ্য করা হয়।
তিনি ছিলেন পরিবারের সবচেয়ে ছোট ছেলে। তার দু’বছর বয়সে বাবা এক আকস্মিক ঘটনায় মারা যান। পাঁচ সন্তান আর দু’জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে লালন পালনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব মা তার কাঁধে তুলে নেয়। সাত বছর বয়সে ক্রীড়া শিক্ষকের সুপারিশে জেট লি পেইচিং ক্রীড়া স্কুলের ‘উশু’ ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালের দেশব্যাপী ‘উশু’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন জেট লি।
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত একটানা পাঁচ বছর ধরে দেশের উশু প্রতিযোগিতার ১ম স্থানের পুরস্কারটি নিজের দখলে রাখেন। ৭০ দশকে চীনের উশু মহলে জেট লি’র নাম সবার মুখেমুখে।
১৯৮০ সালে ‘শাওলিন ট্যাম্পল’ নামে চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এ চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য চলচ্চিত্র পরিচালক চাং সিন ইয়েন জেট লি’কে আমন্ত্রণ জানায়।
মূলত এই চলচিত্রটিকেই তার চলচিত্র ক্যারিয়ারে শিখর স্পর্শের শুভ সুচনা বলা যেতে পারে। কেননা ‘শাওলিন ট্যাম্পল’-এর শুভমুক্তির পর চলচ্চিত্র অঙ্গনসহ বিশ্বের প্রায় সকল ধরনের পরিবেশনা শিল্প অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
৯০ দশকের প্রথম দিকে জেট লি হংকং চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত হন। তিনিই হচ্ছেন ৯০ দশকের হংকং চলচ্চিত্রের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করা আর এক জনপ্রিয় কুংফু তারকা জ্যাকি চ্যানের সমান্তরালে উঠে আসেন।
১৯৯৭ সালের পর জেট লি হংকং ত্যাগ করে হলিউড চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত হন। স্বাভাবিক ভাবেই হলিউড চলচ্চিত্রের বাজার বিশ্ব বিস্তৃত এবং এর অর্থনৈতিক লেনদেনের পরিমানও অনেক বড়। ফলে অতিদ্রুতই তার নামের পাশে হলিউড চলচিত্রের প্রথম-শ্রেণীর এ্যকশন হিরোর তকমাটাও বেশ শক্ত-পোক্ত ভাবেই লেগে যায়।
২০০৭ সাল পর্যন্ত হলিউডে প্রত্যেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য তাঁকে এক কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার প্রদান করা হতো। বলা যায়, তিনিই হচ্ছেন এশিয়ার সবচেয়ে দামী অভিনেতা।
২০০৪ সালে অবসর যাপনের জন্য কিছু দিনের জন্য মালদ্বীপে আসেন জেট লি। এ সময়ে অর্জিত কিছু অভিজ্ঞতা তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনে দেয়। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর যখন জেট লি মালদ্বীপে আনন্দ-অবসরে আসেন তখন সেখানে হঠাৎই ভয়াবহ জলোচ্ছাস ও ভূমিকম্প ঘটেছিলো।
সৌভাগ্যক্রমে তিনি অক্ষত থেকেই ঝড় জলোচ্ছাস মোকাবেলা করেন। সেই ভয়াবহ দুর্যোগ-অভিজ্ঞতা এরপর তার জীবনে গভীর রেখাপাত করে। তিনি ‘ওয়ান ফাউন্ডেশান’ নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গঠন করে নিজের একাগ্র তৎপরতার মাধ্যমে দূর্গত, দুঃস্থ মানুষদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার আহবান জানান। এই ঘটনা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার ভক্ত-অনুরাগীদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেন।
জেট লি ১৯৬৩ সালের আজকের দিনে (২৬ এপ্রিল) চীনের পেইচিং শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment