Press "Enter" to skip to content

১৯৭৩ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে রূপালি পর্দায় প্রথম পা রাখার ৪৫ বছর পরও চিত্রজগতে ‘আমির’ হয়ে রয়েছেন আমির খান…..।

শুভ জন্মদিন আমির খান

বাবলু ভট্টাচার্য : একটি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক- বলিউডের তিন খানের মধ্যে দুজনই শুটিংয়ে এলেন নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। তারপর, অনিচ্ছা সত্ত্বেও ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন তাঁরা। আর এক খান শুটিংয়ে এলেন যথা সময়ে। পরিচালক শুটিং শেষ ঘোষণা দেওয়ার পরও তিনি বলছেন, “আরেকটা টেক নেওয়া যায় কি?” এখন প্রশ্ন, কে এই তৃতীয় খান?

ফোর্বস ম্যাগাজিনে এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে স্বনামধন্য বিনোদন বিশ্লেষক রব কেইন শুনিয়েছেন এই গল্পটি। এর সঙ্গে আরো শুনিয়েছেন আমির খানের ‘আমির’ হয়ে ওঠার গল্প। ‘কেমন করে আমির খান তরুণ রোমান্টিক নায়ক থেকে চলচ্চিত্র জগতে একজন দার্শনিক রাজা হয়ে উঠলেন’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে লেখক এই অভিনেতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

তাঁর মতে, বড় পর্দায় স্থায়ী হওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়। অনেকে চলচ্চিত্রে এসে চোখের পলকে প্রতিষ্ঠা পান। অনেকে অনেক চেষ্টায় ‘তারকা’ খ্যাতি লাভ করলেও, দু-চারটি সিনেমায় ব্যর্থতার পর হারিয়ে যান স্মৃতির গহ্বরে।

কিন্তু, বলিউডের আমির খানের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। ১৯৭৩ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে রূপালি পর্দায় প্রথম পা রাখার ৪৫ বছর পরও চিত্রজগতে ‘আমির’ হয়ে রয়েছেন এই অভিনেতা। তাঁর পেশাগত জীবনেও ব্যর্থতা এসেছিলো। নিন্দা, বিতর্ক, সমালোচকদের বিষমাখা বানে জর্জরিত হতে হয়েছিলো তাঁকেও। কিন্তু কোন কিছুই আমিরের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে পারেনি। তাঁর ভক্তের সংখ্যা ভারতের বাইরেও দিনকে দিন বেড়েই চলছে।

‘দঙ্গল’-এর কল্যাণে আমির পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনের আম-জনতার অন্তরেও জায়গা করে নিয়েছেন। এছাড়াও, সে দেশটির জনগণের কাছে সর্বকালের প্রিয় চলচ্চিত্রের তালিকায় ১২তম অবস্থানে রয়েছে আমির খানের ‘থ্রি ইডিয়টস’।

বিশ্লেষক কেইন এর মন্তব্য, বিশ্বে আরো অনেক নামি অভিনয়তারকা রয়েছেন, যেমন, টম ক্রুজ, উইল স্মিথ, জ্যাকি চ্যান, জেনিফার লরেন্স প্রমুখ। কিন্তু, বাস্তবতা হলো- সম্প্রতি তাঁদের অনেকের ছবিই ফ্লপ করেছে। অথবা, শুধুমাত্র তাঁদের নামের জোরেই ভক্তরা হুমড়ি খেয়ে ঢুকেন না প্রেক্ষাগৃহের ভেতরে। তবে আমিরের বিষয়টি দেখুন, সেই ১৯৮৮ সালে ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এ অভিনয়ের ফলে তারকা-খ্যাতির যে তকমা লেগেছিলো আমিরের কপালে, তা দিনে দিনে আরো উজ্জ্বল হয়েছে।

চলচ্চিত্রে আমিরের চলার পথ মসৃণ ছিলো না উল্লেখ করে বিশ্লেষক কেইন বলেন, আমির সবসময়ই নিজেকে পুনঃআবিষ্কার করে আজকের এই অবস্থানে এসেছেন। কেননা, তাঁর বাবা তাহির হোসেন প্রযোজক হিসেবে গাঁটের টাকা সিনেমার পেছনে ঢেলেছিলেন ঠিকই, কিন্তু সাফল্যের মুখ তেমনটি দেখতে পাননি। তাই অর্থের অভাবে আমিরের স্কুলে পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিশোর বয়সে আমির পড়ালেখা ও অভিনয়ের পাশাপাশি খেলাধুলায় মন দিয়েছিলেন যদি এতেই সাফল্য আসে। হাইস্কুলে পড়ার সময় তিনি চ্যাম্পিয়নশিপ-লেভেলের একজন টেনিস খেলোয়াড় হয়ে উঠেছিলেন।

পরে, আমির উপহার দেন ‘দিল হ্যায় কে মানতা নেহি’, ‘রাজা হিন্দুস্তানি’, ‘লগন’, ‘রঙ দে বসন্তী’, ‘তারে জমিন পর’, ‘পিকে’ ইত্যাদি। বেছে বেছে সিনেমা করার খ্যাতি রয়েছে তাঁর। তবে একের পর এক ব্লকবাস্টার ছবি বানিয়ে ও অভিনয় করে তারকা প্রতিষ্ঠা পেলেও শুধুমাত্র রূপালি পর্দায় তিনি নিজেকে আটকে রাখেননি আমির। সমাজ উন্নয়নে ও সামাজিক আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন তিনি। নিজেকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন মানবতাবাদী, স্পষ্টবাদী সমাজসেবক হিসেবেও।

এই আমিরের ঝুলিতে রয়েছে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ভারত সরকারের দেওয়া সম্মানজনক ‘পদ্মশ্রী’ ও ‘পদ্মভূষণ’, চীনা সরকারের দেওয়া বিশেষ সম্মান এবং নিউজউইক ম্যাগাজিনের দেওয়া বিশ্বের ‘সবচেয়ে বড় অভিনয়শিল্পী’-র খেতাব।

আজ আমির ভারতের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একজন অস্কার-মনোনীত চিত্র প্রযোজক, প্রভাবশালী দানবীর, তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর আয় অনেকের কাছে ঈর্ষণীয়। সর্বোপরি, তাঁর আচার-ব্যবহার বলিউডের অনেক নামি-দামি অভিনয়শিল্পীর তুলনায় অমায়িক। এসব মিলিয়ে জনমনে ‘আমির’ হয়ে উঠেছেন অভিনেতা আমির খান।

আমির খান ১৯৬৫ সালের আজকের দিনে (১৪ মার্চ) মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *