Press "Enter" to skip to content

১৯৬৫ সালে চলচ্চিত্রের জন্য ডাক পেলেন শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়। IPTA-র মঞ্চে তার অভিনয় দেখে পরিচালক মৃণাল সেন, তাঁর “আকাশকুসুম” ছবির জন্য শুভেন্দুকে মনোনীত করেন……।

Spread the love

স্মরণঃ শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়

বাবলু ভট্টাচার্য : সন্তান যদি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার না হতে পারে, তাহলে আর পড়াশোনা করে কী লাভ! অনেক বাবা-মায়ের হয়তো লজ্জায় মাথা কাটা যাওয়ার জোগাড়। ঠিক এমন অবস্থাতেই বিশ শতকের ছয়ের দশকে ডাক্তারি পেশাকে সারাজীবনের জন্য বিসর্জন দিয়ে অভিনয়ের জগতে চলে আসা মানুষটি শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়।

শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৬ সালের ২৯ নভেম্বর হাওড়ার বালিতে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানকার জোড়া অশ্বত্থতলা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা সম্পন্ন হয়। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি চলে আসেন কলকাতায় শহরে। তার বাবা শৈলেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং মা মনিমালা দেবী।

ছোটবেলা থেকেই তিনি খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। যেহেতু তাঁর ঠাকুর্দা ছিলেন পেশায় একজন ডাক্তার, বাবার ইচ্ছানুসারে ডাক্তারি পড়ার জন্য ডাক পড়ল তার।

১৯৯১ সালে কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে।

১৯৬০ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়। তারপর সিভিল ডিফেন্স এবং কলকাতা পুরসভায় স্বাস্থ্যদপ্তরে চাকরি শুরু করেন। কিন্তু বেশিদিন মন টেকেনি।

ছাত্রাবস্থায় দেখেছিলেন শ্রীরঙ্গমে শিশির ভাদুড়ীর নাটক “মাইকেল মধুসূদন দত্ত”। তখন থেকেই হৃদয়ে অভিনয়ের বীজ বপন করে অভিনেতা হওয়ার স্বপনে মত্ত ! সেই কারণে অভিনয়ের প্রতি ছিল প্রবল আকর্ষণ, করতেন উপভোগ। ডাক্তারি পড়তে পড়তেই IPTA বা গণনাট্য সংঘে যোগদান করেন। সেখানে তখন তাঁর শিক্ষক বা গুরু ছিলেন জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়।

১৯৬৫ সালে চলচ্চিত্রের জন্য ডাক পেলেন শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়। IPTA-র মঞ্চে তার অভিনয় দেখে পরিচালক মৃণাল সেন, তাঁর “আকাশকুসুম” ছবির জন্য শুভেন্দুকে মনোনীত করেন। সেখানে তার ‘বন্ধু’ হন ঐ ছবির নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ঐ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর তাকে ডেকে নিলেন সত্যজিৎ রায়। মহানায়ক উত্তমকুমারের সঙ্গে প্রথম অভিনয় তাঁর “চিড়িয়াখানা” চলচ্চিত্রে।

তারপর সত্যজিতের “অরণ্যের দিনরাত্রি”-তেও শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়! সেখানে তাঁর সঙ্গী রবি ঘোষ, শমিত ভঞ্জ ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আবার পরেও তিনি হয়েছেন মহানায়ক উত্তমকুমারের সঙ্গী সাহিত্যিক ‘শংকর’-এর লেখা সেই বিখ্যাত ছবির নাম “চৌরঙ্গী” !

তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র সমূহঃ ‘এখনই’, ‘ছদ্মবেশী’,
‘ভানু গোয়েন্দা জহর আ্যসিস্ট্যান্ট’, ‘বিগলিত করুণা জাহ্নবী যমুনা’, ‘প্রথম কদম ফুল’, ‘অমৃত কুম্ভের সন্ধানে’, ‘জীবন রহস্য’, ‘বহুরূপী’, ‘কুহেলী’, ‘আঁধার পেরিয়ে’, ‘গণশত্রু’, ‘কাঁচ কাটা হীরে’, ‘আবার অরণ্যে’।

ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবিতেও তিনি করেছেন অংশগ্রহণ,
‘ঝিনুকের বাবা’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন ‘দহন’।
‘লাল দরজা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ‘আনন্দলোক’ কর্তৃক পুরস্কৃত হন।

“ডাঃ মুন্সীর ডায়েরী” নামের যে ছোটগল্প লিখেছিলেন সত্যজিৎ রায়, পরে টিভিতে তার টেলিফিল্মেও তিনি ছিলেন ‘ডাঃ মুন্সী’-র ভূমিকায় !

অভিনেতা হিসেবে শুধু চলচ্চিত্র বা দূরদর্শনে নয়, মঞ্চে বেশ কয়েকটি থিয়েটারে অভিনয় করেছেন শুভেন্দু চ্যাটার্জি। যেমন আশির দশকে ‘বিলকিস বেগম’, ‘বিবর’, ‘অমর কণ্টক’, ‘কালবৈশাখী’, ‘বধূবরণ’ প্রভৃতি তারই কিছু সার্থক নাটক !

তিনি বেশ কয়েকটি যাত্রাপালাতেও অভিনয় করেছেন। যেমন, ‘এমন একটা মানুষ চাই’, ‘নকল স্বামীর ঘর’ !

তিনি সুকণ্ঠের অধিকারী একজন গায়ক ছিলেন। ‘আশা নদীর কূলে’, ‘সেই পলাতক পাখি’, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘একটি মোরগের কাহিনী’ ইত্যাদি কয়েকটি গানের রেকর্ড করেছিলেন তিনি !

শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় বলিউড এবং টলিউডের বলিষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে খ্যাতি আছে।

শুভেন্দু চ্যাটার্জি ২০০৭ সালের আজকের দিনে (৫ জুলাই) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.