Press "Enter" to skip to content

১৯৫৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘পথের পাঁচালী’। সেই একই বছরে মুক্তি পেয়েছিল কানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরো ৬টি ছবি……..।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ কানু বন্দ্যোপাধ্যায়

বাবলু ভট্টাচার্য : ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘অপরাজিত’ ছবিতে ‘হরিহর’ চরিত্রে অভিনয় করার সময় থেকেই কানুবাবুর সঙ্গে সত্যজিতের খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। হয়তো সেই সূত্র ধরেই পরবর্তীকালে কানুবাবুর পাড়াতেই সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘অপুর সংসার’ ছবির শুটিং করেছিলেন।

এ প্রজন্মের অনেকেই জানেন না ‘পথের পাঁচালী’ ছবিতে অভিনয় করার আগে কানুবাবু মোট ১০৪টি ছবিতে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। কানুবাবু যখন ছায়াছবির জগতে পথ চলতে শুরু করেছেন সেটা ১৯২৭ সাল। মানে নির্বাক ছায়াছবির যুগ। প্রিয়নাথ গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত নির্বাক ছবি ‘দুর্গেশনন্দিনী’-তে প্রথম অভিনয় করেন কানুবাবু।

১৯৫৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘পথের পাঁচালী’। সেই একই বছরে মুক্তি পেয়েছিল কানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরো ৬টি ছবি। তার মধ্যে, তপন সিংহ পরিচালিত ‘উপহার’ সুপারহিট। একই বছরে বাংলার দুই বিখ্যাত পরিচালকের সঙ্গে ছবির মুক্তি। কানু ওরফে কানাইলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয়-ক্ষমতা সম্পর্কে আঁচ পাওয়া যায় এর থেকেই।

জন্ম রাজস্থানে। তারপর শৈশবেই চলে আসা কলকাতায়। কয়েকবার বাসা বদলের পর ১৬/২ বনমালী চ্যাটার্জি লেনের বাড়িই হল চিরস্থায়ী ঠিকানা।

অভিনয়ে হাতেখড়ি এক অদ্ভুত সংযোগের মধ্যে দিয়ে। নন্দলাল বসুর বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে একটা সংস্কৃত শ্লোক ও কবিতা পাঠ করেছিলেন কানাইলাল। তাঁর বয়স তখন দশ-বারোর বেশি হবে না। দর্শকাসনে ছিলেন অমৃতলাল বসু। কানাইলালের পাঠ তাঁর ভারি ভালো লেগে যায়। তিনিই কানাইলালকে নিয়ে আসেন নাটকে।

একটি সংস্কৃত নাটকে ব্রাহ্মণের স্ত্রীর চরিত্রে প্রথম অভিনয়। এরপরেও একাধিক নাটকে নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন কানাইলাল। পাশাপাশি পুরুষ চরিত্রেও অভিনয় করেছেন চুটিয়ে। ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৮ অবধি ছিলেন শিশির কুমার ভাদুড়ির পেশাদারি থিয়েটারের দলে।

নাটকে অভিনয়ের সূত্র ধরেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ। ১৯৩৬ সালের ২৪ জুন ‘যোগাযোগ’ উপন্যাসের নাট্যরূপ দেখতে এসেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। ‘নবীনকৃষ্ণ’-র ভূমিকায় কানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন তিনি। রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছেতেই জোড়াসাঁকোর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন কানুবাবু। তাঁকে আশীর্বাদ করে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘আমি যে চরিত্র মনে করে লিখেছি, এ যেন তাই।’

সারা জীবনে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন কানু বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্দেশনাও দিয়েছেন সলিল সেনের লেখা ‘নতুন ইহুদী’-র মতো একাধিক নাটকে। করেছেন যাত্রাপালা, বেতার নাটকও। অভিনয়কে জাপ্টেই তাঁর বাঁচা।

ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ি সান্যাল, উত্তমকুমার, তুলসী চক্রবর্তী, বিকাশ রায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়, সরযূবালা, মলিনা দেবী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, গীতা দে— কে আসেননি এই বাড়িতে? আড্ডা, গান-গল্পের পাশাপাশি চলত অভিনয়ের পাঠও।

অভিনয়ের দক্ষ শিক্ষক ছিলেন কানু বন্দ্যোপাধ্যায়। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, গীতা দে তাঁর কাছে অভিনয় শিখেছেন। উত্তমকুমারও নানা সময়ে এসে তালিম নিয়েছেন তাঁর কাছে। অভিনয়-শিক্ষক হিসেবে এতটাই খ্যাতি ছিল তাঁর।

বাংলা রঙ্গমঞ্চ ও চলচ্চিত্রের দুর্ভাগ্য, আমাদের স্মৃতিতে এহেন মানুষটার একমাত্র পরিচিতিই হয়ে গেল ‘পথের পাঁচালী’ আর ‘অপরাজিত’-তে হরিহরের ভূমিকায় অভিনয়। সন্দেহ নেই, এই দুটি চলচ্চিত্রের সূত্র ধরেই বিশ্ববন্দিত হয়েছিল তাঁর অভিনয়, পরিচিতি বেড়েছিল।

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের ভিতর- ‘পরাজয়’, ‘চাঁপাডাঙার বৌ’, ‘মনের ময়ূর’, ‘সদানন্দের মেলা’, ‘ভাঙাগড়া’, ‘মন্ত্রশক্তি’, ‘কপালকুণ্ডলা’, ‘শাপমুক্তি’, ‘প্রতিশোধ’, ‘গরমিল’, ‘চোরাবালি’, ‘মহাকাল’, ‘বৈকুণ্ঠের উইল’, ‘জিঘাংসা’, ‘বিন্দুর ছেলে’ সহ মোট ১০৪টি ছবিতে অভিনয় করার পর ১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘অপরাজিত’ ছবিতে অভিনয় করেন কানু বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিনয়কে পেশা করবেন বলেই প্রথমে রেলের চাকরি ও পরে পোস্ট অফিসের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। সরকারি চাকরি ছেড়ে অভিনয়কে পেশা করার সাহস ও আত্মবিশ্বাস ক’জনেরই বা থাকে!

কানুবাবু অভিনীত হিন্দি ছবি ‘শোধ’ রাষ্ট্রপতি স্বর্ণকমল পুরস্কার লাভ করে।

২৭ জানুয়ারি ১৯৮৩ (বয়স ৭৭) সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কানু বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৫ সালের আজকের দিনে (২০ জুন) রাজস্থানের যোধপুরের পজপতরা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন।

 

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.