Press "Enter" to skip to content

১৯৫৩ সালের ২৪ আগস্ট। বাড়িতে সিলভিয়া প্লাথ একা। পারিবারিক লক বক্স থেকে বার করলেন ঘুমের বড়ি। একটি নোট লিখলেন— এক দীর্ঘ যাত্রায় যাচ্ছি…।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ সি ল ভি য়া প্লা থ

বাবলু ভট্টাচার্য : জানুয়ারির ভয়াবহ রূপ ধারণ করা লন্ডনের আবহাওয়া কেবল বাড়িয়ে দিল প্লাথ-এর ডিপ্রেশন। পুরোপুরি কয়েক সপ্তাহ তাঁকে সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালের বিছানায় রাখতে চেয়েছিলেন ডাক্তার।

ভোরবেলা। ছেলেমেয়েদের রুমে প্লাথ রেখে এলেন কিছু রুটি ও দুধ। অতঃপর বন্ধ করলেন জানালা। ট্যাপ দিয়ে সিল করে দিলেন দরজা। নেমে এলেন নিচতলায়। নিজেকে আবদ্ধ করে ফেললেন রান্নাঘরে। হাঁটু গেড়ে বসলেন চুলোয়। ছেড়ে দিলেন গ্যাস। পরদিন মৃত সিলভিয়া প্লাথকে আবিষ্কার করলেন নার্স।

সিলভিয়া’র মা-বাবা, অরেলিয়া প্লাথ ও অটো প্লাথ ছিলেন বোস্টন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। মা পড়াতেন ইংরেজি ও জার্মান। বাবা জার্মান ভাষা ও প্রাণিবিদ্যা (মৌমাছি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ) বিভাগের অধ্যাপক। ‘প্লাথ’ তাঁর পৈতৃক জার্মান নাম। অন্য শিশুদের গড়পড়তা সাধারণ নিয়মের আগেই কথা বলা শুরু করেন সিলভিয়া। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই লিখলেন একটি সম্পূর্ণ কবিতা।

গ্যাংগ্রিন হওয়ার কারণে অটোর পা কেটে ফেলা হল অক্টোবরে। অবস্থা আরও খারাপের দিকে গেলে বিশ্রামের জন্য কয়েকদিন তাঁকে রাখা হল হাসপাতালে। ১৯৪০ সালের ৫ নভেম্বর অটো প্লাথের মৃত্যু হয়। আঠার বছর বয়সী সিলভিয়ার কাছে যখন বাবার মৃত্যু-সংবাদ এসে পৌঁছলো, তিনি উচ্চারণ করলেন— আই’ল নেভার স্পিক টু গড অ্যাগেন।

মা অরেলিয়া, সিলভিয়াকে নতুন স্কুলে ৫ম গ্রেডে ভর্তি করে দিলেন। পিতার মৃত্যুতে সিলভিয়ার সমস্ত চেতনা তখনো আচ্ছন্ন সংশয় ও প্রবল রোষে। কখনো কখনো তাঁর মনে হত তাঁকে আত্মহত্যা করতেই হবে। পিতাকে হারিয়ে প্রেম, ঘৃণা, ক্রোধ এবং দুঃখের যে সংশয়ী আবেগ তৈরি হল সিলভিয়ার, বাকি জীবনে এর প্রভাব থেকে কোনোদিন আর মুক্ত হতে পারেননি।

ক্লাসের মধ্যে ১ম স্থান অধিকার করে ১৯৫০-এ গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেন সিলভিয়া। প্রচণ্ড পরিশ্রম ও অনড়-অটল মনোভঙ্গি-অসংখ্য সাময়িকপত্রে প্রকাশিত রচনা-সাফল্য নিয়ে আসে তাঁর। কখনো কখনো প্রত্যাখ্যানপত্রও আসে। প্লাথ তাঁর সক্ষমতা নিয়ে সংশয়ী হয়ে পড়েন এবং ভয় পেলেন-তার ট্যালেন্ট কি হারিয়ে ফেলছেন? অতঃপর তিনি এমন এক প্যাটার্ন নির্মাণ করলেন, যেখানে তার জীবন নিমজ্জিত হল অন্য এক অসুস্থতায়— যা নিয়ে আসে হতাশা এবং বেদনা। কী এক দোলাচল ঘিরে ধরে তাকে, ধীরে… ধীরে… মনে হয় পাচ্ছেন উপশম; কিঞ্চিত সাফল্য ও প্রাপ্তি জীবননৌকো ভাসিয়ে রাখতে সাহায্য করে তাকে।

১৯৫০ সালে ম্যাসাটুসেটস-এর নর্থহাম্পটনের স্মিথ কলেজে ভর্তি হলেন সিলভিয়া। কলেজ পত্রিকাও বহুল প্রচারিত কাগজগুলোয় সিলভিয়া লিখে চলেছেন নিরন্তর। কলেজের গল্প প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হলেন। একটু ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে প্রতিবেশি ডিক নটন-এর সাথে। পক্ষান্তরে তিনি পতিত হলেন পর্যায়ক্রমিক ডিপ্রেশন, ইনসমনিয়া এবং আত্মহনন ভাবনায়ও। লিখলেন— “আমি নিজেকে হত্যা করতে চাই। পালাতে চাই দায়-দায়িত্ব থেকে। মাতৃজঠরে ফিরে যেতে চাই… শোচনীয় হামাগুড়ি দিয়ে।”

১৯৫৩ সালের ২৪ আগস্ট। বাড়িতে সিলভিয়া একা। পারিবারিক লক বক্স থেকে বার করলেন ঘুমের বড়ি। একটি নোট লিখলেন— এক দীর্ঘ যাত্রায় যাচ্ছি…। সেলার-এর ভেতর দিয়ে প্রবেশ করলেন পোর্চ-এ। তারপর প্রবেশ করলেন, হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হয় এমন এক স্থানে। গিলে ফেললেন চল্লিশটি পিল।

পরদিন ভোরে প্রধান কাগজগুলোর প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হল প্লাথের অন্তর্ধান-কাহিনি। খোলা লক বক্স থেকে খোয়া যাওয়া পিলগুলো আবিষ্কার করে তার মা উন্মত্ত হয়ে পড়লেন। দু’দিন পরও পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে এ বিষয়। স্লিপিং পিলের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে অরেলিয়া ব্যাখ্যা করলেন— লেখার অক্ষমতার কারণে তার কন্যা আপসেট হয়ে পড়েছিল। ২৬ তারিখ সেলার থেকে কেউ একজন গোঙানির শব্দ শোনার পর শেষ পর্যন্ত সিলভিয়াকে উদ্ধার করা হয়।

১৯৫৪ সালের এপ্রিল। প্লাথ পুনরায় শুরু করলেন কবিতা লেখা। মাথার চুল কোঁকড়া করে ফেললেন। পেলেন একটি স্কলারশিপ ও সম্মানজনক পুরস্কার। সামারে তিনি জড়িয়ে পড়লেন একটি অস্বাভাবিক সম্পর্কে।

ডেটিং করতে লাগলেন তার চেয়ে অনেক বয়সী একজনের সঙ্গে। অবশেষে ঘটল সেই ভয়াবহ ঘটনা। তিনি স্বীকার করেছেন— ওই লোক দ্বারা তিনি ধর্ষিত হয়েছেন। ক্ষতস্থান থেকে নির্গত রক্ত তাকে নিয়ে গিয়েছিল মৃত্যুর কাছাকাছি। এ ঘটনা সিলভিয়ার মানসিক বৈকল্যে এনে দিয়েছিল আর একটি দূষিত মাত্রা।

জীবনের কাছে হেরে গিয়ে ১৯৬৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি প্লাথ নিজেকে বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে শেষ করে দিয়েছিলেন।

সিলভিয়া প্লাথ (Sylvia Plath) ১৯৩২ সালের আজকের দিনে (২৭ অক্টোবর) বোস্টনে জন্মগ্রহণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.