Press "Enter" to skip to content

১৯২০ সালের শুরুতে আমি স্থির করে ফেললাম যে রাজনীতিই হবে আমার জীবনের পেশা। কথাগুলো বলেছেন বিশ্ববরেণ্য রাজনীতিবীদ, কমিউনিষ্ট আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব মুজফফর আহমদ………

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ ‘কাকাবাবু’ (মুজাফফর আহমদ)

বাবলু ভট্টাচার্য : ‘আমার জীবনের পেশা কি হবে, সাহিত্য, না রাজনীতি?— এই নিয়ে আমি পুরো ১৯১৯ সাল ভেবেছি। সত্য কথা বলতে, আমার মনের ভিতরে সাহিত্য ও রাজনীতির দ্বন্দ্ব চলেছিল। আমার মনে যে সাহিত্য ও রাজনীতির দ্বন্দ্ব চলেছিল তাতে শেষ পর্যন্ত জয় হল রাজনীতির। ১৯২০ সালের শুরুতে আমি স্থির করে ফেললাম যে রাজনীতিই হবে আমার জীবনের পেশা।’ উপরের এই কথাগুলো বলেছেন বিশ্ববরেণ্য রাজনীতিবীদ, বিপ্লবী, ভারত উপমহাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি ও কমিউনিষ্ট আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব মুজফফর আহমদ। তাঁর উত্তরসূরী নেতৃবৃন্দ তাকে ‘কাকাবাবু’ বলে ডাকতেন। বাবা মুন্সি মনসুর আলি (১৮২৭-১৯০৫)। তিনি সন্দ্বীপের আদালতে আইন ব্যবসা করতেন। মা চুনা বিবি।

বর্ণমালার হাতেখড়ি বাবার কাছে। তারপর মদনমোহন তর্কালঙ্কারের কাছে তার শিশুশিক্ষা প্রথম ভাগ শেষ করেন। ১৮৯৭ সালে তিনি গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৯৯ সালে প্রাইমারি পড়াশুনা সমাপ্ত করে তিনি হরিশপুর মডেল ইংলিশ স্কুলে ভর্তি হন। ১৯১৭ সালে যোগ দেন বেঙ্গল গভর্নমেন্ট প্রেসের সহকারী স্টোর কিপার পদে। এ কাজে তিনি এক বছর ছিলেন। ১৯১৮ সালে তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির সার্বক্ষণিক কর্মী হন। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিলে তিনি অংশগ্রহণ করেন। তখন শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক ছিলেন কংগ্রেসে ও খেলাফতের একজন অন্যতম নেতা। মুজফফর আহমদ তার কাছে একটি পত্রিকা প্রকাশের প্রস্তাব দিলে তিনি সম্মত হন এবং ১৯২০ সালের ১২ জুলাই আত্মপ্রকাশ করে সান্ধ্য দৈনিক ‘নবযুগ’ পত্রিকা। যার যুগ্ম সম্পাদক হন মুজফ্ফর আহমদ ও কাজী নজরুল ইসলাম।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে পৃথিবী জুড়ে শুরু হয় নব জাগরণ। এর প্রভাব ভারতবর্ষেও পড়ে। এ সময় মৌলানা আবুল কালাম আজাদ কলকাতা টাউন হলে বক্তৃতা করেন। মুজফফর আহমদ সেই বক্তৃতা শুনে প্রভাবিত হন। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় যে বিপ্লব হয়, তাও তাকে প্রভাবিত করে। রুশ বিপ্লবের কিছু কিছু তথ্য প্রচারমূলক বই ও মার্কসবাদী সাহিত্য গোপন পথে এদেশে আসতে শুরু করে। মুজফফর আহমদ তা পাঠ করে মার্কসবাদের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯২৩ সাল থেকে মুজফ্ফর আহমদ ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হন এবং বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন। ১৯২৩ সালের ১৭ মে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে রাজবন্দি হিসেবে কারাগারে আটকে রাখে। যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ১৯২৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯২৯ সালের ২০ মার্চ ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন এলাকা থেকে কমিউনিস্ট নেতাদের গ্রেফতার করে। এ সময় মুজফফর আহমদকেও গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ‘মীরাট কমিউনিস্ট ষড়যন্ত্র মামলা’ দায়ের করা হয়। মুজফফর আহমদকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। এই সময় তিনি মীরাট, নৈনিতাল, আলজোড়া, দার্জিলিং, বর্ধমান এবং ফরিদপুর জেলে ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ২৫ মার্চ কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ঘোষিত হলে মুজফফর আহমদকে গ্রেপ্তার করে। ১৯৫১ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি মুক্তি পান। ওই বছর তিনি রাজ্য পার্টির সম্পাদক হন। ১৯৫৭ সালে তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে পার্টির সম্পাদক পদ ছেড়ে দেন। তখন জ্যোতি বসু সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

মুজফফর আহমদের জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে পার্টি অফিস, কারাগারে কিংবা গোপন আস্তানায়। এ ছাড়া পার্টি কর্তৃক ভাড়া করা ঘরে অথবা কর্মস্থলে। জীবনের শেষ দিনগুলোতে পার্টি কতৃক নিয়োজিত একজন কর্মী তার দেখাশুনা করতেন। মৃত্যুর আগে প্রায় সাত মাস তিনি কলকাতায় একটি নার্সিং হোমে ভর্তি ছিলেন। ১৯৭৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর তিনি মার যান।

মুজফফর আহমদের ১৮৮৯ সালের আজকের দিনে (৫ আগস্ট) চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মুছাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.