Press "Enter" to skip to content

১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন ভাগনাদিহির মাঠে ১০ হাজার সাঁওতাল সিধু ও কানুর নেতৃত্বে সমবেত হয়েছিল। এ সমাবেশেই সিধু ও কানু সাঁওতালদের বিদ্রোহের নির্দেশ দেন….।

Spread the love

সাঁ ও তা ল বি দ্রো হ দি ব স আ জ

বাবলু ভট্টাচার্য : সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল মূলত কৃষক বিদ্রোহ। কোম্পানির শাসনব্যবস্থা শুরু হওয়ার আগে সাঁওতালদের জীবনযাত্রা ছিল সরল ও সাদাসিধে। কোম্পানির বাংলা দখল করার পর তারা সাঁওতাল জনজীবনের ওপর বাড়িয়ে দিয়েছিল শোষণ ও নির্যাতনের মাত্রা। মহাজনরা সাঁওতালদের কাছ থেকে চড়া সুদ আদায় করত। ধান-চাল ধার দেওয়ার সময় ওজনে ফাঁকি দিত।

১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন ভাগনাদিহির মাঠে ১০ হাজার সাঁওতাল সিধু ও কানুর নেতৃত্বে সমবেত হয়েছিল। এ সমাবেশেই সিধু ও কানু সাঁওতালদের বিদ্রোহের নির্দেশ দেন। বিদ্রোহের বাণী চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার সাঁওতাল বিদ্রোহীদের দলে যোগদান করে।

ইংরেজবাহিনী বিদ্রোহ দমন করতে এগিয়ে এলে বিদ্রোহীরা তাদের প্রতিরোধ করে। বিদ্রোহের আগুন শুধু ভাগলপুর থেকে মুঙ্গের পর্যন্ত জ্বলে ওঠেনি, জ্বলে উঠেছিল গোদা, পাকুড়, মহেশপুর, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের বিভিন্ন অঞ্চলে। জমিদাররা ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। শুধু জমিদাররা নয়, দেওঘর থেকে ম্যাজিস্ট্রেটও পালিয়ে যায়।

মহেশপুরে পঞ্চাশ হাজার সাঁওতাল কোম্পানি সৈন্যের গতিরোধ করে। কোম্পানি বিদ্রোহ দমন করার জন্য রেজিমেন্ট নিয়োগ করে। কিন্তু তবুও বিদ্রোহ দমন করা সম্ভব হয়নি। কোম্পানি সরকার বিদ্রোহী নেতাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে।

সাঁওতাল নেতারা এ বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে একটা স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। তাঁরা ঘোষণা করেছিলেন, আমলাদের পাপে সাহেবরাও পাপাচারে লিপ্ত হয়েছে, এ পাপের ফলে তাঁরা যে দেশটিকে বেআইনিভাবে দখল করেছে, তা হাতছাড়া হয়ে যাবে। তাঁরা আরো ঘোষণা করেছিলেন, তাঁদের রাজ্যে কাউকে খাজনা দিতে হবে না। প্রত্যেকে সাধ্যমতো জমি চাষ করার অধিকার পাবে। সব ঋণ মওকুফ করে দেওয়া হবে।

ইংরেজ গোলন্দাজ বাহিনীর বিরুদ্ধে সাঁওতালদের তীর-ধনুকের লড়াই ভারতের ইতিহাসে গৌরবময় স্থান অধিকার করে আছে। শেষ পর্যন্ত সাঁওতালরা পরাজয় বরণ করে। সিধু, কানুসহ নেতৃস্থানীয় সাঁওতালদের ফাঁসি দেওয়া হয়।

সাঁওতাল বিদ্রোহ বাংলার ও ভারতের কৃষক-সংগ্রামের ঐতিহ্যকে শুধু উজ্জ্বল আর গৌরবান্বিতই করেনি; বরং বিদ্রোহীদের বীরত্বের কাহিনী পরবর্তী কৃষক সংগ্রামে ও তথাকথিত সিপাহি বিদ্রোহকেও প্রেরণা জুগিয়েছিল।

আমাদের ইতিহাসবিদরা স্বীকার করেছেন, ১৮৫৫-১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহের গুরুত্ব ও মূল্য ভারতবর্ষের কৃষককুল, দরিদ্র ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কাছে অনেক বেশি। আর তাই তো সাঁওতাল বিদ্রোহ ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে স্থান করে নিয়েছে।

সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৪তম বার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি বিদ্রোহের শহীদদের।

More from GeneralMore posts in General »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.