ডঃ গৌরাঙ্গদেব ভার্মা: ১৬ জুন, ২০২০। জনশূন্য ৫০৬-তম রামকেলি মেলা। ফি-বছর জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তি থেকে এই মেলা শুরু হয়। ১৫১৫ সালের ১৫ জুন চৈতন্যদেব রামকেলিতে আসেন। নীলাচল থেকে বৃন্দাবন যাবার পথে সপার্ষদ তিনি কয়েকদিন এখানে ছিলেন। তাঁর উপস্থিতি মূলত গণজাগরণের রূপ নেয়। গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহের প্রধান সচিব (দবির-ই-খাস) রূপ গোস্বামী ও ছোট রাজা (সগির-ই-মালিক) সনাতন গোস্বামী এখানেই চৈতন্যদেবের সঙ্গে মিলিত হন। চৈতন্য-প্রাণিত হয়ে বৃন্দাবনে গিয়ে তাঁরা পাণ্ডিত্যের বিচ্ছুরণ ঘটান। রূপ ও সনাতন রাজকর্মে যুক্ত হবার আগে রামকেলির ২৪ কিলোমিটার উত্তরে মাধাইপুর গ্রামে তাঁদের মামার বাড়িতে থাকতেন। রামকেলির পরিবেশ দেখে চৈতন্যদেব বলেছিলেন ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজবিপ্লবী চৈতন্যদেবকে ঘিরে সে সময় জনসমুদ্র তৈরি হয়। বসে যায় মহামিলনমেলা। সেদিনটিও ছিল জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তি। ১৫৭৪ সালে মুনিম খাঁর রাজত্বে মহামারিতে এই মেলা বন্ধ হয়ে যায়। গৌড় জনশূন্য হয়ে পড়ে। অনেক বছর বাদে বৈষ্ণব ভক্তেরা জঙ্গল কেটে রামকেলি সংস্কার করে আবার মেলার আয়োজন করেন। ৪৪৬ বছর পর এ বার ওই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি। অতিমারি করোনার কোপে মেলা বন্ধ। ফাইবারের তৈরি ১৫ ফুট উঁচু চৈতন্যদেবের মূর্তিটি ২০১৪ সালে মেলার ৫০০-তম বর্ষ উদযাপনের প্রাক্কালে নির্মাণ করেন মালদহের ভাস্কর কৌশিক পোদ্দার (জয়)।
সনাতন গোস্বামী প্রতিষ্ঠিত মদনমোহন মন্দিরকে কেন্দ্র করে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগমে এই মেলা বসে। ১৯৩৮ সালে মন্দিরটির সংস্কার করা হয়। মালদহ শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণে রামকেলিতে এসে গৌড়ের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি দেখে নেওয়া যায়। ফিরোজ মিনার, দাখিল দরজা, কদম রসুল, বারদুয়ারী প্রভৃতি স্থাপত্য পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ।
লেখক – ডঃ গৌরাঙ্গদেব ভার্মা।
উপরের চৈতন্যমূর্তি ও মদনমোহন মন্দিরের ছবি তুলেছেন চিত্রগ্রাহক: দেবরাজ ত্রিবেদী।
Be First to Comment