#ভাইরাস সংক্রমণেই হেপাটাইটিস, বিশ্বজুড়ে এক ই মত, ভ্যাকসিনেই প্রতিরোধ।#
মৃদুলা ঘোষ : কলকাতা, ২৯ জুলাই, ২০২০।
বিশ্বজুড়ে বর্তমান পরিস্থিতি যেমন আমাদের কঠিন সময়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, তেমনি কিছু বিশেষ অসুখ আছে যা আমাদের অস্তিত্ব কে সহজেই মিথ্যা করে দেয়। সেই অসুখ হল হেপাটাইটিস বা যকৃত এর প্রদাহ। গ্রহন করা খাদ্যের পরিপাক, সংশ্লেষনে লিভার মানব দেহে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু কখনো কখনো প্রধানত ভাইরাস এবং অন্য অসুখের প্রভাবে লিভারের প্রদাহ শুরু হয়। ইনফ্লামেশন অফ লিভার বা যকৃতের প্রদাহ কেই চিকিৎসা শাস্ত্রে হেপাটাইটিস বলে। বিশ্বজুড়ে, হেপাটাইটিস কে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ২৮শে জুলাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগ এ বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়। যার উদ্দেশ্য এই কঠিন অসুখের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গঠন। এবছর, আন্তর্জাতিক স্তরে এই দিনটি র লক্ষ্য হলো, হেপাটাইটিস মুক্ত ভবিষ্যৎ, বিশেষত, মা এবং তার নবজাতক এর মধ্যে হেপাটাইটিস প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা র জন্য বিশেষ স্বাস্থ্য পরিকল্পনা গ্ৰহন। যকৃতের প্রদাহ বলতে মূলত বোঝায় হেপাটাইটিস, যা অনেক প্রকারের হয়।
ভাইরাস আক্রমণ থেকে হয় বলে একে ভাইরাল হেপাটাইটিস বলে। ইংরেজি বর্ণমালা অনুসারে হেপাটাইটিস মূলত পাঁচ রকম- এ, বি, সি, ডি, ই, যেকোনো ভাবে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে। এই পাঁচ প্রকারের মধ্যে হেপাটাইটিস ‘বি’ অত্যন্ত জটিল ও তার চিকিৎসাও ব্যায় বহুল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৩২৫ লক্ষ মানুষ হেপাটাইটিস এ আক্রান্ত, তার মধ্যে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর মারা যায়। মোটামুটি প্রায় ৭১লক্ষ মানুষ ক্রনিক হেপাটাইটিস সি তে আক্রান্ত, যা শেষ পর্যন্ত লিভার ক্যান্সার এ রূপান্তরিত হয়। ভারতে ৪০ লক্ষ মানুষ দীর্ঘ স্থায়ী হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত। ভাইরাস ঘটিত সব ধরনের হেপাটাইটিস ই সংক্রামক । হেপাটাইটিস-এ এবং হেপাটাইটিস-ই খাদ্য দ্রব্য ও জলের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়। এই রোগীর মলমূত্র পানীয় জলের সঙ্গে মিশে সুস্থ ব্যক্তি র দেহে সংক্রামিত হয়। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রথম ধরা পরে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মধ্যে। সেই জন্য একে অস্ট্রেলিয়া আ্যন্টিজেন ও বলা হয়। রক্তে সাধারণত, দু প্রকারের আ্যন্টিজেন পাওয়া যায়। একটি হলো সারফেস আ্যন্টিজেন এবং অপরটি কোর আ্যন্টিজেন। আ্যকিউট পর্যায় এ রক্তে সারফেস আ্যন্টিজেন পাওয়া যায়। তবে এর মানেই যে ব্যক্তি হেপাটাইটিস -বি তে আক্রান্ত তা নয়, সঠিক নির্ধারনের জন্য ইউরিনের বাইল পিগমেন্ট ও বাইল সল্ট পরীক্ষা করা হয়, রক্তে র সিরাম, বিলরুবিন, SGPT ও SGOT পরীক্ষা করা হয়। হেপাটাইটিস -বি ভাইরাস সংক্রামিত হয় রোগীর রক্ত, শরীর নির্গত রসের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে র মাধ্যমে। হেপাটাইটিস-বি রোগীর সঙ্গে যৌন সংযোগ, সংক্রামিত সূঁচ অপরিশোধিত ভাবে ব্যবহার করলে, ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে অন্য সুস্থ ব্যাক্তি র দেহে সংক্রামিত হতে পারে। হেপাটাইটিস -সি ও রক্তে র মাধ্যমে সংক্রামিত হতে পারে। গর্ভবতী মহিলার যদি হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস সক্রিয় থাকে, তবে জন্মের পর ৮০-৯০শতাংশ শিশু র দেহে ভাইরাস সংক্রমনের সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে, মায়ের হেপাটাইটিস-বি পজিটিভ হলে জন্মানোর ১২ঘন্টার মধ্যে ওই শিশু কে প্রথমে HBIG(হেপাটাইটিস -বি ইমিউনোগ্লোবিউলিন) ও পরে ভ্যাকসিন দিতে হয়। আধুনিক চিকিৎসা গবেষণা অবিরাম চেষ্টা করে চলেছে কিভাবে আরও শক্তিশালী প্রতিরোধ উপায় আবিষ্কার করা যায় হেপাটাইটিস এর বিরুদ্ধে। উপযুক্ত চিকিৎসায় সুস্থ হলে ও ভয় থেকেই যায়। তাই বাজারে যে হেপাটাইটিস -বি ভ্যাকসিন পাওয়া যায়, তা যথেষ্ট কার্যকর ও নিরাপদ। ভারতে এই রকম পাঁচটি ব্র্যান্ডের ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। নিষ্ক্রিয় ভাইরাস থেকে তৈরি এগুলো কে হেপাটাইটিস -বি ভ্যাকসিন বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে বিশেষ কয়েক শ্রেণীর মানুষ যেমনঃ যারা নর্দমা ও নোংরা পরিস্কার করে, চিকিৎসক, নার্স এদের অবশ্যই হেপাটাইটিস ভ্যাকসিন নেওয়া দরকার। বাইরের দেশ গুলি, এখন হেপাটাইটিস-বি নিয়ে খুব বেশি বিব্রত বোধ করে না। বিদেশে, লিভার প্রতি স্থাপন খুব সহজ হলেও, ভারতে তা অত্যন্ত ব্যায়বহুল। তাই প্রতিরোধ হিসাবে বলা হয়, পরিবারের কোনও সদস্য র হেপাটাইটিস-বি পজিটিভ হলে পরিবারের সকলেরই এই টিকা নেওয়া উচিত।
হেপাটাইটিস বর্তমানে যুব গোষ্ঠীকে বেশি মাত্রায় আক্রমণ করছে। এর প্রতিরোধ এ অনেক বেশি সতর্কতা দরকার। যেমনঃ খাওয়ার অভ্যাস সংক্রান্ত, বাথরুম ব্যবহার, যৌন সম্পর্ক স্থাপন কালে, বাইরে থেকে রক্ত শরীরে নেওয়ার ব্যাপারে, নিজেকে নিজের পেশা’র মধ্যে ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা র ব্যাপারে। হেপাটাইটিস প্রানঘাতী হলে ও সঠিক ভ্যাকসিন প্রয়োগ, সতর্ক জীবনধারা য় অবশ্যই ভালো থাকা যাবে।
Be First to Comment