Press "Enter" to skip to content

হিন্দু গৃহস্থের ঘরে দেবীদের মধ্যে প্রধান হলেন মা লক্ষ্মী। তিনি বিষ্ণুর ঘরনি। সুখ -স্বাচ্ছন্দ ও ধন-সম্পদের আশায় প্রতিটি গৃহে লক্ষ্মী দেবী পূজিতা হন। তিনি ছয়টি বিশেষ গুণের দেবী

Spread the love

মধুমিতা শাস্ত্রী : ২৯, অক্টোবর, ২০২০। মা দুর্গাকে চোখের জলে বিসর্জন দেওয়ার পর প্রত্যেক বাঙালি অপেক্ষা করেন মা লক্ষ্মীর জন্য। তাই প্রত্যেক বাড়িতে চরম ব্যস্ততা। ধন ও সৌভাগ্যে র দেবী মা লক্ষ্মী ঘরে আসছেন। সারা বিশ্বজুড়েই বাঙালি পরিবারের ঘরে ঘরে মা লক্ষ্মী পূজিত হন। আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে এবং বাংলাদেশে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার প্রচলন আছে। তবে দুই বাংলার পূজার রীতিতে কিছু পার্থক্য আছে। পশ্চিমবঙ্গে পূজা হয় প্রধানত মাটির প্রতিমায়। বাংলাদেশে সরায় এঁকে মায়ের পূজা হয়। মা লক্ষ্মীর পূজা হয় দেবীপক্ষের শেষের পূর্ণিমাতে।হিন্দু গৃহস্থের ঘরে দেবীদের মধ্যে প্রধান হলেন মা লক্ষ্মী। তিনি বিষ্ণুর ঘরনি। সুখ -স্বাচ্ছন্দ ও ধন-সম্পদের আশায় প্রতিটি গৃহে লক্ষ্মী দেবী পূজিতা হন। তিনি ছয়টি বিশেষ গুণের দেবী। তিনিই হলেন বিষ্ণুর শক্তির উৎস। ভগবান বিষ্ণু রাম ও কৃষ্ণরূপে অবতার হলে দেবী লক্ষ্মী সীতা ও রাধারূপে তাদের সঙ্গিনী হন।

দেবী লক্ষ্মীর উৎপত্তি।
বিষ্ণু পুরাণ, মহাভারত, ভাগবত প্রভৃতি গ্রন্থ অনুসারে দেবীর উৎপত্তি হয়েছে সমুদ্র থেকে। দুর্বাসা মুনির শাপে স্বর্গ শ্রীহীন অর্থাৎ লক্ষ্মীছাড়া হয়ে যায়। স্বর্গের ঐশ্বর্য পুনরায় ফিরে পাওয়ার জন্য দেবতাগন অসুরদের সঙ্গে নিয়ে সমুদ্র মন্থন শুরু করলেন। এই সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠে এলো নানা রত্ন, অমৃতসুধা, মণি- মাণিক্য আরও কতো কি। এছাড়াও উঠে এলেন দেবী লক্ষ্মী। বিষ্ণু নিজের বক্ষে দেবীকে ঠাঁই দিলেন। সমুদ্র থেকে উৎপত্তি বলে দেবীলক্ষ্মীকে সমুদ্রোদ্ভবাও বলা হয়। সমুদ্র হলো অশেষ ধন-রত্নের ভান্ডার। ধন-রত্নে পরিপূর্ণ বলে সমুদ্রকে রত্নাকরও বলা হয়। দেবী লক্ষ্মী ধন-সম্পদে দেবী তাই দেবীর উৎপত্তি সমুদ্র থেকে। এ কাহিনী কল্পিত হওয়া বিচিত্র নয়। বিষ্ণু হলেন জগৎ প্রতিপালক। তাই প্রজা প্রতিপালে ধন-রত্নের প্রয়োজন। আর সেই কারণেই ধন- ঐশ্বর্যের দেবীকে তিনি নিজ বক্ষে স্থান দিলেন।

দেবীর পূজার প্রচলন।
লক্ষ্মীর পাঁচালি অনুসারে পৃথিবীতে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে বিচলিত নারদ মা লক্ষ্মীর নিকট এর উপায় প্রার্থনা করলেন। এর উত্তরে দেবী জানান মানুষ তাদের নিজ দোষে ফল ভোগ করছে। ভাই ভাই হিংসা দ্বেষ সর্বত্র। বধূরা নিয়ম আচার মানে না। মানুষের মনে লোভ-লালোসায় পূর্ণ। নারদ বারংবার দেবীকে ধরিত্রীবাসীর দূর্দশা দূর করার অনুরোধ করেন। দেবী সম্মত হলেন মর্ত্যবাসীর দুঃখ দূর করতে।
অবন্তী নগরে ধনেশ্বর নামে এক বনিক বাস করতো। বনিকের মৃত্যুর পর তার পুত্রেরা সম্পত্তি নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়েপড়েন। এই মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ধনেশ্বরের বিধবা পত্নী মনের দুঃখে বনের মধ্যে আত্মহত্যা করতে উদ্যত হলে, দেবী তার সামনে আর্বিভূতা হন এবং তাকে আত্মহনন থেকে রক্ষা করেন। আর বলেন তুমি গৃহে ফিরে যাও। আর পুত্র বধূদের বলো ভক্তিপূর্ণ চিত্তে লক্ষ্মী ব্রত করতে। গৃহে ধন-সম্পত্তি ও সুখ-শান্তি ফিরে আসবে। একথা বলে দেবী অদৃশ্য হয়ে যান। ধনেশ্বর পত্নী বাড়ি ফিরে পুত্র বধুদের দিয়ে ভক্তি ভরে মা লক্ষ্মীর পূজা করালেন। লক্ষ্মীর কৃপায় ধীরে ধীরে তাদের সংসারে সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠলো। লক্ষ্মীর মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে প্রতিবেশী বধুরাও ভক্তি ভরে দেবীর উপাসনা করতে লাগলো। এভাবেই দেবীর পূজার প্রচলন হয়।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *