শু ভ জ ন্ম দি ন শ্যা ম বে নে গ ল
বাবলু ভট্টাচার্য : শ্যাম বেনেগল সেই নির্মাতা, যার হাত ধরে ৭০ দশকের শুরুতে পাল্টে গিয়েছিল হিন্দি সিনেমার দৃশ্যপট।
তার প্রথম চারটি চলচ্চিত্র- ‘অঙ্কুর’ (১৯৭৩), ‘নিশান্ত’ (১৯৭৫), ‘মন্থন’ (১৯৭৬), ও ‘ভূমিকা’ (১৯৭৭) দিয়ে তিনি একটি নতুন ধরনের অংশ হন, যা বর্তমানে ভারতের “মধ্য চলচ্চিত্র” বলে অভিহিত। তিনি এই পরিভাষাটি অপছন্দ করেন এবং তার কাজগুলিকে নব বা ভিন্নধারার চলচ্চিত্র বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
তার চলচ্চিত্রগুলিতে প্রধানত নারী এবং নারীর অধিকার সম্পর্কিত বিষয়ে জোর দেওয়া হয়ে থাকে।
তার জন্মনাম ছিল শ্যামসুন্দর বেনেগল। তার পিতা শ্রীধর বি. বেনেগল ছিলেন একজন আলোকচিত্রী। শ্যামের যখন ১২ বছর তখন তিনি তার প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তার পিতার দেওয়া একটি ক্যামেরা দিয়ে।
তিনি হায়দ্রাবাদের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানে তিনি হায়দ্রাবাদ ফিল্ম সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৫৯ সালে তিনি লিন্টাস অ্যাডভার্টাইজিং নামে একটি মুম্বই-ভিত্তিক বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কপিরাইটার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি ধীরে ধীরে প্রধান সৃজনশীল কর্মকর্তায় উত্তীর্ণ হন। ইতোমধ্যে তিনি গুজরাতি ভাষায় তার প্রথম প্রামাণ্যচিত্র ‘ঘর বেঠা গঙ্গা’ (১৯৬২) নির্মাণ করেন।
বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কর্মরত থাকাকালীন তিনি নয় শতাধিক প্রামাণ্যচিত্র ও বিজ্ঞাপনচিত্র পরিচালনা করেন। তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য তাকে আরও এক দশক অপেক্ষা করতে হয়।
১৯৬৬ থেকে ১৯৭৩ সালে বেনেগল পুনের ভারতীয় চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন সংস্থানে শিক্ষকতা করেন এবং ১৯৮০-৮৩ ও ১৯৮৯-৯২ সালে দুইবার এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করেন। এই সময়ে তার নির্মিত ‘আ চাইল্ড অব দ্য স্ট্রিটস’ (১৯৬৭) ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে। সর্বোপরি তিনি ৭০টি প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।
হিন্দি সিনেমায় এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেন শ্যাম বেনেগাল। সমালোচক ও দর্শক দুই মহলেই গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া এই নির্মাতা এরপর তৈরি করেছেন ‘কালইয়ুগ’, ‘জুনুন’, ‘সুরাজ কা সাতওয়া ঘোড়া’, ‘মাম্মো’, ‘সরদারি বেগম’, ‘জুবেইদা’র মতো প্রশংসিত সিনেমা।
১৯৮৬ সালে দূরদর্শনে প্রচারিত ১৫ খণ্ডের যাত্রা সম্পূর্ণই সে সময়ে ভারতের দীর্ঘতম পথ অতিক্রমকারী রেলগাড়ি হিমসাগর এক্সপ্রেসে চিত্রায়িত হয়। জওহরলাল নেহরুর বই ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে নির্মিত ৫৩ পর্বের টেলিভিশন ধারাবাহিক ভারত এক খোঁজ ভারতের প্রারম্ভ থেকে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস বিবৃত করে।
১৯৭৬ সালে বেনেগল পদ্মশ্রী এবং ১৯৯১ সালে পদ্মভূষণ লাভ করেন। ২০০৭ সালে বেনেগল ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন। তিনি সাতবার শ্রেষ্ঠ হিন্দি ভাষার পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ২০১৮ সালে মুম্বই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে ভি. শান্তরাম আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন।
বেনেগল ২০০৬ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার সংসদ সদস্য ছিলেন।
শ্যাম বেনেগল ১৯৩৪ সালের আজকের দিনে (১৪ ডিসেম্বর) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ত্রিমুলঘেরি (বর্তমান তেলেঙ্গান)-তে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment