Press "Enter" to skip to content

হিন্দি ও উর্দু ছবিতে সমান জনপ্রিয় সুরাইয়ার পরিচয় হয় নবাগত নায়ক দেব আনন্দের সাথে। পরিচয় পর্বটি বেশ নাটকীয়…….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ সুরাইয়া

বাবলু ভট্টাচার্য : দেব আনন্দ এক সময় সুরাইয়াকে বলেছিলেন- “পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম হলো প্রেম। সামাজিক কিংবা পারিবারিক বাধাকে তোমার হৃদয়ের ওপর স্থান দিও না।”

কিন্তু সুরাইয়া শেষ পর্যন্ত সব বাধা পার হয়ে মনের মানুষকে বিয়ে করতে পারেননি। এই সিদ্ধান্ত না নিতে পারার যন্ত্রণায় সুরাইয়া সারা জীবন অনুতাপ করেছেন।

সুরাইয়ার পুরো নাম সুরাইয়া জামাল শেখ। খুব কম বয়সেই চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। চল্লিশের দশকে দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নায়িকা এবং গায়িকা হিসেবে ছিলেন অসামান্য। সম্মান করে তাকে বলা হতো ‘মালিকা-এ-তারান্নুম’।

হিন্দি ও উর্দু ছবিতে সমান জনপ্রিয় সুরাইয়ার পরিচয় হয় নবাগত নায়ক দেব আনন্দের সাথে। পরিচয় পর্বটি বেশ নাটকীয়। বোম্বে থেকে ট্রেনে পুনা যাচ্ছিলেন দেব আনন্দ। তার সঙ্গে একই কামরায় ওঠেন সুরাইয়া। দেব মুগ্ধ হন তার অসাধারণ রূপ ও কণ্ঠে।

পরে কাজের সূত্রে আলাপ জমে ওঠে তাদের। চলচ্চিত্রে সংলাপ বলার সময় নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করতেন তারা। অভিনয়ের ছলে ভালোবাসার আলাপন চলতো তাদের।

দেব-সুরাইয়া জুটির সাতটি ছবি মুক্তি পায়। ‘বিদ্যা’(১৯৪৮), ‘জিত’(১৯৪৯) এবং ‘শায়ের’(১৯৪৯) সুপারহিট হয়। তখনও কেউ সন্দেহ করেনি ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে এই জুটি। কিন্তু ‘আফসার’ (১৯৫০) ছবির সেটে অনেকেরই নজরে পড়ে যান তারা। সংগীত পরিচালক এস মাহিন্দর একময় বলেছিলেন- “সুরাইয়া ও দেব আনন্দের মধ্যে যে প্রেম চলছে তা ‘আফসার’ ছবির সেটেই প্রথম ধরা পড়ে তার চোখে। তারা মাঝে মধ্যে হাওয়া হয়ে যেতেন কিংবা স্টুডিওর ভেতরেই খুঁজে নিতেন নিরালা কোনো জায়গা।”

সুরাইয়া ছিলেন গ্রেগরি পেকের ভক্ত। দেব তাই অভিনয়ের জন্য গ্রেগরি পেকের ধরণ অনুসরণ করতেন। সিনেমার শুটিংয়ে যখন তারা প্রেমের অভিনয় করতেন তখন ইউনিটের সকলেই টের পেতো তাদের ভালোবাসা।

সুরাইয়ার মামা এই প্রেমের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল ছিলেন। কিন্তু সুরাইয়ার দিদিমা দারুণ ক্ষেপে ওঠেন হিন্দু যুবকের সঙ্গে এই প্রেমের ঘটনায়। এদিকে মুক্তি পেল আরও তিনটি ছবি। ‘নিলি’, ‘দো সিতারে’, ‘সানাম’।

দেব আনন্দের সঙ্গে নাতনির মেলামেশা বন্ধ করতে উঠে পড়ে লাগেন নানী। দুজনের একসঙ্গে অভিনয় করা বন্ধ করলেন তিনি। লুকিয়ে টেলিফোনে কথা বলতেন তারা। একদিন সেটিও বন্ধ হয়ে গেল ।

ধর্মের বাধা অতিক্রম করে সুরাইয়াকে বিয়ে করতে চান দেব। সুরাইয়ার মা কিছুটা রাজিও হয়েছিলেন কিন্তু কিছুতেই রাজি হলেন না দিদা। আর সুরাইয়াও পরিবারের অমতে বিয়ে করতে সাহস পেলেন না। শেষ বারের মতো তাদের দেখা করার ব্যবস্থা করে দেন সুরাইয়ার মা। দেব ভাবলেন এটা কোনো চাল নয়তো? এক পুলিশ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন সুরাইয়াদের বাড়িতে। পাইপ বেয়ে উঠলেন ছাদে। সন্ধ্যার অন্ধকারে জলের ট্যাংকের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন সুরাইয়া। অশ্রু ভেজা চোখে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলেন তারা। সেই সন্ধ্যায় চিরদিনের মতো বিদায় নিলেন তারা একে অপরের কাছ থেকে।

দেব আনন্দ এই আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারলেও পারেননি সুরাইয়া। দেবের ক্যারিয়ার এরপর পুরো গতিতে চলেছে সামনের দিকে। সুরাইয়া এর পর কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করে চলচ্চিত্র জগত ছেড়ে দেন। ১৯৬৩ সালের পর আর কোনো ছবিতে অভিনয় করেননি তিনি।

সুরাইয়া অবিবাহিত ছিলেন সারা জীবন। মা, বাবা, দিদার মৃত্যুর পর নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন তিনি। তার আত্মীয়রা ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যান। বোম্বেতে রয়ে যান শুধু সুরাইয়া। ছিলেন খুব নিভৃতচারী। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কোনো অনুষ্ঠানে যেতেন না। গানের জগতও ত্যাগ করেন।

২০০৪ সালে ৭৪ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

সুরাইয়া (জামাল শেখ) ১৯২৯ সালের আজকের দিনে (১৫ জুন) লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *