গোপাল দেবনাথ : কলকাতা, ২৩ জুলাই, ২০২০। এই বিশ্বের রুপোলি পর্দার দুনিয়ায় অনেক শিশুশিল্পী, অভিনেতা অভিনেত্রীদের আবির্ভাব ঘটেছে। কিন্তু কতজন শিল্পী শেষদিন পর্য্যন্ত টিকে থাকতে পেরেছে! এমনই একজন শিশুশিল্পীর কথা জানাবো তার অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল বিখ্যাত পরিচালক তরুণ মজুমদারের হাত ধরে।
আজ তাকে হয়তো অনেকেই ভুলে গেছেন। ভুলে যাওয়াটা দোষের নয়! সেই দিনের শিশুশিল্পী কিন্তু আর শিশু নেই।
সিনেমার নাম বললে হয়তো অনেকের মনে পড়ে যেতে পারে, যেমন ধরুন বলিউড অভিনেতা ড্যানির সাথে ‘লালকুঠি’ সিনেমার দৃশ্যটা। এ ছাড়া সেই সময়ের মিষ্টি চেহারার সেই ছেলেটি দেখতে দেখতে একদিন বড় হয়ে গেল।
সেই শিশুশিল্পীর নাম আমাদের সকলের প্রিয় পার্থ মুখার্জী। এখন এই শিল্পী প্রচুর বাধা বিঘ্নের মধ্যদিয়ে গিয়ে নিজের চেষ্টায় একের পর এক সিনেমা বানিয়ে চলেছেন। কথা প্রসঙ্গে পার্থ মুখার্জী আমাকে এক সাক্ষাৎকারে জানালেন,
আমাকে বাবা রঞ্জন মুখার্জী ছোটবেলা থেকেই আমাকে নিয়ে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়ে যাতায়াত করতেন এবং বাবা-ই আমাকে জন্মভূমি মেগা ধারাবাহিকে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার জন্য পরিচালক ইন্দর সেন মহাশয়-কে রাজি করিয়েছিলেন।
আমার সিনেমার জগতে হাতে খড়ি ১৯৭৫ সালে তরুণ মজুমদার পরিচালিত “সংসার সীমান্তে” সিনেমা দিয়ে। এই ফিল্মি দুনিয়ায় যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র আড়াই বছর বয়সে। তারপর একে একে “বাবু মশাই” – (নফরের ছোটবেলা),”জটায়ু”, “দিন আমাদের”, এরপর এলো মেগাহিট সিনেমা “লাল কুঠি “- যা বেস্ট চিলড্রেন এ্যাকটর এর পুরস্কার এনে দেয়।
এরপর একে একে সিনেমার পর্দায় এল “করুণাময়ী “, “পরবেশ”, “দাদামণি”, “মমতা “, “দাদু নাতি ও হাতি”, “সোনার সংসার”, ” দিদি “, “অগ্রদানী”, “রাজপুরুষ”, “আবীর”-(নাম ভূমিকায় এবং ডাবল রোল), “পাপ পূণ্য”, “মনে মনে”, প্রভৃতি ছবি দিয়ে অভিনয় করতে করতে বড় হয়ে ওঠা। তারপর শুরু সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করা এবং বেশ কিছু গুণীজনদের পাশে থেকে ক্যামেরার পিছনে থেকে ফিল্ম-কে নতুন করে বোঝার চেষ্টা করা।
যে সকল পরিচালক আমার পাশে থেকে ক্যামেরার পিছনে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন তাদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। যাদের কথা উল্লেখ করতেই হবে তারা হলেন পরিচালক ইন্দর সেন, বিষ্ণু পাল চৌধুরী, চিরঞ্জীত চক্রবর্তী, মিলন ভৌমিক, টি. এল. ভি. প্রসাদ (সাউথ), পার্থ ঘোষ (মুম্বই), হীরা চৌধুরী সহ আরো অনেকে।
এই সব গুণী পরিচালকদের সাথে কাজ করতে করতে তারপর নিজের মধ্যে সিনেমা পরিচালনা করার তাগিদ জন্মালো। অবশেষে নিজের পরিচালনায় “প্রথ”। “সেকেন্ড হানিমুন”, তারপর নিজের পরিচালনায় প্রথম ছবি “স্মৃতি কথা বলে” নন্দন ও অন্যত্র রিলিজ হয়।
এরপর বিতর্কিত সিনেমা সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মাণ করি “PARK STREET”, বহু বাধা বিপত্তি কাটিয়ে সেন্সর করা নিয়ে অনেক বিতর্কের পর এক রকম ছাড়তে বাধ্য হয়।
আমি FILM CERTIFICATE APPELLATE TRIBUNAL-(DELHI)-তে দ্বিতীয়বার জয় লাভ করার পর। এর পরবর্তী কালে আপাতত নিজের প্রযোজনা ও পরিচালনায় “RED LIGHT”-এর কাজ একদম শেষের দিকে।
এই সিনেমায় বহু নামি দামি অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা অভিনয় করেছেন। ঠিক তেমনই এই সিনেমার জন্য গান গেয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়, উষা উথুপ সহ অন্যান্য সংগীতশিল্পী বৃন্দ। এই সিনেমার এডিটিং পর্ব চলছে।
এরই মধ্যে “CHECKMATE” নামে একটি ছোট ছবি করলাম যেটা একটি ফেস্টিভ্যালে পুরস্কার অর্জন করেছে। এ ছাড়াও ভোজপুরি গানের একটি ভিডিও এ্যালবাম প্রকাশ করতে চলেছি নিজের পরিচালনায় ও প্রযোজনায় আশাকরি দর্শকদের মুগ্ধ করবে।
খুবই ইচ্ছে আছে আগামী দিনে একটা ‘PARA NORMAL THRILLER’ বানানোর এবং আরো ভালো ভালো ফিল্ম উপহার দেওয়ার, ঈশ্বর ও জনগণের আশীর্বাদ পেলে আগামীদিনে নিশ্চিতরূপে এগিয়ে যেতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস।
আমার এই লড়াই সম্ভব হয়েছে আমার টেকনিশিয়ান ভাই বোন এবং শিল্পীদের অকুন্ঠ সহযোগিতায় এবং আমার জীবনের সব কিছু আমার বাবা রঞ্জন মুখার্জী, সহধর্মিনী বৈশাখী মুখার্জী ও আমার কন্যা শ্রীতমা মুখার্জী র অবদান এবং পরিবারের মানুষের বিরাট আত্মত্যাগের বিনিময়ে যা আজ আর খুলে বললাম না……..।
Be First to Comment