Press "Enter" to skip to content

হারানো দিনের কথামালা…….

Spread the love

প্রবীর রায় : বিশিষ্ট অভিনেতা, প্রযোজক ও চিত্র পরিচালক। কলকাতা, ৬, সেপ্টেম্বর, ২০২০। “হারানো সুর”এর পরের এপিসোড ছিল শুধু রোমান্টিক এপিসোড। সোমা মানে বেনুদির (সুপ্রিয়া দেবী) মেয়ে তখন কয়েকটা কাজ করছে। আমার খুব পুরোনো বন্ধু। প্রায়ই দেখা হতো, বিশেষ করে মুনমুনদের বাড়ির আড্ডায়। আজও আমাদের সেই বন্ধুত্ব অটুট আছে । সেই সোমা আর জয় সেনগুপ্ত (এখন ও নেই ) কে নিয়ে একটা জুটি তৈরি করলাম। আরো অনেকে ছিলো ওই এপিসোডে মুনমুন, কুমার স্বপন, দেবিকা, অশোক সেনগুপ্ত ( আজ আর নেই) , ইন্দ্রানী দত্ত, মিঠু (অভিষেক চ্যাটার্জী), খেয়া ঘোষ। আমি আর পাপিয়াও ছিলাম।

সোমার শুটিং হবে দীঘাতে ! বেনুদির কাছে গেলাম, সোমাকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নিতে।সোমা খুব আদরের একমাত্র মেয়ে। একা বাইরে যেতে দেবেন কি না কে জানে !! তখনও বেণুদি ময়রা স্ট্রিটে থাকতেন। বেনুদিকে সব বললাম। বেণুদি বললেন, “ঠিক আছে প্রবীর কিন্তু সব দায়িত্ব তোমার।” সোমা যাওয়ার দিন সোমার হাতে আমাকে একটা চিঠি দিয়েছিলেন…. সেটা এখানে দিলাম। ওটা পড়লে সবাই বুঝতে পারবে , কতটা চিন্তায় থাকতেন বেণুদি সোমাকে নিয়ে। গাড়িটাও বেণুদি দিয়ে দিলেন, বললেন গাড়িটা তোর সঙ্গে রাখ… শুটিংয়ের সময় ব্যবহার করিস, এতেই সোমা ফিরে আসবে, শুধু পেট্রলটা ভরে দিস।

দৈনিক কাগজে সংবাদ প্রকাশ।
সুপ্রিয়া দেবীর দেওয়া চিঠি।

দ্বিতীয় আর তৃতীয় এপিসোডের সব গান মনে নেই এখন। যে কটা মনে আছে…..”পিয়াল শাখার ফাঁকে ওঠে (অখিলবন্ধু ঘোষ)”, “তুমি সুন্দর যদি নাহি হও (তালাত মাহমুদ )”, “এই ফুলের দেশে, কোন ভ্রমর এসে (সুপ্রীতি ঘোষ)”, “মায়াবতী মেঘে এলো তন্দ্রা (সন্ধ্যা মুখার্জী)”, “মোর মালঞ্চে বসন্ত নাই গো নাই (তরুণ ব্যানার্জী)”, “আকাশ প্রদীপ জ্বলে (লতা মঙ্গেশকর)”, “তুমি আর আমি শুধু জীবনের খেলাঘর (শ্যামল মিত্র)”, “নয় থাকলে আরো কিছু ক্ষণ , নয় রাখলে হাতে দুটি হাত (সুবীর সেন)” , “আমি এতো যে তোমায় ভালোবেসেছি (মানবেন্দ্র মুখার্জী)” , “ওই সুর ভরা দূর নীলিমায় ( গীতা দত্ত )”, “ময়ূরপঙ্খী ভেসে যায় (উৎপলা সেন)”, “জীবনে যদি দীপ জ্বালাতে নাহি পারো (সতীনাথ মুখার্জী)”, ইত্যাদি….

সুপ্রিয়া দেবী র দেওয়া চিঠি শেষাংশ।

মুনমুন লিপ দিয়েছিলো, লতার প্রথম বাংলা আধুনিক গান সতীনাথ মুখার্জীর সুরে “আকাশ প্রদীপ জ্বলে”। অসাধারণ দেখতে লেগেছিলো মুনমুনকে আর খুব সুন্দর লিপ দিয়েছিলো। সোমা আর জয়ের দুটো গান ছিলো কিন্তু দুটোই ছিলো জয় সেনগুপ্তর লিপে ! গান দুটো ছিলো অখিলবন্ধুর “পিয়াল শাখার ফাঁকে ওঠে ..” আর তালাত মাহমুদের “তুমি সুন্দর যদি নাহি হও…” “পিয়াল শাখার ফাঁকে …” গানটি দিঘার ঝাউবনে সারারাত শুটিং হয়েছিল ! কি অসাধারণ লাইট করেছিল ক্যামেরাম্যান শঙ্কর ব্যানার্জী . অতটা zone নিয়ে লাইট করা আর তখন কিন্তু ক্যামেরা আজকের মতো ডিজিটাল না ! এখন অনেক কম লাইটে কাজ করা যায়। আজ শঙ্করদা নেই কিন্তু আজ ভাবি…কি dedicated সব লোকজন ছিলো , অথচ শঙ্করদাকে কত মেজাজ করেছি । “তুমি সুন্দর যদি নাহি….” গানটি দিঘার লেকে বোটে হয়েছিল। এখানে আর একজনের কথা না বললে অন্যায় হবে আর্ট ডিরেক্টর প্রসাদদার (স্বর্গত প্রসাদ মিত্র ) কথা। আমাকে এতো ভালোবাসতেন যে নিজের খরচে পুরো ফ্যামিলি নিয়ে দিঘা গিয়েছিলেন কিন্তু আমার কাজে ! আজ এই সব লোকজনকে খুব মিস করি।

সংবাদ পত্রের শিরোনামে।
জয় সেনগুপ্ত ও সোমা।
দিঘা তে শুটিং এর ফাঁকে প্রবীর রায়, পাপিয়া অধিকারী, শিল্পনির্দেশক প্রসাদ মিত্র আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক গোপাল দেবনাথ সহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
মুনমুন সেন ও পাপিয়া অধিকারী।

ইন্দ্রানী দত্ত লিপ দিয়েছিলো “মায়াবতী মেঘে এলো তন্দ্রা….” খুব কঠিন গান আর তার সঙ্গে ছিলো নাচ ! ইন্দ্রানী অবশ্য চিরকালই খুব ভালো ডান্সার ! সেই জন্য খুব একটা অসুবিধা হয়নি । ওর সঙ্গে ছিলো মিঠু (অভিষেক চ্যাটার্জী)। এখানে একটা মজার গল্প মনে পড়ে গেলো ….অভিষেকেরও একটা গানে লিপ ছিলো , এখন মনে পড়ছে না গানটা । গানটা হওয়ার আগে আমি মিঠুকে বললাম , গানটা শুনবি তো ?? ও বললো, না লাগবে না , শট এ হয়ে যাবে ! পাশে সোমা ছিলো । সোমা বললো “আচ্ছা প্রবীরদা,, বাবি (উত্তম কুমার) তো একটা গান কতদিন ধরে প্রাকটিস করতো….টেপ রেকর্ডার নিয়ে ঘুরতো ! মিঠু কি করে বলছে, shot এ হয়ে যাবে “? আমি বললাম, “ওই জন্য উনি “উত্তমকুমার!!”

নৃত্যের তালে তালে ইন্দ্রানী দত্ত।

সোমা মাঝে মাঝে এই রকম প্রশ্ন করতো….আর একটা গল্প বলি সোমার। তখন শচীন অধিকারীর “চোখের আলোয়” রিলিজ হবে ! প্রিমিয়ার “মেনকা” হলে ! প্রসেনজিৎ আর তাপস দুজনেই ওই ফিল্মে ছিলো। সোমা প্রিমিয়ারে এসে আমার পাশে বসলো । বসেই প্রথম প্রশ্ন “আচ্ছা প্রবীরদা , এখন তো বুম্বা আর তাপস টপ “…আমি বললাম ” হ্যা, কেন হঠাৎ ?” সোমা বললো, “আজ প্রিমিয়ার অথচ বাইরে কোনো লাঠি চার্জ নেই …কি রকম ঠান্ডা সব ! বাবির (উত্তমকুমার ) ফিল্ম যখন রিলিজ করতো তখন তো লাঠি চার্জ, পুলিশে পুলিশে ভর্তি থাকতো..প্রচুর ভিড় বাইরে, এখন তো কিছুই সেরকম দেখলাম না “। আমি বললাম ওনার নাম ছিল “উত্তমকুমার”! মেনোকাতে উত্তমকুমারের ফিল্ম রিলিজ করলে দেশপ্রিয় পার্কে ট্রাফিক জ্যাম হয়ে যেত ! যেটা এখন অমিতাভ আর শারুখের হয় !

দিঘা তে শুটিং হারানো সুর ধারাবাহিক।

যারা দেখেনি , তারা জানেন না….উত্তমকুমার এর charisma কোন লেভেলে ছিল!!
যাক আবার “হারানো সুর”এ ফিরে আসি! মানে বাস্তবে ফিরে আসি।

চতুর্থ পর্ব টা করেছিলাম বাচ্চাদের ওপর ! গানগুলো যতদূর মনে পড়ছে “চুপ চুপ লক্ষীটি , শুনবে যদি গল্পটি (অমল মুখার্জী)”, “হাট্টি মা টিম টিম (আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়)”, “স্বর্ণঝরা সূর্য রঙে, আকাশ যে ওই রাঙলো রে (সুবীর সেন)”, “ও তোতা পাখি রে (নির্মলা মিশ্র)” ইত্যাদি ! এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ” “স্বর্ণঝরা সূর্য রঙে, আকাশ যে ওই রাঙলো রে ” এই গান টা চন্দননগর স্টেডিয়ামে শুট করেছিলাম প্রায় ৪৫ জন বাচ্চাকে নিয়ে! সেই শুটিংয়ের কথা ভুলবো না । প্রচন্ড গরমে, এতগুলি বাচ্চা নিয়ে শুটিং করা একটা অভিজ্ঞতা। তার মধ্যে দুটি বাচ্চার সান স্ট্রোক হয়ে গেলো।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ চিত্র।

“হারানো সুর”এর শুটিং শেষ …..

ক্রমশ ……..

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.