দু লক্ষ ভক্ত সমাগম, ১৩০০ সন্ন্যাসী ও ৫৫ আচার্যের উপস্থিতি
নিজস্ব প্রতিনিধি : হাওড়া, ১৭ ডিসেম্বর২০২৪। নিখিল ভারত শ্রীচৈতন্য গৌড়ীয় মঠের প্রতিষ্ঠাপক আচার্য্য নিত্যলীলা প্রবিষ্ট ত্রিদণ্ডীস্বামী শ্রীমদ্ভক্তিদয়িত মাধব গোস্বামী মহারাজের প্রিয় শিষ্য প্রতিষ্ঠানের পূর্ব্বর্তন অধ্যক্ষ ও আচার্য্যদেব তথা বিশ্ববৈষ্ণব রাজ সভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং Global Organisation of Krishna Chaitanya’s Universal Love (GOKUL) প্রতিষ্ঠানের
প্রতিষ্ঠাপক আচার্য্য নিত্যলীলা প্রবিষ্ট ত্রিদণ্ডীস্বামী স্বামী শ্রীমদ্ভক্তি বল্লভ তীর্থ গোস্বামী মহারাজের দিব্য জন্মশতাব্দী সমারোহ-২০২৪ এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া শহরের করাতবেড়িয়া গ্রামের ইউনাইটেড ভাটার মাঠে শ্রীধাম বৃন্দাবন, পুরী, মায়াপুর এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা থেকে আনুমানিক পাঁচ শতাধিক আচার্য্য, সন্ন্যাসী এবং ব্রহ্মচারীর সহিত নিকটবর্তী শহর গ্রাম হইতে বিপুল ভক্তের সমাবেশে সম্পন্ন হইতে চলছে।
ত্রিদণ্ডীস্বামী শ্রীমদ্ভক্তি বল্লভ তীর্থ গোস্বামী মহারাজ ১৯২৪ সনের ১৪ই এপ্রিল শুভ রাম নবমী তিথি বাসরে আসাম প্রদেশের গোয়ালপাড়া শহরের মাতা শ্রীমতি সুধাংশু বালা দেবী এবং পিতা শ্রী ধীরেন্দ্র কুমার গুহরায়কে অবলম্বন করিয়া এই ধরাধামে আবির্ভূত হন। তাঁকে শৈশব কাল হইতেই ভগবানের আরাধনায় বিশেষ আগ্রহী হইতে দেখা যায়। ওঁনার গৃহের নিকটবর্তী হলোকুণ্ডা পাহাড়ে অবস্থিত এক শিব মন্দিরে নিত্য পূজা ধ্যান আদি করিতেন। এখনও সেই শিবমন্দির গোয়ালপাড়া শহরে ভক্তদের দ্বারা পূজিত হয়। অধ্যাপনাতে বিশেষ পারদর্শিতার পরিচয় দেন। স্কুল পরীক্ষা উত্তীর্ণ হইয়া গৌহাটি শহরে কটন কলেজে স্নাতক হন। ১৯৪৭ সনে তিনি তদানীন্তন ক্যালকাটা ইউনির্ভাসিটি হইতে দর্শন শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াই ভগবানের সাধন ভজন করার নিমিত্তে সদগুরু রূপে শ্রীল ভক্তিদয়িত মাধব গোস্বামী মহারাজের নিকট উপস্থিত হইয়া তাঁর পদাশ্রিত হন। সেই সময় হইতেই একনিষ্ঠ ভাবে শ্রীগুরু বৈষ্ণব ভগবানের সেবাযুক্ত থাকেন। ওঁনার পারমার্থিক জগতের জ্ঞান এবং কায় মনো বাক্যে শ্রীমন্মহাপ্রভূর আদর্শে আদর্শিত হইয়া জন কল্যান মুখী হওয়ায় উনার গুরুদের পরবর্তী আচার্য্যরূপে নির্ধারণ করেন। ১৯৭৯ সনে শ্রীল মাধব গোস্বামী মহারাজ অপ্রকট হইলে প্রতিষ্ঠানের আচার্য্য পদে আসীন হন। দীর্ঘ ৩৮ বৎসর আচার্য্য পদে থাকিয়া সমগ্র ভারতবর্ষের এবং বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করিয়া শ্রীমন্মহাপ্রভূর বাণী সর্ব্বত্র প্রচার করেন। উনি ২৩ শে অক্টোবর ১৯৬১ সনে উনার পরমারাধ্য- গুরুদেব শ্রীল ভক্তি দয়িত মাধব গোস্বামী মহারাজের নিকট হইতে ত্রিদণ্ডীসন্ন্যাস প্রাপ্ত হইয়া ত্রিদণ্ডীস্বামী- শ্রীমদ্ভক্তি বল্লভ তীর্থ গোস্বামী মহারাজ নামে ভূষিত হন। ত্রিদণ্ডী সন্ন্যাস প্রাপ্ত হইয়া পরবর্তীকাল আচার্য্য পদ অলঙ্কৃত করিয়া নিরলস ভাবে জগতের মানব কল্যানার্থে সেবা করেন। তিনি বিশ্ববৈষ্ণব রাজ সভার অধ্যক্ষ থাকাকালীন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করিয়া প্রাণবন্ত চিত্তাকর্ষক শ্রীহরি কথামৃত পরিবেশন করিলে বহু বিদেশী নর নারী উনার চরণাশ্রিত হন।শ্রীল মহারাজের উদ্দাত্ত কন্ঠে শ্রীহরিকথা শ্রবণে আকৃষ্ট হইয়া বিদেশি ভক্তগনের পুনঃপুনঃ অনুরোধে শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও বিদেশে পাড়ি দিতে হয়েছিল।
গত ১৫ই ডিসেম্বর ২০২৪ হাওড়া জেলার করাতবেরিয়া গ্ৰামে প্রাতঃকাল হইতে ভুবন মঙ্গল শ্রী হরিনাম সংকীর্ত্তন দ্বারা শ্রুতিমধুর পরিবেশে দিনের অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়। অনুষ্ঠান মঞ্চে সমস্ত সাধু, আচার্যদেব সমাগমে এক মাঙ্গলিক শ্রীহরিনাম কীর্ত্তনে এক বিপুল সংখ্যক ভক্তের সমাগমে করাতবেড়িয়া গ্রাম নিশ্চিত রূপে ঐশ্বরীয় ধামে পরিণত হয়। সময় ১০ ঘটিকা হইতে শ্রীল মহারাজের শ্রীমন্দিরে মহাভিষেক, পূজা, বহুবিধ ব্যাঞ্জনাদি এবং নানারকম মিষ্টান্ন ভোগ নিবেদনের পর মঙ্গলারতি অনুষ্ঠিত হয়। প্রাতঃ ও সান্ধ্য অধিবেশনে বিভিন্ন আচার্য্যদেব, সন্ন্যাসী দ্বারা গুরু মহিমা কীর্ত্তন করা হয়। ভাগবতীয় হরিকথামৃত, শ্রীলমহারাজের গুণ মহিমা শ্রবণ করিয়া সুধীসমাজ মুগ্ধ এবং ভক্তবৃন্দ আপ্লুত হন। সারাদিনের এই ভক্তানুষ্ঠানে এক স্বর্গীয় ভক্তির বন্যায় সকল জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে প্লাবিত হইয়া এক বিরল আনন্দ ও সুখানুভূতি লাভ করেন। উক্ত অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনগণ ব্যাতীত প্রশাসন, সরকারি বিভাগ সমূহের পূর্ণ সহযোগিতা প্রশংসনীয়।
১৪ই ডিসেম্বর শনিবার করাতবেড়িয়া গ্রামের ইউনাইটেড ভাটার মণ্ডপস্থলীতে শ্রীধাম বৃন্দাবন, পুরী এক মায়াপুর হইতে আগত আচার্য্যদেব, সন্ন্যাসী এবং ব্রহ্মচারীবৃন্দের যানবাহন যোগে শোভাযাত্রা সহকারে আনয়ন করিয়া বৈষ্ণব স্বাগত ও আরতি প্রদর্শন করা হয়।
অপরাহ্ন ৩- ঘটিকায় মণ্ডপস্থলী হইতে এক সুশোভিত সুরম্য রথে শ্রীল গুরুদেব আসীন হইয়া সহস্রাধিক ভক্তের দ্বারা শ্রীহরিনামসংকীর্তন সহ রথাকর্ষণ করেন। নগর সঙ্কীর্ত্তন সহ শ্রীল গুরু মহারাজের সুন্দর রথ মণ্ডপস্থলীতে উপনীত হইলে সকল ভক্তগণ পরম তৃপ্তি সহকারে মহাপ্রসাদ সেবন করেন। ইহা ব্যাতীত ১৪ ও ১৫ই ডিসেম্বর মধ্যাহ্নিক এবং রাত্রে সকল ভক্তবৃন্দকে মহাপ্রসাদ পরিবেশিত হয়।
উপরোক্ত দুই দিবসব্যাপী দিব্যজন্মশতাব্দী সমারোহ – ২০২৪ অনুষ্ঠানটি নিখিল ভারত শ্রীচৈতন্য গৌড়ীয় মঠের বর্তমান মঠাধক্ষ্য এবং আচার্য্যদেব পূজ্যপাদ ত্রিদণ্ডীস্বামী শ্রীমদ্ভক্তি বিচার বিষ্ণু গোস্বামী মহারাজের নির্দেশনায় এবং শ্রীধাম মায়াপুরস্থ মূল শ্রীচৈতন্য গৌড়ীয় মঠের মঠরক্ষক ত্রিদণ্ডীস্বামী শ্রীমদ্ভক্তি বৈভব নারায়ণ মহারাজের ব্যবস্থাপনায় সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয়।
Be First to Comment