——————–স্মরণঃ গীতা দত্ত——————
বিয়ের আগের নাম গীতা ঘোষ রায়চৌধুরী। পূর্ব বাংলার ফরিদপুর জেলায় জন্ম। জমিদার দেবেন্দ্র ঘোষ রায়চৌধুরীর মেয়ে গীতার মনে পড়ে মেখলা নদীর তীরে বসে মাঝিরা গান গেয়ে নৌকা চালাত। সে আবার অন্য ধরনের গান। খুব ভালো লাগল। শিখে গেলেন গানগুলো। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পূর্ব বাংলা থেকে প্রথমে কলকাতায় গেলেন দেবেন্দ্র ঘোষ রায়চৌধুরী, পরে বম্বে চলে গেলেন। গীতা বম্বের একটি বাংলা মাধ্যমের স্কুলে পড়াতেন। সন্ধ্যেবেলায় একটি মিউজিক স্কুলের বাইরে ছোট ছেলে-মেয়েদের নাচ শেখাতেন গীতা। সাথে গানও শেখাতেন। ঘটনাচক্রে একদিন বাচ্চাদের গান শেখানোর সময় গাড়ি নিয়ে পাশের রাস্তায় যাচ্ছিলেন তখনকার বিখ্যাত সংগীত পরিচালক হনুমান প্রসাদ। গাড়িটি একটু থামাতে বললেন। গীতার তখন ১৪-১৫ বছর বয়স। হনুমান প্রসাদ লক্ষ্য করলেন কণ্ঠস্বরে একটি প্রতিভা। যা চলচ্চিত্রের কাজে লাগানো যায়।
শুরু হল গীতার নতুন জীবন। হনুমান প্রসাদের সঙ্গীত পরিচালনায় গীতার প্রথম প্লে-ব্ল্যাক মিউজিক সুযোগ পান। ছবির নাম ‘ভক্ত প্রহ্লাদ’। পরে প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে গান করালেন ‘দো-ভাই’ ছবিতে। অতঃপর একই সঙ্গীত পরিচালকের অনুরোধে গাইলেন ‘রাসোদি’ ছবিতে। ‘নষ্টময়’ ছবিতে পারুল ঘোষের সাথে একটি গান ভীষণ জনপ্রিয় হয়। পরপর অনেক হিন্দি ছবিতে গান গেয়ে গেলেন। বিশ্বাস করবেন অত কম বয়সে গীতা একহাজার গান চলচ্চিত্রের রেকর্ডিং করেছেন। তাছাড়া বাংলা, তামিল, মারাঠি ছবির জন্য কম করে আরও ১০০০টি গান রেকর্ডিং করেছেন। গীতার তখন সর্বভারতীয় খ্যাতি। তখন এমন কোন সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন না, যিনি গীতাকে দিয়ে গান গাওয়াননি। হনুমান প্রসাদ ছাড়াও আছেন, শচীনদেব বর্মণ, কে সি প্রকাশ, অনিল বিশ্বাস, রোশন, এসএস ত্রিপাঠি, কমল দাশগুপ্ত প্রভৃতি অসংখ্য সঙ্গীত পরিচালক। এবার গীতার কন্ঠে মুগ্ধ হলেন সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখার্জি, বসন্ত দেশাই। লতা মঙ্গেশকর হিন্দি চলচ্চিত্রে সেইভাবে তখন প্রতিষ্ঠা পাচ্ছিলেন না। একচেটিয়া বাজার তখন গীতা ও সামসাদ বেগমের দখলে।
গুরু দত্ত একটি ছবি করছেন। গীতা দত্ত সেই ছবিতে গান করছেন। নতুন নায়িকা ওয়াহিদা রহমান। ধীরে ধীরে নতুন নায়িকার সাথে গুরু দত্ত’র ‘প্রেমজ’ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
গুরু দত্ত এবং গীতা দত্ত’র তখন তিনটি সন্তান। কিন্তু ওয়াহিদার সাথে প্রেম করা গীতা দত্ত কিছুতেই মানতে পারছিলেন না। তুমুল অশান্তি। শেষে ছাড়াছাড়ি। বিবাহ বিচ্ছেদের পরে গীতা দত্ত মদে আসক্ত হয়ে গেলেন। গায়িকা- জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হল। শচীনদেব বর্মন সবই লক্ষ্য করছিলেন। শেষে গীতাকে ঠিক পথে আনার জন্য একটা ছবিতে আশা ভোঁসলেকে বাদ দিয়ে গীতা দত্তকে নিলেন। কিন্তু গীতা দত্ত আর সেইভাবে গাইতে পারলেন না। গুরু দত্ত চেষ্টা করলেন গীতাকে নায়িকা করে একটি ছবি করার। ‘গৌরী’ নামক ছবিটি প্রযোজনা করেন। দাঁড়াল না। পরিচালক হরিদাস ভট্টাচার্য্য ‘অভয়া ও শ্রীকান্ত’ ছবিতে গীতাকে অভয়ার চরিত্রটা করানোর চেষ্টা করেন।
এই সময় অতিরিক্ত মদ ও ঘুমের ওষুধ খেয়ে গুরু দত্ত মারা যান। নিদারুণ অর্থসংকটে দিন কাটছে। গীতার এই সময়টা নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়। পরে লিভার সিরোসিস হয়।
গীতা দত্ত লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৭২ সালের আজকের দিনে (২০ জুলাই) বোম্বেতে মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment