শ্রীজিৎ চট্টরাজ : কলকাতা, ৩ জুন ২০২২। কালো মানিক ফুটবলের কিংবদন্তি সম্রাট এডসন অ্যাবন্টিস দো নাসিমেন্ট। ডাক নাম যাঁর ছিল ডিকো। কোচ ওয়ালদেমার ডি ব্রীটোর নজরে পড়ে যান ডিকো খুব অল্প বয়সেই। আমরা যাঁকে চিনেছি পেলে নামে। অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান পেলে ছিলেন ব্রাজিলের বস্তিবাসী। অথচ পরবর্তী সময়ে বস্তিবাসী ছেলেমেয়েদের ফুটবল প্রতিভা অন্বেষণে তেমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বস্তি পরিবেশের মধ্য থেকেই আমরা পেয়েছি নেইমার, মারাদোনার মত ফুটবল তারকাদের।
ভারতে ফুটবল খেলার জনক এক বাঙালির। সেই ব্যক্তি নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারী। কয়েকজন উৎসাহীকে জুটিয়ে খালি পায়ে প্রথম কিক মারেন। ওদের জানা ছিল না, খেলার বলটি ফুটবল ছিল না। বলটি ছিল রাগবি। না জেনেই নগেন্দ্রপ্রসাদ বলটি কেনেন ম্যানটন অ্যান্ড কোম্পানি থেকে। কোলকাতার নেটিভ ছেলেদের আগ্রহ দেখে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক জি এ স্ট্যাক নগেন্দ্র ও তাঁর বন্ধুদের কিনে দেন ফুটবল।
এরপর সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল। ধনীর ঘর ছেড়ে ফুটবলকে বস্তির দরিদ্র শিশুদের নিয়ে বস্তি ফুটবল এদেশে প্রথম গড়ে তোলেন নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার প্রশিক্ষক বিজয় বার্স। এই মুহুর্তে বিজয় বার্সের চরিত্রে অমিতাভ বচ্চনকে নিয়ে হতে চলেছে বায়োপিক। ২০১২ তে প্রথম মেক্সিকোতে হোমলেস ওয়ার্ল্ড কাপ প্রতিযোগিতায় ভারত অংশ নেয়।
বাংলাও পিছিয়ে নেই। পূর্ব ভারতের স্লাম সকারের অধিকর্তা অপরূপ চক্রবর্তী নিদারুণ পরিশ্রমে সহায় সম্বলহীন হয়েও বস্তির দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মেয়েদের নিয়ে ফুটবল ক্লাস চালাচ্ছেন। পেশাগতভাবে অপরূপবাবু অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের ম্যাচ কমিশনার। এছাড়াও সংগঠনভাবে ফুটবলের সঙ্গে জড়িত। যে মুহূর্তে নারী পাচার, ধর্ষণ ও নাবালিকা বিয়ের নেতিবাচক খবরে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছি, সেই সময়ে অক্সিজেন যোগাচ্ছেন অপরূপ চক্রবর্তী। তাঁকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার এক রেস্তোরাঁর কর্ণধার অপেক্ষা লাহিড়ী।
এই তৃতীয় বছরে দুটি দলের মেয়েদের বন্ধুত্বপূর্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলো সম্প্রতি দমদম অঞ্চলের একটি মাঠে। বিজয়ী দলের সবাইকে প্রদান করা হয় মেডেল। ইয়েলো টার্টল রেস্তোরাঁর পক্ষে অপেক্ষা লাহিড়ী জানালেন, ব্যবসার বাইরেও আমাদের একটা সামাজিক পরিচয় আছে। আছে দায়বদ্ধতা। আমরা আমাদের সাধ্য মত বিভিন্ন সামাজিক কাজে যোগ দিই। বিশ্বরূপ বাবুর এই দুঃসাহসিক কাজের খবর পেয়ে উৎসাহিত হয়ে তাঁর পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছি। অভিভাবকদের উৎসাহ আর ছোট ছোট মেয়েদের ফুটবলে আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মত।
Be First to Comment