জন্মদিনে স্মরণঃ স্যা র আ র্থা র কো না ন ড য়ে ল
বাবলু ভট্টাচার্য : গোয়েন্দাকুল শিরোমণি শার্লক হোমসের স্রষ্টা স্যার আর্থার কোনান ডয়েল।
পেশায় ডাক্তার হলেও ডাক্তার হিসেবে তেমন খ্যাতি তিনি অর্জন করতে পারেননি। তবে লেখক হিসেবে তার যে কেমন অসামান্য খ্যাতি ছিল, অমর চরিত্র শার্লক হোমস-ই তো তার বড় প্রমাণ। তবে ডয়েলের আরও একটি বিখ্যাত চরিত্র আছে– প্রফেসর চ্যালেঞ্জার।
এছাড়া তিনি আরও অনেক কিছুই লিখেছেন। সেসবের মধ্যে আছে— সায়েন্স ফিকশন, নাটক, রোম্যান্স, কবিতা, ঐতিহাসিক উপন্যাস, স্মৃতিকথা আর কিছু নন-ফিকশন রচনা।
তিনি যে শার্লক হোমস চরিত্রটির জন্য জগদ্বিখ্যাত, সেই চরিত্রটির পেছনে একজন সত্যিকার মানুষ ছিল– নাম তার প্রফেসর জোসেফ বেল। তিনি কোনান ডয়েলের স্কুল জীবনের এক শিক্ষক। জোসেফ বেলের চরিত্র শার্লক হোমসে এতটাই পরিস্কার, একবার তো কোনান ডয়েলকে একজন জিজ্ঞেসই করে বসলেন, “শার্লক কি আমার বন্ধু জো?”
বোঝাই যাচ্ছে, বন্ধুটি জোসেফ বেলকে ‘জো’ বলেই ডাকতেন।
কোনান ডয়েল সবচেয়ে বেশি লিখেছেন শার্লক হোমস চরিত্রটি নিয়ে। শার্লক হোমসকে নিয়ে লেখা তার গল্পের সংখ্যা ৫৪টি, উপন্যাস ৪টি। মজার ব্যাপার হল, এই শার্লক হোমসকে নিয়ে লিখতে লিখতেও একসময় অধৈর্য হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ১৮৯১ সালে মাকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন— “আমি হোমসকে খুন করানোর চিন্তা করছি… সে আমার মাথা থেকে অন্যান্য জিনিসগুলোকে বের করে দিচ্ছে।”
এই চিন্তা থেকেই ‘দ্য ফাইনাল প্রবলেম’ গল্পে তিনি শার্লক হোমসকে খুন করালেন। আর তারপর, তার মায়ের কথা মতোই, সব পাঠক শার্লককে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাতে শুরু করল। পাঠকের চাপে শেষমেশ ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্য এম্পটি হাউজ’ গল্পে অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে আনলেন শার্লককে।
শার্লক হোমস যে ডাক্তার ছিলেন এবং ডাক্তার হিসেবে খুব সফলও ছিলেন না, সে কথা আগেই বলেছি। এটা অবশ্য তার জন্য শাপে বর-ই হয়েছিল। কারণ, রোগী না থাকায় তিনি লেখার সময় বেশি পেতেন! শুধু তাই না। ডাক্তারিতে পসার নেই দেখে, কোনান ডয়েল পরে চোখের উপর আরও পড়ালেখা করলেন। মানে তিনি চোখের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হলেন। কিন্তু লাভ হল কী! লন্ডনে তার চোখের ডাক্তারির চেম্বারে একটি রোগীও কখনও ঢোকেনি!
আর্থার কোনান ডয়েল তো ব্রিটেনের রানির কাছ থেকে ‘নাইটহুড’ পেয়েছিলেন। ফলে তার নামের আগে ‘স্যার’ শব্দটি বসে যায়। আমরা তাকে ‘স্যার আর্থার কোনান ডয়েল’ বলি। মজার বিষয় হল, সকলের ধারণা তিনি নাইটহুড পেয়েছিলেন শার্লক হোমসের জন্য। আসলে তিনি শার্লক হোমসের জন্য নাইটহুড পাননি। বরং নাইটহুড পেয়েছিলেন বোয়ার যুদ্ধের উপর লেখা তার নন-ফিকশন রচনাগুলোর জন্য।
কোনান ডয়েল ব্রিটেনে নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছিলেন। তা-ও আবার একবার নয়, দুবার। আর হেরেছিলেনও দুবার-ই! তবে প্রতিবারই তিনি মোটামুটি ভালো ভোট-ই পেয়েছিলেন।
কোনান ডয়েল নিজেও দুবার শার্লক হোমসের মতো গোয়েন্দাগিরি করেছিলেন। উন্মোচন করেছিলেন দুটি সত্যিকার রহস্য। বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন দুজনকে। প্রথম রহস্যটিতে ভুক্তভোগী ছিলেন জর্জ এডালজি নামের এক ভদ্রলোক। আরেকটিতে ভুক্তভোগী ছিলেন অস্কার স্ল্যাটার।
জর্জ এডালজির বিরুদ্ধে পশু নির্যাতনের অভিযোগ ছিল। পরে কোনান ডয়েল দেখালেন, এডালজির বিরুদ্ধে যে সব পশু নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়েছে, সেসব পশুদের নির্যাতন করার মতো শারীরিক শক্তি-ই নেই এডালজির। তাছাড়াও, তার বিরুদ্ধে যে সব প্রমাণ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোও ঠিক না। জর্জ এডালজির ভাগ্য ভালো ছিল, কোনান ডয়েলের বদৌলতে তিনি বেঁচে যান।
তবে অস্কার স্ল্যাটারের ভাগ্য ততটা ভালো ছিল না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল এক মহিলাকে খুন করার। কোনান ডয়েল এখানেও দেখালেন, প্রমাণগুলো সবই ভুল। খুনের সময় তিনি অন্যত্র ছিলেন। কিন্তু ততদিনে স্ল্যাটারের রায় হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত সাড়ে ১৮ বছর কারাভোগের পর ছাড়া পান স্ল্যাটার।
১৯৩০ সালের ৭ জুলাই, আর্থার কোনান ডয়েল ইংল্যান্ডের সাসেক্সে মৃত্যুবরণ করেন।
স্যার আর্থার কোনান ডয়েল ১৮৫৯ সালের আজকের দিনে (২২ মে) স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment